তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কী ঘটছে তার জন্য দায়িত্ব নিতে হবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে।
রাশিয়া সফররত বাদশা সালমান বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) মস্কোতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সময় এ কথা বলেন।
তবে সংকট সমাধানে করণীয় কী তা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে। তবে রাশিয়ায় গিয়ে রোহিঙ্গাদের কথা বলাকে অনেকে দেখছেন ‘ইতিবাচক’ হিসেবে। এই ইস্যুতে সৌদি তেমন কোনো মন্তব্যে নেই, তবে ত্রাণ পাঠিয়েছে। এদিকে রাশিয়ার সমর্থন পুরোপুরি মিয়ানমারের পক্ষে। রুশরা মনে করছে, রাখাইনে যা হচ্ছে তা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। জাতিসংঘেও ‘গণহত্যার পক্ষে’ কথা বলেছে রাশিয়া।
ইতোমধ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য সৌদি আরব থেকে এসেছে ৯৪ টন ত্রাণ। আরও মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি তাদের মন্ত্রিপরিষদেও আলাপ হয়েছে এই ইস্যুতে।
সৌদি-রুশ বৈঠকে ইরাক থেকে কুর্দিস্তানের স্বাধীন হওয়ার বিষয়েও কথা হয়। বাদশা সালমান বলেন, অবশ্যই ইরাকের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।
এ সময় তিনি সিরিয়ার অখণ্ডতার কথাও উল্লেখ করেন। সিরিয়া যেন টুকরো না হয়, সে জন্য রাশিয়ার সহযোগিতা চান তিনি।
বৈঠকে দু’নেতা বাণিজ্য ইস্যুতে চুক্তির বিষয়ে আলাপ করেন।
সালমান বিন আব্দুলআজিজ আল সৌদের সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে। তিনদিনের সফরে তিনি দেশটিতে রয়েছেন। ফিরবেন শনিবার (০৭ অক্টোবর)। সৌদির কোনো বাদশার এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রীয় সফর এটি।
এর আগে পুতিন ২০০৭ সালে রিয়াদ সফর করেন। এছাড়া ২০১৫ সালে সালমানের সঙ্গে পুতিনের সাক্ষাৎ হয় তুরস্কে এক আয়োজনে। সালমান ২০০৬ সালে বাদশা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে মস্কো ভ্রমণ করেছিলেন।
এদিকে বাংলাদেশে দিন দিন প্রকট হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো সেভাবে কার্যকর কিছু করতে পারছে না বা করছে না। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলছে, রাখাইনে সহিংসতা ও গণহত্যার জেরে এখন পর্যন্ত পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা পাঁচ লাখ সাত হাজার ১২৫ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখ ছাড়িয়েছে। যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। সহিংসতায় প্রাণ গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষের। বেসরকারিভাবে এই সংখ্যা দশ হাজার পার করেছে মধ্য সেপ্টেম্বরেই। কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদল সেখানে কাজ করার সুযোগ না পাওয়ায় নতুন তথ্য জানা যাচ্ছে না।
ঘটনার শুরু গত ২৪ আগস্ট দিনগত রাতে রাখাইনে যখন পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জেরে ‘অভিযানের’ নামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ফলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসছেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবরেও প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৭
আইএ