ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কোহিনূর তুমি কার?

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৬
কোহিনূর তুমি কার?

ঢাকা: প্রশ্ন ছিলো, কোহিনূর তুমি কার? বরাবরই অমূল্য এ রত্নের দাবিদার ছিলো ভারত৻ একই ইতিহাসের অংশীদারিত্বের দাবিতে কোহিনূরকে নিজেদের বলে দাবি করেছে পাকিস্তানও। তবে এবার স্বয়ং ভারতই কি না সাফ জানিয়ে দিলো, ‘ভারত নয়, কোহিনূরের মালিক ব্রিটেনই’।

বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত হীরার মধ্যে অন্যতম ‘কোহিনূর’৻ ব্রিটেনের রাজপরিবারের ধনরত্নের মধ্যে এর স্থান একেবারে প্রথম কাতারে৻ ব্রিটেনের রাণীর মুকুটেরও অংশ এটি। কিন্তু এই কোহিনূরের আসল মালিকানা কার, তা নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে৻

সোমবার (১৮ এপ্রিল) কোহিনূরের মালিকানা সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে আদালতে ভারত সরকার জানায়, কোহিনূরের মালিক ব্রিটেনই। তাই ব্রিটেনের কাছে কোহিনূর ফেরত চাওয়া ভারতের উচিত নয়।

ঔপনিবেশিক আমলে বর্তমানে ১০৮ ক্যারেটের মূল্যবান এই রত্ন কোহিনূর ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। পাঞ্জাবের রাজা রঞ্জিত সিংয়ের পুত্র দিলীপ সিংয়ের কাছ থেকে ব্রিটিশরা ছলে বলে কৌশলে আদায় করে নেয় মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সাধের কোহিনূর।

পরবর্তীতে রত্নটির ঐতিহাসিক মালিকানা দাবি করে তা ফেরত পেতে বৃটেনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলো ভারত। এমনকি ২০১০ সালেও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালেও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়।

তবে আদালতে ভারতের সলিসিটর জেনারেল রঞ্জিত কুমার বলেন, উনবিংশ শতাব্দীতে শিখ রাজা রণজিৎ সিং এই অমূল্য রত্নপাথর স্বেচ্ছায় বৃটেনকে দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘শিখ যুদ্ধে সহায়তার জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাজ রণজিৎ সিং স্বেচ্ছায় ব্রিটেনকে এ রত্ন দেন। কোহিনূর চুরি হয়নি। ’

কোহিনূর ফেরত পেতে সর্বভারতীয় মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার জোট নামে একটি বেসরকারি সংস্থার দায়ের করা রিটের শুনানিতে অংশ নিয়ে এ দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে একটি হলফনামা ইস্যু করে সরকারের অবস্থান জানানোর নির্দেশ নিয়েছেন আদালত।

শুধু ভারতই নয়, মূল্যবান রত্নের দাবি করছে পাকিস্তান, ইরান ও আফগানিস্তানও। যা নিয়ে আদালত পর্যন্ত গিয়েছিলো তারা।

কোহিনূর শব্দের অর্থ ‘আলোর পর্বত’। কোহিনূর সম্পর্কে সবচেয়ে পুরানো ঐতিহাসিক সূত্র পাওয়া যায় মুঘল সম্রাট বাবরের লেখা ‘বাবরনামাতে’।

কোহিনূর ছিল ১৮৬.১০ ক্যারেট ওজনের এক আশ্চর্য হীরকখণ্ড। তবে ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে বেশ কয়েকবার কাটার পর বর্তমানে এটির ওজন দাঁড়িয়েছে ১০৮ ক্যারেট।

১৮৫১ সালে কোহিনূরকে কেটে বসানো হয় একটি আর্মলেটে। তখন কোহিনূর হয়ে ওঠে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় বস্তু।

এরপর ১৮৫২ সালে কোহিনূরের উপর আবারো ছুরি চলে। তখন ১৮৬.১০ ক্যারেটের ৪০ শতাংশই কাটা পড়ে। আকার ও ওজন কমে আসে ১০৮ ক্যারেটে।  

ইতিহাস বলে, গত ৭০০ বছর ধরে কোহিনূরের মালিকানা একের পর এক হাত বদলেছে বহুবার। এর জন্ম থেকেই বিভিন্ন রাজাবাদশাহ আর সম্রাটদের হাত ঘুরে বর্তমানে তা স্থির হয়েছে বৃটিশ রানি ভিক্টোরিয়ার মুকুটে।

বৃটেনে কোহিনূরকে প্রথমে রানি ভিক্টোরিয়া পরতেন তার হাতে। সেখান থেকে ১৮৫৩ সালে কোহিনূর স্থান করে নেয় তার শিরমূলে।

১৯১১ সালে রানি মেরির স্বর্ণমুকুট আলোকিত করে কোহিনূর। ১৯৩৭ সালে ষষ্ঠ জর্জের শপথের দিন রানিমাতার মুকুটে স্থান পায় সর্বকালের সেরা হীরকখণ্ডটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৬
এমএ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।