ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কাশ্মীর

মোদির প্রতিজ্ঞা, রাহিলের হুঙ্কার, লড়াই কি তবে বাধছেই?

রাইসুল ইসলাম, এডিশনাল আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬
মোদির প্রতিজ্ঞা, রাহিলের হুঙ্কার, লড়াই কি তবে বাধছেই?

ঢাকা: “গার ফিরদাউস বার রুই জমিন আস্ত
          হামিন আস্ত, হামিন আস্ত, হামিন আস্ত”
 
পৃথিবীর বুকে এক খণ্ড স্বর্গ, তার নাম কাশ্মীর। যার রূপে বিমুগ্ধ হয়ে বহুকাল আগে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর মনের অজান্তে বলে উঠেছিলেন কবিতার এই অমর লাইন।

যার অর্থ, ‘পৃথিবীতে যদি সত্যিই কোনো স্বর্গ থেকে থাকে, তবে তা এখানেই, তবে তা এখানেই,  তবে তা এখানেই’।

কিন্তু কাশ্মীর যেন রূপকথার সেই অপরূপ গোলাপ, যার পুরো শরীর কণ্টকাকীর্ণ বিষাক্ত কাঁটায়। তাকে পেতে হলে সইতে হবে কাঁটার আঘাত।

তবুও কে না পেতে চায় পৃথিবীর বুকের এই এক খণ্ড স্বর্গকে। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের কেউই তাই হারাতে চায় না কাশ্মীরকে।

ভূখণ্ডটিকে পুরোপুরি নিজের করে পেতে তিন তিনটি পুরোদস্তুর যুদ্ধ লড়েছে ভারত-পাকিস্তান। আর সীমান্তে ছোটোখাটো লড়াই যে কত হয়েছে তারও কোনো ইয়ত্তা নেই।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সঙ্কটাপূর্ণ ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। যার মূলে রয়েছে কাশ্মীর। ব্রিটিশ পরাধীনতা থেকে মুক্তির পরবর্তী সময়ে এই ভূস্বর্গকে ঘিরেই বহুবার সঙ্কটজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ দু’টি।
 
সেই ধারাবাহিকতায় নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন উরির সামরিক ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র ফের ইতিহাসের সন্ধিক্ষণের মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান দুই দেশ।

রোববার উরির ওই সুরক্ষিত ঘাঁটিতে চার জঙ্গির হামলায় মৃত্যু হয় ১৮ ভারতীয় সেনার। বিশ্বের অন্যতম সমর শক্তি ভারতের পক্ষে এই আঘাত সহ্য করা আসলেই খুব মুশকিল।

স্বভাবতই ভারতের মাটিতে আওয়াজ উঠেছে প্রতিশোধের। দাবি উঠেছে, একটি দাঁতের বিনিময়ে প্রতিপক্ষের পুরো চোয়ালটাই গুঁড়িয়ে দেয়ার। ভারতের দাবি, এই হামলা চালিয়েছে জঙ্গি সংগঠন জইশ ই মুহাম্মদ। আর তাদের মদদ দিয়েছে পাকিস্তান। বরাবরের মতই অভিযোগ অস্বীকার পাকিস্তানের। উল্টো এ হামলার জন্য ভারতীয়দেরই দায়ী করেছে ইসলামাবাদ।
 
আসলে উরির এই হামলাকে নিজেদের সম্মানের ওপর আঘাত হিসেবেই দেখছে নয়াদিল্লি। এ হামলার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
 
হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানের মাটিতে পাল্টা হামলা চালানোর দাবি জানাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে ভারতের সামরিক নেতৃত্বেরও একটি বড় অংশ।
 
পাকিস্তানের মাটিতে ভারত হামলা চালাতে পারে এই জল্পনা কল্পনা ইতোমধ্যেই চাউর হয়েছে উভয় দেশের রাজধানীর বিভিন্ন মহলে। হামলা হলে পাল্টা হামলার আওয়াজ দিয়ে রেখেছে পাকিস্তানও। এমনকি প্রয়োজনে পরমাণু হামলারও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন পাক সেনাপ্রধান রাহিল শরীফ।

দুই দেশের রথী মহারথীদের পাল্টাপাল্টি বাগযুদ্ধের মধ্যেই সীমান্তের দুই ধার সাজছে রণসজ্জায়, বাজছে রণ দামামা। তাহলে কি সত্যিই সত্যিই লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়বে দুই চিরশত্রু। আর আশঙ্কাকে সত্যি করে যদি আসলেই শুরু হয় পরমাণু যুদ্ধ। তাহলে কি হবে?

উরির হামলার প্রতিশোধে পুরোদস্তুর না হলেও কমপক্ষে পাকিস্তানের বিভিন্ন ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’তে সীমিত আকারে হলেও হামলার পক্ষে জোর সওয়াল করছেন ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের অধিকাংশই।

পাশাপাশি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশ জুড়ে চাপ বেড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপরে। সরকার এবং শাসক দলের কর্তাব্যক্তিরাও ‘দাঁতের বদলে চোয়াল’ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

ভারতীয় মিডিয়ার তথ্যসূত্রে জানা গেছে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও এর স্বপক্ষে। তাদের সমর্থন যোগাচ্ছে বিজেপির কট্টরপন্থী নেতারা।  

আরএসএস সংশ্লিষ্ট বিজেপির সিনিয়র নেতা রামমাধব বলেছেন, "তথাকথিত কৌশলগত কারণে সহ্য করার সময় শেষ হয়ে গেছে। " এমন মনোভাব পোষণ করেন অনেক শীর্ষ সাবেক কর্মকর্তারাও।  

তবে এই অবস্থানের কৌশলগত বিপদও আছে। কারণ পাকিস্তান আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, তাদের মাটিতে ভারতের যে কোনো ধরনের হামলাকে তারা বিবেচনা করবে সর্বাত্মক যুদ্ধ হিসেবে। আর এর জবাব দেয়া হবে সর্বোচ্চ শক্তি সহকারে। অর্থা‍ৎ পাকিস্তানের মাটিতে ভারতের যে কোনো হামলার পরিণতি হতে পারে সর্বাত্মক পরমাণু যুদ্ধ।

এই যখন পরিস্থিতি, তখন প্রশ্ন হলো কি হবে ভারতের অবস্থান?

আরও পড়ুন- উরির প্রতিশোধে মোদির রণকৌশল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।