ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

যক্ষা সনাক্তে রক্ত পরীক্ষার প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১১
যক্ষা সনাক্তে রক্ত পরীক্ষার প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ!

ঢাকা: শরীরে যক্ষার সক্রিয় জীবাণু সনাক্ত করতে রক্ত পরীক্ষার প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে এই পরীক্ষা নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ২০ লাখেরও বেশি এ ধরনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়।

কিন্তু ডব্লিউএইচও বলছে, এই পরীক্ষা অনৈতিক এবং রোগ সনাক্তকরণে তা ভুল ফলাফল দেয় ও একারণে রোগীকে ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়।

সংস্থাটি তাদের পর্যবেক্ষণে দেখিয়েছে, যক্ষা সনাক্তকরণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি প্রায় ৫০ শতাংশের ক্ষেত্রে ভুল ফলাফল দেয়। এসব যন্ত্রপাতি মূলত উন্নয়নশীল দেশে বিক্রয় করা হয়।

বাজারে পাওয়া ১৮টি যন্ত্রের মধ্যে বেশিরভাগই ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার দেশে উৎপন্ন।

ডব্লিউএইচও‘র যক্ষা রুখ বিভাগের পরিচালক ড. মারিও রাভিগলোন বলেন, এই পরীক্ষা প্রক্রিয়া অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, সক্রিয় যক্ষা রোগ নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা একটি খারাপ রীতি। এ পরীক্ষা অসঙ্গতিপূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ এবং রোগীর জীবন ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।

শরীরে যক্ষার ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করলে রক্তে যে অ্যান্টিবডি অথবা অ্যান্টিজেন তৈরি হয় তা সনাক্ত করার কাজে এ রক্ত পরীক্ষা করা হয়।

তবে কিছু ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক পরীক্ষা প্রক্রিয়া যাকে ‘কম সংবেদনশীল‘ বলা হয়- এ ব্যাপারে অনেক রোগীরই অভিযোগ তাদের যক্ষা হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষায় তা ধরা পড়েনি।

ডব্লিউএইচও‘র যক্ষা রুখ বিভাগের এক কর্মকর্তা ড. কারেন ওয়েআর বলেন, ‘গত দুই মাসে পাওয়া বিভিন্ন প্রমাণাদি আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, দুই জনের একজন রোগীই ভুলভাবে পরীক্ষিত হয়েছেন। দেখা গেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল নেতিবাচক বা ভুল ইতিবাচক ফলাফল এসেছে। এতে করে রোগীর ভুল চিকিৎসা হয়েছে অথবা যক্ষা হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষায় ধরা না পড়ায় তার কোনো চিকিৎসাই হয়নি। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা একে অনৈতিকই বলব। যক্ষা রোগকে একটি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে সরকারগুলোর প্রতি আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে এ ধরনের অকার্যকর পরীক্ষা পদ্ধতিও যে হুমকি তাও বুঝানোর চেষ্টা করছি। ’

স্থানীয়ভাবে পরীক্ষার জন্য ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার দেশে তৈরি যন্ত্রপাতিগুলো বাইরে বিক্রি করতে দেওয়া হয় না। এরা খুব নিয়ম মেনে এগুলো তৈরি করে এবং ত্রুটিহীনতার প্রমাণ দিতে হয়।

কিন্তু ভারত এবং চীনসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে এমনটি করা হয়না।

ড. ওয়েআর বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এখানে আইন খুব দুর্বল যা দেশে ব্যবহারের আগে যন্ত্রপাতিগুলো নিবন্ধিত হওয়া নিশ্চিত করতে যথেষ্ট নয়। অন্য সমস্যাটি হলো, এসব যন্ত্রপাতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেসরকারি বা ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয় যা আইনের আওতায় আনা খুবই কঠিন। আর এ কারণেই এগুলোর ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে। কমপক্ষে ১৭টি দেশে প্রচলিত ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে এমন ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষার ব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্ন। ’

নিষিদ্ধ ঘোষণার ব্যাপারে ডব্লিইএইচও বলেছে, এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির প্রথাবিরুদ্ধ। যক্ষা রোগের চিকিৎসায় বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি পদ্ধতির ব্যাপারে এমন নেতিবাচক সুপারিশ এই প্রথম করছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।

সারা বিশ্বে শুধু যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ১৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।