ঢাকা: মারণব্যাধী এইডসের প্রতিষেধক তৈরিতে আরো একধাপ এগিয়ে গেলেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন আবিষ্কৃত একটি প্রতিষেধক বানরের দেহে এইচআইভি প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।
একদল মার্কিন গবেষক জানিয়েছেন, নতুন এ প্রতিষেধকটি রেসাস প্রজাতির বানরের ওপর পরীক্ষা করা হয়। ২৪টি বানরের ওপর এ প্রতিষেধক প্রয়োগ করে ১৩টির ক্ষেত্রে আশানুরুপ ফল পাওয়া গেছে। এমন কি এর মধ্যে ১২টি বানরের ওপর প্রয়োগের পর ১২ মাস পর্যন্ত এর কার্যকারীতা লক্ষ্য করা গেছে।
বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ন্যাচারে প্রকাশিত প্রবন্ধে তারা দাবি করেছেন, তাদের এ কাজ এইচআইভি/এইডস এর বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিষেধক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গবেষকরা ২৪টি সুস্থ রেসাস প্রজাতির বানর তাদের পরীক্ষণে ব্যবহার করেন। জিনগত পরিবর্তন সাধনে তৈরি রেসাস সাইটোমেগালোভাইরাস নামের ভাইরাস দিয়ে তৈরি প্রতিষেধক এগুলোর দেহে প্রয়োগ করা হয়।
প্রতিষেধকটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা বানরের দেহে এইডস সৃষ্টিকারী সিমিয়ান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি (এসআইভি) ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিজেন তৈরি করতে সক্ষম। দেখা গেছে ১৩টি বানরের মধ্যে এটি পুরোপুরি কার্যকরী। এমনকি প্রয়োগের এক বছর পরও প্রায় অর্ধেক সংখ্যক বানরের মধ্যে তা কার্যকর রয়েছে।
ইফেক্টর মেমোরি টি-সেল নামে এক বিশেষ ধরনের রক্ত কোষ তৈরিতে উদ্দীপনা তৈরির মাধ্যমে প্রেিতষধকটি কাজ করে। এই রক্ত কোষগুলো শরীরে যেকোনো সংক্রমণ প্রশমিত হওয়ার পরও টিকে থাকে যা দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
গবেষক দলের নেতা অরেগন অঞ্চলের ভেকসিন অ্যান্ড জিন থেরাপি ইনস্টিটিউটের প্রোফেসর লুইস জে পিকার বলেন, ‘ আমরা প্রমাণ পেয়েছি, প্রতিষেধকটি বানরের শরীর থেকে এসআইভির সব চিহ্ন মুছে দিয়েছে। এইচআইভি প্রতিষেধক তৈরির গবেষণায় এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
এ বিষয় নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা এ সাফল্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে মানব দেহে প্রয়োগের আগে নিরাপত্তার বিষয়গুলো বিবেচনার কথা তারা বলেছেন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যার অ্যান্ড্রু ম্যাকমিশেল বলেন, ‘এই সাফল্যে আমি সত্যিই খুব উত্তেজিত। কারণ এইচআইভি ভাইরাস সম্পূর্ণ দূরীভুত করতে এটি একটি সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিবে। তবে মানবদেহে প্রয়োগের ক্ষেত্রে কীভাবে অগ্রসর হওয়া যায় তা নিয়ে আমি ভাবছি। ’
প্রফেসর ম্যাকমিশেল আরো জানান, বানরের এইডস সৃষ্টিকারী ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী হলেও মানুষের এইডস সৃষ্টিকারী ভাইরাসের বিরুদ্ধে এ প্রতিষেধক প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার (যেমন পার্শ¦প্রতিক্রিয়া) বিষয় চিন্তা করতে হবে।
এর আগে ২০০৯ সালে থাইল্যান্ডের গবেষকরা ল্যানচেট সাময়িকীতে এরকম একটি পরীক্ষার কথা প্রকাশ করেছিলেন। সেসময় তারা এইচআইভির ঝুঁকি প্রায় একতৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার দাবি করেছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, মে ২০১১