রোববার (২৭ আগস্ট) পুলিশের রোহটাক রেঞ্জের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নভদীপ সিং বির্ক জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা না পেলেও তারা ধারণা করছেন সোমবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ সাজা ঘোষণা শুরু হবে। তার আগে সিবিআই আদালতের বিচারক জগদীপ সিংকে হেলিকপ্টারে রোহটাক কারাগারে উড়িয়ে আনা হবে।
আরও পড়ুন
** কে এই ধর্মগুরু রাম রহিম সিং?
** হরিয়ানায় গুরুর সম্পত্তি থেকে হতাহতদের ক্ষতিপূরণের আদেশ
** ধর্ষণে দোষী গুরমিত রাম রহিম, ভারতজুড়ে সতর্কতা
** হরিয়ানায় গুরু-ভক্তদের তাণ্ডবে নিহত ৩১, সতর্কতায় দিল্লি
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সাজা ঘোষণার জন্য রাম রহিমকে আদালতে নেওয়া হবে না, খোদ আদালতকেই কারাগারে নিয়ে আসা হবে। তাছাড়া, কেন্দ্রীয় সরকার এরইমধ্যে বিচারক জগদীপ সিংকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে হরিয়ানা সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছে।
সাজা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাম রহিমের আবাসস্থল সিসরা, পঞ্চকুলা, কারাগার এলাকা রোহটাকসহ পুরো হরিয়ানা, পাশ্ববর্তী পাঞ্জাব, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে কড়া নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। গোটা ভারতকেও রাখা হয়েছে সতর্কতায়। বিশেষত কারাগারকেন্দ্রিক রোহটাকজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রোহটাক শহর থেকে যে সড়কটি কারাগার অভিমুখে গেছে, সেটি এবং কারাগার চত্বর ঘিরে রেখেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও হরিয়ানা পুলিশের সদস্যরা। সাজা ঘোষণার দিন কাউকেই আশপাশে, এমনকি হরিয়ানার রাস্তায় দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।
সংবাদমাধ্যম বলছে, কারাগার এলাকাকে শান্তিপূর্ণ রাখতে মোট ২৮ কোম্পানি আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। আপাতত সেনাবাহিনী রাস্তায় না নামলেও তাদেরও রাখা হয়েছে প্রস্তুত। সাজা ঘোষণার আগের দিন রোববার পঞ্চকুলাসহ হরিয়ানার বিভিন্ন স্থানে রাম রহিমের ভক্তদের তাদের আস্তানা থেকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে, যেন সাজা ঘোষণা হলে সংঘবদ্ধ হয়ে কেউ সহিংসতা চালাতে না পারে।
তবে রাম রহিমের কথিত সমাজকল্যাণমূলক ও আধ্যাত্মিক সংগঠন ‘ডেরা সাচা সৌদা’র সিসরার সদরদফতরে রোববারও হাজার ত্রিশেক ভক্ত জড়ো ছিলেন। যদিও এই সদরদফতর ঘিরেও কড়া অবস্থান নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। দিল্লির রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনালগুলোতেও সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য প্রশাসন আশা করছে, দোষী সাব্যস্ত করার পর রাম রহিমের ভক্তরা ৩৫ জনের প্রাণঘাতীমূলক যে সহিংসতা চালিয়েছেন, তা সোমবার চালাতে পারবেন না। সেজন্য তাদের সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এমনকি হাইকোর্টও। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বিঘ্ন রাখার স্বার্থে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেছেন হাইকোর্ট।
ভারতজুড়ে রাম রহিমের কোটি ‘ভক্ত’ রয়েছে বলে মনে করা হয়। তিনি একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও নির্মাতা পরিচয় দিয়ে থাকেন নিজেকে। তার ‘ডেরা সাচা সৌদা’ গঠিত হয়েছে হিন্দু, মুসলিম, শিখসহ সব ধর্মের চেতনা মিশিয়ে।
অনুসারীদের মধ্যে ওই দুই নারীকে রাম রহিম ১৯৯৯ সালে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ তদন্তের ভিত্তিতে ২০০২ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সিবিআই। এরপর সেই মামলার বিচার করতে হরিয়ানারই পঞ্চকুলায় বিশেষ আদালত স্থাপন করা হয়। ২০০৭ সালে শুনানি শুরুর মাধ্যমে দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে শুক্রবার রায় ঘোষণা হয়।
এই রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পঞ্চকুলায় স্থাপিত সিবিআই’র আদালত ঘেঁষে তাণ্ডব চালায় রাম রহিমের অনুসারীরা। প্রাণ যায় ৩৫ মানুষের। আহত হয় দুই শতাধিক লোক। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েকশ’ কোটি রুপির সম্পদ। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারার জন্য হরিয়ানা রাজ্য সরকার, এমনকি দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারকেও সমালোচনায় পড়তে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
এইচএ/