পা দেবে কি করে? পুরো সৈকতটাই ছিলো যেন ময়লার ভাগাড়। ময়লা, আবর্জনা, প্লাস্টিক, ফিশিং ট্রলারের তেল, মৃত জীবজন্তুর দেহাবশেষ।
সৈকতের অাশপাশে গড়ে ওঠা বস্তিবাসীরাও নিশ্চিন্তে তাদের টয়লেট হিসেবে ব্যবহার করতো এই ভারসোভা সৈকতকে।
সব মিলিয়ে দুর্গন্ধ, ময়লা আবর্জনা এক প্রকার পরিত্যক্তই হয়ে পড়েছিলো সমুদ্র সৈকতটি। তাই পারতপক্ষে মুম্বাইয়ের ভদ্রসমাজের লোক পা রাখতো না এই সৈকতে।
বিষয়টি পীড়া দিতো সৈকত সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা আফরোজ শাহকে। বছর ৩৩ এর আফরোজ শাহ মুম্বাই হাইকোর্টের একজন আইনজীবীও বটে।
প্রতিবেশী ৮৪ বছর বয়সী হরবংশ মাথুরকে নিয়ে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে ভারসোভা সমুদ্র সৈকত পরিষ্কারের কাজে নামেন আফরোজ শাহ।
দু’জনে মিলে সারা দিন ধরে বিচের উপর পড়ে থাকা দুনিয়ার আবর্জনাময় প্লাস্টিক সরানোর কাজ করতেন।
তাঁদের দু’জনের উৎসাহ দেখে স্থানীয় সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষজনও সৈকত স্বচ্ছ করার কাজে হাত লাগাতে শুরু করেন। প্রায় ৩০০ জন এই অভিযানে যোগ দেন। পাশে দাঁড়ায় বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনও।
অবশেষে ৮৫ সপ্তাহ পর সফল হয় তাদের এই প্রচেষ্টা। এই সময়ের মধ্যে সৈকত থেকে প্রায় ৫ হাজার টন জঞ্জাল পরিষ্কার করেন তারা।
মুম্বাইবাসীর রেটিংয়ে এই মুহূর্তে নগরীর সবচেয়ে পরিষ্কার সমুদ্র সৈকত ভারসোভা বিচ। এমনকি মুম্বাইয়ের বিখ্যাত জুহু বিচও নাকি লজ্জা পাবে ভারসোভা বিচের পরিচ্ছন্নতার কাছে।
২০১৬ সালে এই স্বচ্ছতা অভিযানকে সম্মান জানায় জাতিসংঘ। ‘অ্যাকশন অ্যান্ড ইন্সপিরেশন’ বিভাগে জাতিসংঘের শীর্ষ সম্মান আর্থ অ্যাওয়ার্ড পান আফরোজ শাহ।
ভারসোভা বিচের আবর্জনাময় সেই ছবির পাশাপাশি এখানকার পরিষ্কার, ঝকঝকে সমুদ্র তটের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
বিষয়টি নজর এড়ায়নি বলিউডেরও। আফরোজ শাহ এর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে টুইট করেছেন রাভিনা ট্যান্ডন, অজয় দেবগণ, পুজা ভাট এর মত বলিউড সেলিব্রেটিরা।
বাদ যায়নি হলিউডও। অভিনেতা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও ইন্সটাগ্রামে একটি পোস্ট করেছেন ভারসোভা বিচকে নিয়ে।
আর আফরোজ শাহ বলছেন, ‘সাধারণ মানুষ একটু সচেতন হয়ে নিজেরাই বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখলে গোটা এলাকা, দেশ পরিষ্কার রাখা সম্ভব। ’
ঢাকার পাশে আরব সাগর নেই, তবে বুড়িগঙ্গা আছে। বুড়িগঙ্গাকেও কি আমরা এভাবে বদলে দিতে পারি না।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৭
আরআই