বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিকেল ৫টার কিছুক্ষণ আগে রামনাথকে রাষ্ট্রপতি পদে বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কমিশন জানায়, নির্বাচনে গৃহীত মোট ভোটের প্রায় ৬৬ শতাংশ পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন এ দলিত নেতা।
গত সোমবার (১৭ জুলাই) অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে। ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই দফায় দফায় প্রাপ্ত ফলাফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকছিলেন রামনাথ। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত ফলাফলে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়েই জিতে গেলেন তিনি।
আরও পড়ুন
** ‘রাষ্ট্রপতি পদে মহান দায়িত্ব’ পেয়ে আপ্লুত রামনাথ
** ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতিকে হামিদ-হাসিনার অভিনন্দন
** ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতিকে খালেদার অভিনন্দন
নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন লোকসভা ও বিধানসভার মোট ৪ হাজার ৮৯৬ সদস্য। এদের মধ্যে ৭৭৬ জন লোকসভা ও ৪ হাজার ১২০ জন বিধানসভার সদস্য। কেন্দ্রীয় সংসদ লোকসভা ও রাজ্যের সংসদ বিধানসভাগুলোতে বিজেপি জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় পর্যবেক্ষকরা রামনাথকেই শুরু থেকে এগিয়ে রাখছিলেন। ৭১ বছর বয়সী রামনাথ জন্মেছিলেন উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা তীরবর্তী কানপুরের পারাউখ গ্রামে এক কৃষক পরিবারে, ১৯৪৫ সালের ১ অক্টোবর। কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক হওয়ার পর আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৬ বছর দিল্লি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার পর ১৯৯৪ সালে তিনি বিজেপি প্রার্থী হিসেবে উত্তর প্রদেশ থেকে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সদস্য মনোনীত হন। এরপর একই দল থেকে টানা দু’বার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বিজেপির দলিত মোর্চার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন রামনাথ। সর্বভারতীয় কোলি-সমাজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা রামনাথ জাতিসংঘেও ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট তাকে বিহারের রাজ্যপাল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
রামনাথকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনের মাঠে প্রথমেই ‘মাস্টার স্ট্রোক’ খেলে দেন বলে জানায় সংবাদমাধ্যম। দলিত সম্প্রদায় থেকে বিজেপি যে প্রার্থী নিতে চলেছে, তার আভাস মিলছিল অনেক আগে থেকেই, কিন্তু নামটি সম্পর্কে মোটেই অবগত ছিল না কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধী শিবির। তাকে প্রার্থী করার পর বিহার, পশ্চিমঙ্গ, উত্তরপ্রদেশসহ অনেক অঞ্চলে বিরোধীদলগুলোতে ভাঙনের সূত্রপাত হয়। দলিত নেতা প্রার্থী হওয়ায় বিজেপির শিবিরেও হাওয়া বয়ে যায় বাড়তি সমর্থনের। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের দল জনতা দল (ইউনাইটেড) ও এমনকি শিবসেনাও এগিয়ে আসে রামনাথকে সমর্থনে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো আরও একীভূত হয় বিজেপি জোটের নেতৃত্বে।
তারা রামনাথকে প্রার্থী ঘোষণা করায় কংগ্রেস জোটও প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয় দলিত সম্প্রদায়ের আরেক রাজনীতিক ও লোকসভার সাবেক স্পিকার মীরা কুমারকে। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও খোদ প্রার্থী মীরা এ নির্বাচনকে ‘আদর্শের লড়াই’ বলে উল্লেখ করলেও শেষতক জয় হলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মাস্টার স্ট্রোক’ বলে পরিচিত প্রার্থী রামনাথেরই।
সকাল থেকেই রামনাথের বিজয়ের আভাস পেয়ে তার জন্মস্থান কানপুরের কাছে পারাউখ গ্রামে মিষ্টি বিতরণ শুরু হয়। আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার পর পুরো ভারতজুড়ে উৎসব করছে বিজেপি জোট। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার আগেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি হাওয়া আঁচ করে অভিনন্দন জানান নয়া রাষ্ট্রপতি রামনাথকে। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার পর নতুন রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। এছাড়াও অন্যান্য শীর্ষ নেতা, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও রুপালি পর্দার তারকারা রামনাথকে অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসাচ্ছেন।
কোচেরিল রমন (কে আর) নারায়ণনের পর দ্বিতীয় দলিত নেতা হিসেবে নির্বাচিত নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব বুঝে নেবেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বাঙালি রাজনীতিক প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে। আগামী ২৫ জুলাই মেয়াদ শেষে প্রণব বিদায় নিলে সেদিন শপথ নিয়ে কোবিন্দ পাঁচ বছরের জন্য উঠে যাবেন রাইসিনা হিলের ‘রাষ্ট্রপতি ভবনে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৭
এইচএ/
আগের সংবাদ
** রামনাথই ‘হচ্ছেন’ রাষ্ট্রপতি, বিকেলেই ফলাফল