ওয়াশিংটন: পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আত্মগোপনে থেকে সাধারণ যন্ত্রপাতি এবং সস্তা কম্পিউটার ডিস্ক ব্যবহার করেই আল কায়েদার কর্মীদের সঙ্গে ইমেইলে যোগাযোগ রাখছিলেন ওসামা বিন লাদেন। অথচ কোনো চিহ্ন এমনকি আঙ্গুলের চাপ পর্যন্ত কোথাও রেখে যাননি তিনি।
তার পদ্ধতিটি ছিল বেশ শ্রমসাধ্য এবং ধীরগতি সম্পন্ন। তবে এটা বেশ কার্যকর ও নিরাপদ ছিল তা মানতেই হবে। কারণ বাসায় ইন্টারনেট এবং ফোন লাইন না থাকলেও এখান থেকেই তিনি বিপুল পরিমাণ ইমেইল বার্তা বিনিময় করেছেন।
কিন্তু কীভাবে তিনি এ অসাধ্য সাধন করলেন? যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা সাইবার জগতে লাদেনের বিশাল বিচরণ সত্ত্বেও তাকে সনাক্ত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যর্থতাকে হতাশাজনক বলে বর্ণনা করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বিন লাদেনের এই যোগাযোগ প্রক্রিয়াটি ছিল সুশৃঙ্খল এবং আস্থা নির্ভর। তিনি বিপুল সংখ্যক ইমেইল বার্তাও বিনিময় করেছেন। অ্যাবোটাবাদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা ইলেকট্রনিক রেকর্ডগুলিতে এরকম হাজার হাজার বার্তা এবং ইমেইল ঠিকানা পাওয়া গেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
ইমেইল বিনিময়ের কাজটা করা হতো মূলত বহনযোগ্য মেমোরি ডিভাইস যেমন হার্ড ডিস্ক অথবা পেনড্রাইভ দিয়ে। বিশ্বস্ত কেউ ওই ভবন থেকে বিন লাদেনের বার্তা কপি করে নিকটস্থ কোনো সাইবার ক্যাফে থেকে নির্দিষ্ট ঠিকানায় মেইল করে দিত। আবার বাইরে থেকে কোনো বার্তা আসলে তা আবার কপি করে কম্পাউন্ডে নিয়ে আসা হতো যা তিনি কম্পিউটারে অফলাইনে বসে পড়তেন।
পদ্ধতিটি খুবই শ্রমসাধ্য এবং ধীরগতির হলেও নিরাপত্তার জন্য ছিল চমৎকার। বিন লাদেনের এ অভিনব পদ্ধতি দেখে অনেক বাঘা বাঘা গোয়েন্দা কর্মকর্তাও নাকি রীতিমতো ভীড়মি খেয়ে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য সবসময় ধারণা করতো বিন লাদেন কোনো বার্তাবাহকের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করছিল। কিন্তু তার যোগাযোগের বিস্তৃার সম্পর্কে এর আগে কোনো ধারণাই ছিল না তাদের।
বিন লাদেন হত্যা অভিযান পরিচালনাকারী বিশেষ বাহিনী নেভি সিল অ্যাবোটাবাদের কম্পাউন্ড থেকে প্রায় ১০০টি ছোট আকারের (ফ্ল্যাশ) মেমোরি ড্রাইভ উদ্ধার করেছে। এসব মেমোরি ড্রাইভ থেকে বিশ্বব্যাপী তার যোগাযোগের নানা তথ্য পাওয়া যাবে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।
তবে আল কায়েদার গোয়েন্দারা তাদের মেইল ঠিকানা প্রায়ই পরিবর্তন করে থাকেন। তাই বিন লাদেনের মৃত্যুর পর এখন পর্যন্ত কতগুলো ঠিকানা কার্যকর আছে তার সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল।
ইলেকট্রনিক ড্রাইভগুলো থেকে উদ্ধার করা ইমেইল ঠিকানা এবং ইমেইলের মধ্যে থাকা ফোন নম্বরগুলো জাতীয় নিরাপত্তায় নতুন নীতি প্রণয়নে চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ইমেইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তলব করা হবে বলে জানা গেছে।
বিচার বিভাগ ইতিমধ্যে একবছরের জন্য নীতি প্রণয়ন করেছে যা এফবিআইকে বিশেষ স্বাধীনতা দিয়েছে। এ নীতির ফলে তারা যে কোনো সময় বিচারকের পক্ষ থেকে তলবি নোটিশ ছাড়াই কোনো কোম্পানির কাছ থেকে তথ্য চাইতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কার সঙ্গে বিন লাদেন যোগাযোগ করতেন এ ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত অবশ্য মার্কিন কর্তৃপক্ষ দেয়নি। তবে সন্ত্রাসীরা ঐতিহাসিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ফ্রি ইমেইল সেবা নিয়ে আসছে।
জানা গেছে, উদ্ধার করা নথিপত্র ও ইলেক্ট্রনিক ড্রাইভগুলোর মধ্যে এতো বিপুল পরিমাণ তথ্য রয়েছে যে, মার্কিন প্রশাসন গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে আরবি ভাষাভাষীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে যাতে তাদের ওপর তীক্ষè নজর রাখা যায়।
নথিপত্রে অবশ্য আল কায়েদার নতুন হামলা পরিকল্পনার কোনো তথ্য মিলেনি। তবে বিন লাদেনের পরবর্তী উত্তরসূরি হিসেবে আইমান আল জাওয়াহিরির হাতে নেতৃত্ব হস্তান্তর করার ইঙ্গিত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১১