ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

যে ছবিতে কাঁদছে বিশ্ব

অন্যদের বাঁচাতে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হই

জনি সাহা, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৫
অন্যদের বাঁচাতে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হই

ঢাকা: তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় সমুদ্র সৈকতে উদ্ধার হওয়া সিরীয় শরণার্থী শিশুটির মরদেহের হৃদয়বিদারক ছবিটিই যেন এখন শরণার্থীদের ভয়াবহতার ‘প্রতীক’। তবে আদরের ছোট দুই সন্তানকে (আইলান ও গালিব) হারিয়ে বিষাদ জর্জরিত বাবার কাছে এটি কেবলই ব্যক্তিগত ট্রাজেডি।



সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের গৃহযুদ্ধ থেকে প্রাণ বাঁচাতে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ইউরোপ অভিমুখে রওনা দেন আবদুল্লাহ কুর্দি। উন্নত জীবনের আশায় দুই নৌকায় করে তুরস্কের বোদরাম উপদ্বীপ থেকে গ্রিসের এজিয়ান দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হন তারা। গৃহযুদ্ধে উত্তাল মধ্যপ্রাচ্যের মানুষগুলোর কাছে শেষ পর্যন্ত সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ ধরা দিলো ‘বিভীষিকা’ হয়ে।

উত্তাল ঢেউয়ের দোলায় মায়ের কোল থেকে শিশুটি ছিটকে পড়লো সমুদ্রে। ভাসিয়ে নিয়ে এলো তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে। মাকে ভাসিয়ে নিয়ে ফেললো দূরের অন্য এক সৈকতে। জীবিত আছেন কেবল আবদুল্লাহ কুর্দি।

ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) তুরস্কের একটি মর্গে স্ত্রী-সন্তানদের মরদেহ শনাক্তে আসেন তিনি। এ সময় আবদুল্লাহ কুর্দি বলেন, তীব্র স্রোতের কবলে পড়ে প্রথম সন্তান মারা যায়। অন্যদের বাঁচাতে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। আলো অনুসরণ করে সাঁতার কেটে তীরে পৌঁছাতে চেষ্টা করি।

বিষাদ জর্জরিত আবদুল্লাহ বলেন, জীবন বাঁচাতে নৌকা ধরে রাখার প্রাণপন চেষ্টা করি, কিন্তু এটি দুলছিলো। তীব্র ঢেউ, বৈরী আবহাওয়া আর অন্ধকারে বিভীষিকাময় এক পরিবেশ। কিছুক্ষণ পর স্ত্রী-সন্তান কারো আওয়াজ আর শুনতে পাচ্ছিলাম না।

যাদের জন্য সবকিছু, তাদের হারিয়ে নিঃস্ব আবদুল্লাহর এখন আর কিছুই প্রয়োজন নেই। পুরো বিশ্ব হাতের মুঠোয় এনে দিলেও প্রয়োজন নেই আর।

আবদুল্লাহ বলেন, কানাডা আশ্রয়ের জন্য আবেদন করলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। তবে ‘ছবিটি’ (সমুদ্রের পাড়ে সন্তানের ছবি) আমাকে সব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে।
আশ্রয়ের আশায় এটি ‍ তাদের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা জানিয়ে আবদুল্লাহ আরো বলেন, এজন্য চোরাকারবারীদের চার হাজার ইউরো দেওয়া হয়েছিল। তবে চোরাকারবারীরা আমাদের একা রেখে পালিয়ে যায়।

এদিকে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ছবিটি প্রকাশের পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি এসব সংবাদমাধ্যমের খবরের নিচে মন্তব্য করে নিজেদের শোক-সমবেদনার কথা জানাচ্ছেন পাঠকরা। একইসঙ্গে তারা ধুয়ে দিচ্ছেন যুদ্ধবাজ সিরিয়া ও ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যকে। ধুয়ে দিচ্ছেন প্রাণ বাঁচাতে আসতে থাকা শরণার্থীদের ঠেকানোর পরিকল্পনকারী ইউরোপের নেতাদেরও।

আর উন্নত জীবনের আশায় পরিবার নিয়ে ইউরোপ অভিমুখে রওনা হয়ে নির্মম ঘটনার স্বীকার আবদুল্লাহ মনে করেন, সন্তানের এ ছবি পুরো বিশ্বকে বদলে দেবে। এ ধরনের ঘটনা যেন এটিই সর্বশেষ, এমনটি আশা তার।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৫
জেডএস

** সেই ছবিতে কাঁদছে বিশ্ব

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।