ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

নিরাপত্তা হুমকি বাংলাদেশে, সন্ত্রাসী হামলা অস্ট্রেলিয়ায়!

হুসাইন আজাদ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৫
নিরাপত্তা হুমকি বাংলাদেশে, সন্ত্রাসী হামলা অস্ট্রেলিয়ায়! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: “নিরাপত্তা হুমকিতে সতর্কতা জারি বাংলাদেশে, লাশ পড়ে আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ায়। হায়রে ... দল।

” অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পুলিশ সদর দফতরের সামনে বন্দুকধারীদের গুলিতে দু’জন নিহত হওয়ার খবরটি পড়ে এমনই মন্তব্য করেন ‘আমান শএক’ নামে বাংলানিউজের এক পাঠক। ‘সোহেল মাহমুদ’ নামে বাংলানিউজের আরেক পাঠকের প্রতিক্রিয়া, “..দের নিরাপত্তা কই গেলো, বাঙালি ভাই-বোনেরা সাবধান থাকবেন। অস্ট্রেলিয়া জঙ্গি উৎপাদনের কারখানা। ”

কেবল আমান শএক বা সোহেল মাহমুদই নন, শুক্রবার (২ অক্টোবর) সিডনিতে সন্ত্রাসী হামলার খবরে এক ঘণ্টার মধ্যে শতাধিক বাংলানিউজ পাঠক এমন প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। এই প্রতিক্রিয়া যে ‘নিরাপত্তা হুমকিতে’ অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিলের প্রেক্ষিতে সে বিষয়টি খোলাসা করে দিচ্ছেন পাঠকরাই।

পাঠক আরিফুল ইসলামের মন্তব্য, “হা হা হা। তোদের দেশই তো নিরাপদ না। আইছে আমাদের দেশের নিরাপত্তা নিয়া সন্দেহ প্রকাশ করতে!” আরিফের মতোই মন্তব্য আনিসুর রহমান সুমনের, “অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশ অনেক অনেক নিরাপদ। ” সোহেল জোহার কথা, “যাদের নিজের দেশের এই হাল, তারা আমার দেশের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত, যত্তসব ফালতু!”

আক্ষেপ প্রকাশ করে পাঠক মাহফুজুর রহমান রাকিব বলেন, “...তোদের নিজের দেশের-ই দেখি ঠিক নাই, আবার বাংলাদেশ নিয়ে কাহিনী করছ!” দেবাশীষ পালিত বলেন, “অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দারা হাজার হাজার মাইল দূরে বসে বাংলাদেশে যে জঙ্গি হামলা হবে, তার খবর দিতে পারে। আর নিজেদের আস্তানার সামনে সন্ত্রাসী হামলা হবে, তা ধরতে পারল না! মাননীয় স্পিকার, আমিতো ... হয়ে গেলাম!”

আক্ষেপ-অভিমানটা আরও বেশি পাওয়া যায় মিজানুর রহমান রিসিদের মন্তব্যে, “এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার দুর্যোগে খুবই খুশি হয়েছি। বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে আশা করছি পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশিকে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করা হোক। আগামীতে যে কোনো টুর্নামেন্টের আগে নিরাপত্তা দলের ক্লিয়ারেন্স ছাড়া বিসিবি যেন অস্ট্রেলিয়ায় খেলোয়াড় না পাঠায়। ”

পাঠক মো. আলম তো এক কাঠি সরেস হয়েই অস্ট্রেলিয়াকে পরামর্শ দিলেন, “... এখন তোদের দেশেই তোরা নিরাপদ না। বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিস না। তোদের দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ভাব!”

নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর বাতিল করায় আবেগে-অভিমানে পাঠকরা এমন মন্তব্য করলেও এই পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে পরামর্শ দিতেও ভুললেন না অনেকে।

পাঠক নন্দন দাস অর্পণের পরামর্শ, “অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত সকল বাঙালি ভাই-বোনদের বলছি। আপনারা সতর্ক থাকবেন। আপনাদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে সবচেয়ে জরুরি। ...রা জঙ্গি!” একই ধরনের পরামর্শ দেন তারেক হাসান তামি, মহিদুল পল্লব, মিলন খন্দকার, আবদুল আউয়াল, ইমাম হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশিদের পাশাপাশি আইসিসিকেও করণীয় বাতলে দেন কোনো কোনো পাঠক। মাহমুদ হাসানের পরামর্শ, “এখন প্রত্যেক দেশের লোকদেরই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। ...আইসিসির উচিত অস্ট্রেলিয়ায় কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করার আগে সেখানকার সন্ত্রাসীদের হুমকির বিষয়টি মাথায় নিয়ে দ্বিতীয়বার চিন্তা করা। ”

শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৪টার (বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টা) দিকে সিডনির পশ্চিমাঞ্চলে নিউ সাউথ ওয়েলসে পুলিশ সদর দফতরের সামনে চার্লস স্ট্রিটে বন্দুকধারীর গুলিতে দু’জন নিহত হন, এদের মধ্যে একজন প্রযুক্তিবিদ।

এদিকে, বাংলাদেশে নিরাপত্তা হুমকির অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া তাদের সফর বাতিল করলেও এ সিদ্ধান্তকে ক্রিকেটীয় আচরণে ফেলতে পারছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স-জার্মানির মতো দেশে যেখানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটছে এবং খোদ অস্ট্রেলিয়াও যেখানে সন্ত্রাস থেকে ১০০ ভাগ নিরাপদ নয়, সেখানে ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তা সতর্কতা’কে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে না করে অনেক দিনের প্রতীক্ষিত সফর বাতিল করে দেওয়া পেশাদারসুলভ সিদ্ধান্ত নয়।

তাছাড়া, অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন সময়েই ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তা সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে, সে সময়গুলোতে অস্ট্রেলিয়ায় অনেক টুর্নামেন্টই খেলে এসেছে অন্য ক্রিকেট দলগুলো। এরমধ্যে ২০১৪ সালের ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর সিডনির ক্যাফেতে সন্ত্রাসী হামলা ও জিম্মি সংকটের মধ্যে ভারতের খেলার কথা উল্লেখ করা যায়। সিডনিতে স্মরণকালের ওই আলোচিত সন্ত্রাসী হামলার সময়ের মধ্যেই পুরো টেস্ট সিরিজ খেলে আসে ভারতীয় ক্রিকেট দল। (চারটি টেস্ট; ৯-১৩ ডিসেম্বর প্রথম টেস্ট, ১৭-২০ ডিসেম্বর দ্বিতীয় টেস্ট, ২৬-৩০ ডিসেম্বর তৃতীয় টেস্ট এবং ৬-১০ জানুয়ারি চতুর্থ টেস্ট)।

ক্রীড়া বিশ্লেষকদের মতে, রীতিমত হামলা চলাকালেই ভারতীয় ক্রিকেট দলসহ অন্যরা অস্ট্রেলিয়ায় খেলে আসতে পারলে কেবল ‘সতর্কতা’কে ‘সাধারণ ঘোষণা’ মনে করে কেন বাংলাদেশে আসতে পারবে না ক্যাঙ্গারুরা?

ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে করেন, এতোসব যুক্তির পরও অজিরা যদি কেবলই ‘সতর্কতা’র ভয়ে বাংলাদেশে আসতে অপারগতা প্রকাশ করে, তবে ১০০ ইসলামিক স্টেট (আইএস) যোদ্ধার দেশ, আইএসকে সরাসরি অর্থদাতা ১৫০ জঙ্গির দেশ, গত ছয় মাসের মধ্যে ২৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা সন্ত্রাসীদের দেশে টুর্নামেন্ট আয়োজনে সত্যিই ভাবা উচিত বাংলাদেশ দলকে, এমনকি আইসিসিকেও।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৫
এইচএ

** সিডনিতে পুলিশ সদর দফতরের সামনে গুলিতে নিহত ২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।