ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

নিক্সন-কিসিঞ্জার থেকে ওবামা-কেরি: সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

এরশাদুল আলম প্রিন্স, ল’ এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৬
নিক্সন-কিসিঞ্জার থেকে ওবামা-কেরি: সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

১.
আগাস্তো পিনোশে। চিলির সাবেক স্বৈরশাসক।

নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সালভাদর আলেন্দেকে হত্যা করে ১৯৭৩-এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি। ঘাতকরা সবাইকে খুন করে। বেঁচে যায় শুধু আলেন্দের স্ত্রী ও মেয়ে।
 
আলেন্দে ছিলেন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের প্রধান। এ কথা আজ সবারই জানা, আলেন্দেকে উৎখাত ও পিনোশেকে ক্ষমতায় বসানোর পৃষ্ঠপোষক ছিলো নিক্সন-প্রশাসন। সঙ্গে ছিলেন তার প্রধান পরামর্শক কিসিঞ্জার।

১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও তার প্রেস সেক্রেটারি রন জিগলারের মধ্যে যে কথপোকথন হয় তা আজ মার্কিন মহাফেজখানায় সংরক্ষিত। সেই সব গোপন নথি থেকে জানা যায়, নিক্সন-কিসিঞ্জারের সঙ্গে পিনোশের গোপন আঁতাত-ষড়যন্ত্রের কথা। ওয়ান ম্যান অ্যাগেইনস্ট দ্য ওয়ার্ল্ড: ট্রাজেডি অব রিচার্ড নিক্সন (টিম ওয়েনার) বইয়ে খুঁজে পাই সেই সব গোপন আলাপন।

স্বৈরশাসকরা যা করেন পিনোশেও তাই করেছেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন একটি ‘দায়মুক্তি’ পাস করিয়ে নেন যাতে ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধে হত্যা-খুন-গুম-নির্যাতনের বিচার না হয়। কিন্তু গদি হারানোর বেশ কয়েক বছর পর ২০০৪ সালে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় তাকে। বিচার শেষ হওয়ার আগেই ২০০৬ সালে ৯০ বছর বয়সে মারা যান পিনোশে।

২.
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট। আলেন্দের মতোই বঙ্গবন্ধু পরিবারের বেঁচে থাকে শুধু দু’টি মেয়ে। আলেন্দেকে হত্যায় ও পিনোশেকে ক্ষমতায় বসাতে নিক্সন-কিসিঞ্জার তথা সিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে আজ আর সন্দেহ নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সিআইয়ের ভূমিকা তথা আন্তর্জাতিক যোগসূত্রের পূর্ণাঙ্গচিত্র আজও আমাদের অজানা। এ বিষয়ে কয়েকজন মার্কিন সাংবাদিক আমেরিকান সংশ্লিষ্টতার পক্ষে বর্ণনা দিয়েছেন, কেউ দিয়েছেন বিপক্ষে। এ বিষয়ে বিষদ বর্ণনায় লেখার কলেবর বাড়বে। তবে ঘটনা পর্যালোচনা বা গোপন নথি থেকে এ হত্যাকাণ্ডে নিক্সন-কিসিঞ্জারের মদত বা বা যোগসূত্রকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতায় বসে মোশতাকচক্র। পিনোশের মতো মোশতাকও ১৯৭৫-এর সেপ্টেম্বরে একটি ‘দায়মুক্তি’ও পাস করিয়ে নেন। অতঃপর মঞ্চে আসেন জিয়া। জিয়া এসে ওই তথাকথিত ‘দায়মুক্তিকে’ সর্বোচ্চ আইন- সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন।

কিন্তু আইন করে ন্যায়বিচারের পথ রোধ করা যায় না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। ‘সময় এসেছে যারা হত্যাকারীদের দোসর, সুবিধা প্রদানকারী তাদেরও বিচার করতে হবে। ’ কাজটি কঠিন। চিলিতে পিনোশের সময়ে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে তাতে আদালত মামলা নেয়নি। বিলম্বে হলেও চিলির সে সময়ের বিচারকরা তাদের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। আমরা হয়তো দেশীয় অপরাধী বা তাদের দোসরদের বিচার করতে পারবো। কিন্তু বিদেশি সন্ন্যাসীদের টিকিটিও ছুঁতে পারবো না। সেই মন্ত্র আমাদের জানা নেই। তবে ইতিহাস চর্চা ও গবেষণাই এখানে বড় মন্ত্র। অন্তত চেহারাটা চেনা ।


৩.

ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। কূটনীতিতে তো না-ই। রাজনীতিতে ম্যাকিয়াভেলির ‘প্রিন্স’ই শেষ কথা। কূটনীতিতে চাণক্য। পিনোশের বিচার হয়েছে, আমেরিকা চেয়ে চেয়ে দেখেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যারও বিচার হয়েছে। নিক্সন-কিসিঞ্জার-সিআইএ যা-ই করুক বা না করুক, জন কেরি এবার ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে গেছেন। নিন্দা করেছেন এ হত্যাকাণ্ডের। এবার ফেরারি খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাওয়ার আশা করতেই পারি!

যুদ্ধাপরাধীদের প্রশ্নেও দেখছি ‘ইউটার্ন। ‘সুষ্ঠু বিচার’, ‘আন্তর্জাতিক মান’ এসব এখন গত। এটাই বাস্তব। কারণ, এর চেয়ে সুষ্ঠু বিচার ন্যুরেমবার্গ-টোকিও-ইরাকে আমরা দেখিনি। বিশ্ব সম্প্রদায় এখানে যে সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে তা মেনে নিয়েছে। এটি আমাদের বড় কূটনৈতিক অর্জন। শেখ হাসিনার আমলেই ক্লিনটন এসে গেছেন, ওবামাও এসেছেন। আসবেন হিলারি অথবা ট্রাম্পও (যিনি নির্বাচিত হন)। কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আজ ইতিহাস।

ঘুড়ে দাঁড়াতে হবে বাংলাদেশকেও। নিরাপত্তা-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদই আমাদের একমাত্র এজেন্ডা নয়। উন্নয়ন-পরিবেশ-মানবসম্পদ-পোশাকখাত-রপ্তানি ইত্যাদিকে সামনে রেখেই সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৬
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।