ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

শুক্রবার ১৩: দুর্ভাগ্যের দিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১১
শুক্রবার ১৩: দুর্ভাগ্যের দিন

ঢাকা: শুক্রবার দিনটি যদি হয় মাসের ১৩তম দিন তাহলে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে তা খুবই অশুভ। এদিনটিতে তারা কোনো মইয়ের নিচ দিয়ে হাঁটতে বা মুখ দেখার আয়না ভাঙতে এমনকি সামান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজও করতে চান না।



বছরে মাত্র এক থেকে তিনবার এদিনটি আসে। বহুকাল থেকে প্রচলিত বিভিন্ন লোককাহিনীর প্রভাবে এটি এখন দুর্ভাগ্যের সমর্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিনটি এতো ভীতিকর হওয়ার পেছনে বিভিন্ন তত্ত্ব দিয়েছেন লৌকিক উপাখ্যান বিশেষজ্ঞরা। ঝহড়ঢ়বং.পড়স ওয়েবসাইটে এমন কিছু তত্ত্ব সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, খ্রিস্টান ঐতিহ্যে এর নেপথ্যে যে দুটি ঘটনা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে তা হলো, শুক্রবার যিশুকে ক্রুস বিদ্ধ করার ঘটনা এবং বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী স্বর্গের বাগানে আদি পিতা অ্যাডামকে (আদম) তার স্ত্রী ইভ (হাওয়া) সেই জ্ঞানফল (গন্দম বা বাইবেলে বর্ণিত আপেল) খেতে প্রলুব্ধ করেন যার ফলে তারা স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন।

এই সংস্কারটি বিশেষ করে পশ্চিমাদের মধ্যে এতোটাই প্রভাব বিস্তার করেছে, অনেক ভবনেই ১৩তম তলা থাকে না। কিছু বিমানে ১৩তম আসনের সারি নেই। দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে এ দিনটি নিয়ে অনেকেই বেশ চিন্তিত থাকেন।

ওয়েবসাইট অ্যাবাউট.কমে লৌকিক উপাখ্যান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১৩ সংখ্যাটির প্রতি মানুষের ভীতি বা বিরাগ যাই বলা হোক না কেন, তা শুরু হয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকে যখন মানুষ প্রথম গুনতে শিখেছে।

ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে, প্রাচীনকালে মানুষ সংখ্যা নির্দেশে হাতের ১০ আঙ্গুল এবং দুই পা ব্যবহার করত। এর বেশি তারা গুনতে পারত না। সুতরাং ১২ এর পরে যা কিছু তা তাদের কাছে ছিল রহস্যময়। আর এখান থেকেই এই কুসংস্কারের জন্ম।

এ নিয়ে অপর একটি তত্ত্বও রয়েছে: আদিকালে মেয়েলি বিষয় প্রকাশে ১৩ সংখ্যাটি ব্যবহার করা হতো। অনেকের বিশ্বাস, ধর্মযাজকরা এ সংখ্যাটিকে কলঙ্কজনক আখ্যা দিয়েছেন। কারণ এটি প্রতি বছরে মেয়েদের লুনার বা রজঃস্রাবের সংখ্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রাগৈতিহাসিক যুগে সংখ্যাটি দেবীর পূজা-অর্চনায় শ্রদ্ধা প্রকাশে ব্যবহার করা হত।

টংবষবংংকহড়ষিবফমব.পড়স নামের একটি ওয়েবসাইটে ২০০১ সালে এরকম আরেকটি তত্ত্ব প্রকাশিত হয়। ১৩০৭ সালের ১৩ অক্টোবর শুক্রবার একটি বিশেষ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর থেকে এ কুসংস্কারটি ডালপালা ছড়াতে শুরু করে।
এই দিনটিতে রোমান ক্যাথলিক চার্চের পোপ ও তৎকালীন ফ্রান্সের রাজা নাইটস টেম্পলারদের (যিশু ও সলোমনের উপসনালয়ে নিয়োজিত সেনাদের উত্তরসূরি) বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের আদেশ দেন। সেই সঙ্গে তাদের নেতাকে নির্যাতন ও ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই হাতে গোনা ক’টি প্রমাণের ভিত্তিতে এতো বেশি কুসংস্কার ছড়িয়েছে যে, বিশ্বের অসংখ্য মানুষ এখনো এদিনটিকে যেমন অশুভ মনে করে তেমনি ১৩ সংখ্যাটিকেও সব সময় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।

তবে এটা শুধু কুসংস্কার বললেই বোধহয় ঠিক হবে না। বাস্তবে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা একজনকে এ সংখ্যা এবং এ দিনটির ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা নিতে বাধ্য করবে। এর ওপর ১৯৯৩ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। মাসের ১৩তম দিন শুক্রবার হলে তা মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে কি না তা নিয়ে ওই গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, গবেষণায় দেখা গেছে ওই দিনটি কারো কারো জন্য সত্যিই অমঙ্গলের। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে এদিনটিতে হাসপাতালে ভর্তির পরিমাণ ৫২ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। একারণে এদিন ঘরে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।