ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

শান্ত নরওয়ে হামলায় বিপর্যস্ত: নিহত ৯১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১১
শান্ত নরওয়ে হামলায় বিপর্যস্ত: নিহত ৯১

অসলো: নরওয়েতে শুক্রবার দু’দফা সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯১ জন হয়েছে বলে জানিয়েছে নরওয়ের পুলিশ। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।



রাজধানী অসলোর কেন্দ্রস্থলে বোমা হামলার ঘণ্টাখানেক পরেই শহরের বাইরের দ্বীপ ইউটোয়ায় পুলিশের ছদ্মবেশে গুলি চালায় এক যুবক। গুলিতে ৮৪ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে বলে খবর নিশ্চিত করেছে অসলো পুলিশ। এ সময় ওখানে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির তত্ত্ববধানে যুব ক্যাম্প চলছিল। ওই ক্যাম্পেই এলোপাথাড়ি গুলি চালায় ওই যুবক।

নরওয়ে পুলিশের প্রধান অস্টিন মিলান জানান, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় ৮৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে অনেকেরই অবস্থা আশংকাজনক।  

এর আগে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ বিস্ফোরণে মারা গেছে ৭ জন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ইয়েন স্টোলটেনবার্গ এ ঘটনাকে ‘খুবই গুরুতর’ বলে অভিহিত করেছেন।

পুলিশ ইউটোয়ার ওই বন্দুকধারীকে গ্রেপ্তার করেছে। বন্দুকধারী একজন ককেশীয় বলে জানায় পুলিশ।

দু’দফা হামলার ঘটনার দায়দায়িত্ব এখন পর্যন্ত কেউ স্বীকার না করলেও পুলিশ বলছে, ৩২ বছর বয়সী ওই বন্দুকধারী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গেও জড়িত।

এরই মধ্যে এ হামলার ঘটনাকে ‘ন্যক্কারজনক’ বলে অভিহিত করেছে মার্কিন প্রশাসন।

এদিকে, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর থেকে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় নেটওয়ার্ক জট দেখা দিয়েছে। এ কারণে সরকারের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে মোবাইল ফোন কম ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ বিস্ফোরণে হতাহত ছাড়াও দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বিস্ফোরণের সময় প্রধানমন্ত্রী তখন ১৭ তলা ওই  ভবনটিতে ছিলেন না বলে জানিয়েছে একটি সংবাদ সংস্থা। তার মন্ত্রিসভার অন্যসব সদস্যরাও অক্ষত ও নিরাপদ আছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্টোলটেনবার্গ। তবে তিনি এ মুহুর্তে কোথায় আছেন তা তিনি জানাতে রাজি হননি।

বিস্ফোরণস্থলের পাশেই রয়েছে নরওয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড পত্রিকার কার্যালয়। ওই পত্রিকার ক্ষয়ক্ষতির কোনও বিবরণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি।

কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু লোক এখনো ওই ভবনসহ আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোতে আটকা পড়ে আছেন। সেগুলোতে এখনও আগুন জ্বলছে।
টিভি ফুটেছে দেখা গেছে, বিস্ফোরণস্থলের চারপাশের রাস্তায় ধ্বংসস্তূপ। এখানে-ওখানে ছড়িয়ে আেেছ বিধ্বস্ত দরজা জানালার ভাঙ্গা কাচ। ভবনগুলোতে আগুন আর ধোঁয়ার এক নারকীয় পরিবেশ। ফুটেজে একটি দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়ির ছবিও দেখা গেছে।

রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে যাবার সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় টেলিভিশন এনআরকে। আরও বিস্ফোরণ ঘটতে পারে এ আশংকায় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিয়েছেন।

বড় ধরণের ওই বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অসলোর পুলিশের সহকারি চিফ কনস্টেবল (সহকারী আইজি) এগিল ভ্রেক্কে বিবিসিসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি জানান।

অসলোতে সাংবাদিক আসগির ইউলুন্ড জানান, বিস্ফোরণের সময় রাস্তায় প্রচুর মানুষ ছিলেন। অফিস শেষে মানুষ বাড়িঘরে যাওয়ার প্রস্তুুত নিচ্ছিলেন। অনেক মানুষের মুখ রক্ত মাখা দেখা গেছে এবং অনেকেই গুরুতর জখম হয়েছেন।

তবে হাতহতের খবর নির্দিষ্ট করে কেউ জানাতে পারেননি।

ওসলোকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ শহরগুলোর একটি বলে বিবেচনা করা হয়। এই বিস্ফোরণের পর এখন সেই সনাতন ধারণা পাল্টাতে হবে বলে উল্লেখ করছেন স্থানীয়রা।

আল কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপের বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের অভিজ্ঞতা নরওয়ের থাকলেও এমন হামলার ঘটনা ঘটেনি।

গত সপ্তাহে একজন নরওয়েজীয় আইনজীবী ইরাকি বংশোদ্ভূত একজন ধর্মপ্রচারকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি তাকে জোর করে দেশে পাঠিয়ে দিলে নরওয়ের রাজনীতিকদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

পরপর দু’টি সন্ত্রাসী হামলার পর গোটা দুনিয়ার চোখ এখন নরওয়ের দিকে।

উল্লেখ্য, নরওয়ে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর একটি। আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনী হামলা চালানোর পরপরই তালেবানদের পক্ষ থেকে নরওয়েতে হামলা চালানোর হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। বাড়তি হিসেবে ন্যাটো বাহিনী লিবিয়াতে অভিযান পরিচালনা শুরু করলে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি ইউরোপ জুড়ে বোমা হামলার হুমকি দিয়েছিলেন। আর তাই নরওয়েবাসীর কাছে প্রাক্তন এবং বর্তমান দুটো হুমকিই ঘুরেফিরে আসছে। তাহলে কি এতোদিনের নিরাপদ শহরের নিরাপত্তার দিন শেষ হলো?

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।