ঢাকা: কূটনৈতিকভাবে একে অপরকে দেখে নেয়ার কথা বললেও তলে তলে সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করছে ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারত সেনা সমাবেশের পাশাপাশি ভারী অস্ত্রশস্ত্র মজুত করছে বলে জানা গেছে, দুই দেশের মিডিয়া সূত্রে।
বসে নেই পাকিস্তানও। নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন গ্রামগুলি থেকে লোক সরিয়ে সেখানে সেনা ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করছে তারা।
জানা গেছে, উরির যে ঘাঁটিতে হামলা হলো, সেই সেনা ছাউনির বিপরীতেই পাকিস্তানের জাওয়ন্দ বলে একটি গ্রাম রয়েছ। সেখান থেকে অধিবাসীদের সরিয়ে দিয়ে আপাতত ওই গ্রামের দখল নিয়েছে পাক সেনারা। পাশাপাশি ইসলামাবাদের আকাশে উড়তে দেখা যায় জঙ্গিবিমান। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে রানওয়ের পরিবর্তে রাস্তায় ফাইটার প্লেন নামানোর মহড়াও দিয়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ-লাহোর মহাসড়ক বন্ধ করে চলে ওই প্রশিক্ষণ।
পাকিস্তান এটিকে রুটিন প্রক্রিয়া বলে দাবি করলেও একে পাকিস্তানের যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে মনে করছে ভারত। পাকিস্তানকে পাল্টা চাপে রাখতে এ দিন ভারতও মিরাজ ২০০০ বিমান থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে মিকা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীও বসে নেই। পরিস্থিতি সামলাতে ধর্মশালা থেকে বাড়তি এক ব্রিগেড সেনা উরিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যে রাস্তা গিয়েছে, সেই রাস্তা ধরে শুরু হয়েছে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ।
তবে সীমান্তের দু’ধারে নিজেদের যুদ্ধপ্রস্তুতির বিষয়টি অস্বীকার করেছে দুই দেশই। দুই দেশেরই দাবি অপর পক্ষের রণ প্রস্তুতির মুখেই কেবল আত্মরক্ষামূলক অবস্থান নিতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
ইসলামাবাদের দাবি, নিয়ন্ত্রণরেখার নিকটবর্তী চৌকিগুলিতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ মোতায়েন করার কাজ শুরু করেছে ভারত। হামলার প্রস্তুতিতে মজুত করা হচ্ছে জ্বালানি তেল। পাক সংবাদমাধ্যমে এমনও অভিযোগ করা হয়েছে যে, যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ভারত নিয়ন্ত্রণরেখায় বোফোর্স কামান, ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে। আর এই সামরিক প্রস্তুতি দেখভাল করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং।
তবে পাকিস্তানিদের ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ভারত জানিয়েছে, উরি হামলার পর থেকেই জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে কাশ্মীরে। একই সঙ্গে ভারতের সীমান্ত চৌকি লক্ষ করে গুলি ছুড়ছে পাকিস্তানি সেনারাও। পাল্টা জবাব দিতেই ভারতকে নিয়ন্ত্রণরেখায় নিজের প্রস্তুতি বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, ভারত যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছে। বরং পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কাতেই জম্মু-কাশ্মীর-সহ গোটা পশ্চিম সীমান্তকে সতর্ক করা হয়েছে। । পাশাপাশি পাঞ্জাব ও রাজস্থান বরাবর সীমান্তেও প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি মনে করছে, আসলে ভারতীয় আক্রমণের আশঙ্কায় ভুগছে পাকিস্তান। তাই আগেভাগেই গ্রামগুলো খালি করে কৌশলগত অবস্থান নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চাইছে তারা। যেন অতর্কিতে ভারতীয়দের হামলা রোখা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৬
আরআই