বিজেপির হাত ধরে রাজনীতিতে নামলেও দেশ-দশের জন্য কাজ করছিলেন নিভৃতে। এমনকি বিহারের রাজ্যপাল পদে দায়িত্ব পালন করতে থাকলেও তেমন সামনে আসছিলেন না তিনি।
সেই সংগ্রামী-নিভৃতচারী মানুষটিই এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের রাষ্ট্রপতি। রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পছন্দের ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রার্থী হয়ে তিনি উঠতে চলেছেন এশিয়ার পরাশক্তি দেশটির ‘রাষ্ট্রপতি ভবনে’।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) রাষ্ট্রপতি পদে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণার পর সংগ্রাম-নিভৃতে চলার দিনগুলোর স্মৃতি আবেগে ছুঁয়ে গেছে তাকে। সেই আবেগ ঝরেছে তার রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেওয়া প্রথম ভাষণেও।
রামনাথ বলেন, এটা আমার জন্য অনেক আবেগঘন একটা মুহূর্ত। আমার মতো একজন ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া এ দেশের গণতন্ত্রের মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব।
বৃহস্পতিবার দিনভর দিল্লিজুড়ে বৃষ্টি ঝরতে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি তার শৈশবের স্মৃতিচারণ করেন, যখন তারা মাটির ঘরে (কুচ্চা) থাকতেন, বৃষ্টি হলে সেই ঘরের চালা চুইয়ে পানি পড়তো, আর ভাই-বোনেরা মিলে এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকতেন কখন বৃষ্টি নামে সে অপেক্ষায়। তখন কখনো কাদা গায়ে মেখে চলতে হতো, কখনো গন্তব্যে যাওয়ার প্রয়োজনে বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষা করতে হতো।
রামনাথ বলেন, আজ অনেক রামনাথ কোবিন্দই বৃষ্টিতে ভিজছে, অথবা কোথাও দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে হয়তো একটি বেলার খাবারের জন্য মাঠে কঠোর পরিশ্রম করছে। আমি সেই পরিশ্রমী মানুষদের প্রতিনিধি হয়েই আজ এখানে। এই নির্বাচন আসলে সেই পরিশ্রমী মানুষদের জন্যই বার্তা, যারা পরিশ্রম করে নিজের জীবিকা নির্বাহ করে।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার কোনো স্বপ্ন তিনি দেখেননি জানিয়ে রামনাথ বলেন, আমি কখনো চিন্তা করিনি আমি এই পদে নির্বাচিত হতে পারবো। চেয়েছি কেবল সমাজ ও দেশের সেবা করতে। দেশ আজ আমাকে এখানে এনে দিয়েছে, সেবার আরও বড় দায়িত্বে।
রাষ্ট্রপতির দায়িত্বকে ‘মহান’ হিসেবে উল্লেখ করে রামনাথ জানান, সাংবিধানিক দায়-দায়িত্ব পালনে তিনি সবসময় নিজেকে নিবেদিতপ্রাণ রাখবেন। কাজ করবেন দেশের আরও ভালো করার জন্য।
৭১ বছর বয়সী রামনাথ জন্মেছিলেন উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা তীরবর্তী কানপুরের পারাউখ গ্রামে এক কৃষক পরিবারে, ১৯৪৫ সালের ১ অক্টোবর। কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক হওয়ার পর আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৬ বছর দিল্লি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার পর ১৯৯৪ সালে তিনি বিজেপি প্রার্থী হিসেবে উত্তর প্রদেশ থেকে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সদস্য মনোনীত হন। এরপর একই দল থেকে টানা দু’বার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বিজেপির দলিত মোর্চার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন রামনাথ। সর্বভারতীয় কোলি-সমাজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা রামনাথ জাতিসংঘেও ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট তাকে বিহারের রাজ্যপাল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
রাজ্যপাল হিসেবেই দায়িত্ব পালনকালে তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী করে বিজেপি। এই নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিরোধী কংগ্রেস জোটের প্রার্থী লোকসভার সাবেক স্পিকার মীরা কুমার।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর মীরা কুমার অভিনন্দন জানিয়েছেন রামনাথকে। একইসঙ্গে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্ব নেতারা।
নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব বুঝে নেবেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বাঙালি রাজনীতিক প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে। আগামী ২৫ জুলাই মেয়াদ শেষে প্রণব বিদায় নিলে সেদিন শপথ নিয়ে কোবিন্দ উঠে যাবেন রাইসিনা হিলের ‘রাষ্ট্রপতি ভবনে’।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৭
এইচএ/