ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

শতকের শেষে বাংলাদেশে বাঁচার অনুপযোগী হয়ে যাবে তাপমাত্রা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৭
শতকের শেষে বাংলাদেশে বাঁচার অনুপযোগী হয়ে যাবে তাপমাত্রা তীব্র তাপদাহ থেকে বাঁচতে পানি পান করছেন এক শ্রমজীবী (পুরনো ছবি)

দক্ষিণ-এশিয়ায় এমনিতেই গরম মৌসুমে তীব্র তাপদাহে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ-পাকিস্তানও তাপদাহে হাঁসফাঁস করলেও উষ্ণতার বেশি জের গুনতে হয় ভারতকে। গেল গ্রীষ্মেও ভারতের কয়েকটি রাজ্যে কয়েকশ’ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

গবেষকরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বেপরোয়া পারদ আটকে না দিলে চলতি শতকের শেষ দিকেই পুরো দক্ষিণ এশিয়া বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। বিশ্বের মোট জনংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের এই অঞ্চলে উষ্ণতার ফলে এমন তাপদাহ হবে, মহামারি আক্রান্ত অঞ্চলের মতো মরতে থাকবে মানুষ।

 

বিশ্বের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুটেস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) সাবেক গবেষক ও হংকংয়ের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক ইউন-সুন ইমের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণা শেষে বিশেষজ্ঞরা এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। হুঁশিয়ারির আওতায় ভারতের পাশাপাশি রয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নামও। গবেষকদের তথ্য, কয়েক দশক পর থেকেই তাপদাহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে আঘাত হানতে থাকবে। আর শতকের শেষে গিয়ে দেখা যাবে পুরো অঞ্চলই বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রেরই প্রসিদ্ধ জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ বুধবার (২ আগস্ট) গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, প্রধানত ইন্দো-গাঙ্গেয় অববাহিকার কৃষিপ্রধান অঞ্চলগুলো এই উষ্ণতায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে ফসল উৎপাদনের ধারা পড়ে যাবে। যার ফলে জনবহুল অঞ্চলটিতে দেখা দেবে ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকারও।

অন্যান্য গবেষণা কেবল তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বাভাসের বিষয়ে চালানো হলেও এই গবেষণা দলটি আর্দ্রতা, এমনকি মানবদেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার বিষয়টিকেও বিবেচনায় নিয়ে কাজ করেছে।  

আর্দ্রতার পার্থক্যের কারণে মানুষের দেহে গরমের অনুভূতি কম-বেশি হয়। বাতাসের আর্দ্রতা বিবেচনায় পরিমাপ করা তাপমাত্রাকে ‘ওয়েট-বাল্ব টেম্পারেচার’ বলে। মানুষের দেহ সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওয়েট-বাল্ব টেম্পারেচার সহ্য করতে পারে। এর চেয়ে বেশি হলেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায় মানুষের দেহ, এমনকি বিপাকক্রিয়াজনিত তাপে ঘাম ঝরলেও। আর এই তাপমাত্রায় যদি আর্দ্রতা বেশি থাকে, তাহলে ঘাম শুকোতে পারে না, যে কারণে শরীর গরম হতেই থাকে। এভাবে সর্বোচ্চ ৬ ঘণ্টা পরিস্থিতি সামলালেও পরে মানুষের দেহ পরিস্থিতির কার্যকর প্রতিক্রিয়া দিতে অক্ষম হয়, যার ফলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে। ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির চিত্রএখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ওয়েট-বাল্ব তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস খুব কম সময়ই ছাড়িয়েছে। যদিও এই তাপমাত্রাই শ্রমজীবী ও খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী মানুষগুলোর জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু কার্বন নিঃসরণসহ অনেক মনুষ্যসৃষ্ট কারণে উষ্ণতা ক্রমেই বাড়তে থাকায় এই উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছেন গবেষকরা।

গবেষণা দলের বিশেষজ্ঞ ও এমআইটির অধ্যাপক এলফেইথ এলতাহির বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আসলে কেবল বিমূর্ত ধারণা নয়। এটা সত্যিই বিপুলসংখ্যক বিপদাপন্ন মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে। তাপমাত্রা প্রাণঘাতী তাপদাহের ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ইন্দো-গাঙ্গেয় অববাহিকায় থাকা ভারতের উত্তরাঞ্চল, পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চল এবং বাংলাদেশ—যেখানে কিনা দেড়শ’ কোটি মানুষের বসবাস—তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই জলবায়ু পরিবর্তনে।

বর্তমানে গরম মৌসুমে ভারতের জনসংখ্যার ২ শতাংশ তীব্র তাপদাহের কবলে পড়ে। ২০১৫ সালে দেশটিতে তাপদাহে মারা যায় ৩৫০০ মানুষ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনে উষ্ণতা বাড়তে থাকলে শতাব্দী শেষে ৭০ শতাংশ ভারতীয়কে মুখোমুখি হতে হবে তীব্র তাপদাহের। এর ফলে যেমন মানুষ মারা পড়তে থাকবে, তেমনি লাখে লাখে মানুষকে তাদের আবাস ছাড়তে হবে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, দ্বাবিংশ শতক নাগাদ বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ এলাকা হবে উপসাগরীয় অঞ্চল অর্থাৎ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমান ও ইরান। কিন্তু আর্থিক সক্ষমতার কারণে তাদের তাপদাহ মোকাবেলার প্রস্তুতি কিছুটা রয়েছে বলে মনে করা হয়। যদিও কার্বন নিঃসরণ কমাতে পুরো বিশ্বের মতো তাদেরও জরুরি ভিত্তিতে এগিয়ে আসা দরকার।

ভারতের মহারাষ্ট্রের একটি এলাকায় খরায় মেঠোপথে হেঁটে যাচ্ছেন দুই নারীগত মাসেই পাকিস্তানে দক্ষিণ এশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা আলোচনায় বসেন। সেখানে তারা তাপদাহের সংক্ষিপ্ত ও তাৎক্ষণিক মোকাবেলায় বিশেষ কক্ষ স্থাপনসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করেন।

অবশ্য এরইমধ্যে গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরে তাপদাহ মোকাবেলায় একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরুও হয়েছে। ৫৫ লাখ জনগোষ্ঠীর শহরটির কর্তৃপক্ষ বিপদাপন্ন অঞ্চল চিহ্নিত করে অনেক এলাকার মঠ-মন্দির, সরকারি স্থাপনা ও শপিং মলে গরম মৌসুমে ব্যবহারের জন্য ‘কুলিং স্পেস’ নির্মাণ করেছে।

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর দাবির মুখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুমোদন করলেও এটি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তিতে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার চেষ্টায় কার্বন নিঃসরণ কমানোয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। কিন্তু প্রায় ২০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণে দায়ী যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এ চুক্তি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।