বিবিসি উর্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কথা বলছিলেন ১৯৯৯ সালে সেনাঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান শাসন করা এই জেনারেল। পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির মামলায় প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে নওয়াজ শরিফের বিদায়ের প্রেক্ষিতে দেশে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে এই সাক্ষাৎকার দিলেন পারভেজ মোশাররফ।
তিনি বলেন, পুরো এশিয়া দেখেছে—পাকিস্তানে উন্নয়ন হয়েছে সামরিক শাসকদের আমলেই। সামরিক সরকার নাকি বেসামরিক সরকার রাষ্ট্র চালালো, জনগণ এ নিয়ে মাথা ঘামায় না, তারা চায় উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি।
কয়েকটি সরকারের উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে মোশাররফ বলেন, সবসময় পাকিস্তানে সামরিক শাসকরা দেশকে উন্নয়নের সড়কে তুলেছেন এবং সেই উন্নয়ন জলে ভাসিয়ে দিয়েছেন বেসামরিক শাসকরা।
‘যদি রাষ্ট্রের সম্পত্তিই না থাকলো, তাহলে এই নির্বাচন করে এবং স্বাধীনতা দিয়ে লাভ কী?’—উল্টো প্রশ্ন করেন পারভেজ মোশাররফ।
একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙনের প্রসঙ্গ এলে সাবেক এই জেনারেল সরাসরি দোষারোপ করেন তৎকালীন সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল পিপিপির প্রধান ভুট্টোকে। তিনি রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল করেছেন বলেই সেইসময় পাকিস্তান ভেঙে (বাংলাদেশের স্বাধীনতা) যায় বলে মন্তব্য করেন মোশাররফ।
নিপীড়িত ও অধিকার বঞ্চিত বাঙালির দল আওয়ামী লীগ সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পরও তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাষ্ট্রের বিলম্বের পেছনে সেসময় ভুট্টোর কূটচাল ছিল বলেই ইঙ্গিত মেলে পারভেজ মোশাররফের ওই মন্তব্যে। যার জেরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ‘বাংলাদেশ’ নামে দক্ষিণ এশিয়ায় এক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
পারভেজ মোশাররফ বলেন, প্রয়াত জেনারেল আইয়ুব খানের ১০ বছরের নেতৃত্বে পাকিস্তানে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও ভুট্টোর কারণে পাকিস্তান ভেঙে যায়। উন্নয়নের ধারা থেকে ছিটকে পড়ে।
আরেক সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের পক্ষে সাফাই গেয়ে পারভেজ মোশাররফ বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানকে সহযোগিতায় তার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
যদিও জেনারেল জিয়ার প্রায় এক যুগেরও বেশি শাসনকালে পাকিস্তানকে ধর্মীয় মৌলবাদের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে দেশটিতে অভিযোগ রয়েছে।
১৯৯৯ সালে সেনাঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা দখলের সাফাই গেয়ে তিনি বলেন, জনগণ সেসময় আমাকে এসে বলছিল নির্বাচিত সরকার থেকে তাদের বাঁচাতে। জনদাবির মুখেই আমি সরকারের দায়িত্ব নিই। কেবল সংবিধান বাঁচাতে গিয়ে আমরা পুরো দেশকে ধ্বংসে ঠেলে দিতে পারি না।
ভারতের প্রতি নওয়াজের নমনীয়তার সমালোচনা করে পারভেজ মোশাররফ অভিযোগ করেন, নওয়াজ ভারতের কাছে ‘সব বেচে দেওয়ার’ নীতি নিয়েছেন, এরমধ্যে রয়েছে বেলুচিস্তানও।
যারা পাকিস্তানের কল্যাণের বিরুদ্ধে কাজ করবে তাদের নির্মূল করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো হত্যা মামলার এ স্বেচ্ছা-নির্বাসিত আসামি।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৭
এইচএ/