ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বিজয় বার্ষিকীর ভাষণ

বিশ্বশান্তি সমুন্নত রাখার আহ্বান চীনা প্রেসিডেন্টের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৫
বিশ্বশান্তি সমুন্নত রাখার আহ্বান চীনা প্রেসিডেন্টের

ঢাকা: বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে জয়লাভের সত্তরতম বার্ষিকী উদযাপন করছে চীন।

এ উপলক্ষ্যে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান এবং সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়।

চীনের জনগণ, সামরিক বাহিনীর সদস্য ও শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র,সরকার প্রধান ও অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা।

কুচকাওয়াজে সর্বাধুনিক সমরাস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তি প্রযুক্তি প্রদর্শন করে চীনের গণমুক্তি ফৌজের সদস্যরা।
 
অনুষ্ঠানে এক যুগান্তকারী ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্বে শান্তির সুমহান আদর্শ সমুন্নত রাখার ওপর গুরুত্ব দেন। শান্তির এই বার্তাকে সমুন্নত রাখতে সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা তিন লাখ কমানোর ঘোষণা দেন তিনি।

ভাষণের শুরুতে আমন্ত্রিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং কুচকাওয়াজে অংশ নেয়া সব সামরিক কর্মকর্তা, সৈনিক ও চীনের জনগণকে ধন্যবাদ জানান শি জিনপিং।

শি জিনপিং বলেন, ‘আজকের দিনটি সারা বিশ্বের জনগণের মনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ১৪ বছর ধরে অব্যাহত সংগ্রাম চালিয়ে সত্তর বছর আগে আজকের এই দিনে মহান বিজয় অর্জন করে চীনের জনগণ। এর মাধ্যমে বিশ্বের ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে নিজেদের স্মরণীয় করে রেখেছে তারা।

এই দিনে বিশ্ব আরও একবার শান্তির সূর্যোদয়ে উদ্ভাসিত হয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি, ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটি, স্টেট কাউন্সিল, ন্যাশনাল কমিটি অব দি চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্স এবং সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের পক্ষ থেকে এই প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয়া সকল স্বাধীনতাকামীদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছি।

একই সঙ্গে বিদেশি সরকার ও বন্ধু যারা এই প্রতিরোধ যুদ্ধে আমাদের জনগণকে সহায়তা করেছে তাদের স্মরণ করছি।

পাশাপাশি বিদেশি অতিথি এবং বিদেশি সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধি যারা আজকের দিনে এখানে উপস্থিত আছেন তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছি।

ভদ্রমহোদয় ও মহোদয়া, বন্ধু ও সহকর্মীরা

জাপানি আগ্রাসন এবং বিশ্বের ফ্যাসিস্ট বিরোধী যুদ্ধে চীনের জনগণের লড়াই ছিলো ন্যায় ও অন্যায়, আলোক ও অন্ধকার এবং উন্নয়ন ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যকার লড়াই।

বিশ্বের ফ্যাসিস্টবিরোধী এই যুদ্ধ সবচেয়ে আগে সূচনা হয়েছিলো জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনের জনগণের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যার সমাপ্তিও হয়েছিলো সবচেয়ে পরে।

আগ্রাসনের মুখে কখনও নত না করে চীনের জনগণ বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে জাপানি আগ্রাসনকারীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে। এর মাধ্যমে চীনের ৫ হাজার বছরের সভ্যতা রক্ষা এবং মানবজাতির শান্তির ধারণাকে সুউচ্চে স্থাপন করে তারা।

এই স্মরণীয় আত্মত্যাগ বিশ্বের ইতিহাসে চীনা জাতিকে বিরল স্থানে অধিষ্ঠিত করে। চীনের জনগণের এই বিজয় আধুনিক ইতিহাসে বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম চূড়ান্ত বিজয়ের দৃষ্টান্ত।

এই বিজয় সমর শক্তির বলে চীনকে উপনিবেশে পরিণত করার ষড়যন্ত্রকে বিনষ্ট করে, চীনকে বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

এই লড়াইয়ে বিজয়ের মাধ্যমে চীনের জনগণ সারা বিশ্বের শান্তিকামী জনগণের সম্মান ও ভালোবাসা লাভ করে।  

জাপানি আগ্রাসনকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীনের জনগণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিপুল সমর্থন লাভ করে। তাদের এই অবদান চীনের জনগণের কাছে চিরস্মরণীয়।

ফ্যাসিবাদ বিরোধী এই লড়াইয়ে পুরো বিশ্বজুড়ে ১০ কোটি মানুষ হতাহত হয়। যার মধ্যে সাড়ে তিন কোটি ছিলেন চীনা। এই লড়াইয়ে মারা যায় সোভিয়েত ইউনিয়নেরও ২ কোটি সত্তর লাখ মানুষ।

শান্তি, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা রক্ষায় যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের সম্মানিত করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এই ধরনের ঐতিহাসিক মর্মান্তিক ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করা।

যুদ্ধ অনেকটা আয়নার মত। এর মাধ্যমে আমরা শান্তির মূল্য আরও ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারি। শান্তি এবং উন্নয়নই বর্তমানের মূল ধারা হলেও এখনও বিশ্বশান্তি থেকে অনেক দূরে । এখনও ডেমোক্লসের তলোয়ারের মত মানবজাতির ওপর ঝুলছে যুদ্ধ।  

আমাদের অবশ্যই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং শান্তির জন্য উৎসর্গিত হতে হবে। চীন সবসময়ই শান্তিপূর্ণ উন্নয়নে  বিশ্বাসী। আমরা চীনারা শান্তি ভালোবাসি। চীন যত শক্তিশালীই হোক না কেন কখনও সম্প্রসারণবাদী হবে না। চীন কখনই অন্য কোনো দেশের ওপর সেই ব্যথা চাপিয়ে দেবে না যা অতীতে সে নিজে ভোগ করেছে।

আমি আজকে ঘোষণা করছি চীন তার সামরিক বাহিনীর তিন লাখ সেনা হ্রাস করবে।

চীনের গণমুক্তি ফৌজ জনগণের বাহিনী। এর সব সদস্যকে মনে রাখতে হবে যে তাদের ওপর রয়েছে দেশের জনগণের সেবা, নিরাপত্তা রক্ষা এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি বজায় রাখার সুমহান দায়িত্ব।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৫
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।