শুক্রবার (৬ অক্টোবর) কাতালোনিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত স্প্যানিশ সরকারের প্রতিনিধি এনরিক মিলো এই দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তিনি দাবি করেন, পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বিধায় ওই দুঃখজনক ঘটনাগুলো ঘটে।
এনরিক মিলো কাতালান আঞ্চলিক সরকারকে ঘটনার জন্য দোষারোপ করে বলেন, অবৈধ গণভোট আয়োজন করে তারাই এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
তার এই দুঃখ প্রকাশের আগে মাদ্রিদ সরকারের তরফ থেকে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়, যেখানে কাতালোনিয়া থেকে সদরদফতর সরানোর জন্য কোম্পানিগুলোর রাস্তা সহজ করে দেওয়া হয়।
১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গণভোটের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ ও দফায় দফায় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় বলেন, গণভোট আয়োজন ও এর ফলাফল মানে না স্প্যানিশ জনগণ।
গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলেও জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে গণভোটকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দেন।
তার ভাষণের আগে ও পরে কাতালান প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুইগডেমন্ট ইঙ্গিত দেন, তারা সামনের সপ্তাহের শুরুতেই (৯ অক্টোবর) স্বাধীনতার প্রস্তাব ওঠাবেন আঞ্চলিক সংসদে। সেখানেই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালত কাতালানদের স্বাধীনতা ঘোষণা রুখতে ৯ অক্টোবরের সংসদ অধিবেশনে স্থগিতাদেশ দেন।
এরপরও কাতালান পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক প্রধান রাউল রোমেভা বলেন, সংসদ বসবেই, সংসদ আলোচনা করবেই। তারা সবসময়ই আমাদের বাধা দিয়ে আসছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত অপদার্থ প্রমাণ করছে নিজেদের এবং জবাবও পাচ্ছে।
কাতালান সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সাংবিধানিক আদালত ৯ অক্টোবরের সংসদ অধিবেশনে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় পরের দিন ১০ অক্টোবর সংসদে ভাষণ দেবেন প্রেসিডেন্ট পুইগডেমন্ট। সেদিন হয়তো আসতে পারে ‘বিশেষ’ ঘোষণা।
স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কাতালোনিয়ায় রয়েছে ৭৫ লাখ মানুষের বসবাস, যা স্পেনের মোট জনগণের ১৬ শতাংশ। স্পেন থেকে যা রফতানি হয়, তার ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ রফতানি হয় এই অঞ্চল থেকে। স্প্যানিশ জিডিপিতে কাতালোনিয়ার অবদান ১৯ শতাংশ। স্পেনে বিদেশি বিনিয়োগের ২০ দশমিক ৭ শতাংশ যায় এই অঞ্চলে।
নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির কাতালানরা সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ভোগ করলেও সাংবিধানিকভাবে পৃথক রাষ্ট্র হতে চায়। এখানকার আঞ্চলিক সরকার গত প্রায় পাঁচ বছর ধরেই আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চাপ হজম করছে জনগণের। ২০১৫ সালের আঞ্চলিক নির্বাচনে স্বাধীনতাকামী দল বিজয়ী হলে এই চাপ আরও স্পষ্ট হয়।
তবে স্বাধীনতার দাবিতে কাতালানরা সরব হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতা করে আসছে স্প্যানিশরা। এই বিরোধিতার মধ্যেই ২০১৪ সালে কাতালানরা পরীক্ষামূলক গণভোট করলে তার ফলাফলকে উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী রাজয়। তিনি সেসময় বৈধ উপায়ে গণভোট আয়োজনের আবদারও না মানার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত গণভোটের পর এখন মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার তৎপরতার দিকেই নজর ইউরোপসহ বিশ্ববাসীর।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৭
এইচএ/
আরও পড়ুন
** স্বাধীনতা ঘোষণা রুখতে কাতালান সংসদ অধিবেশনে স্থগিতাদেশ
** স্পেনের রাজার সমালোচনায় কাতালান প্রেসিডেন্ট
** ক’দিনের মধ্যেই স্বাধীনতা ঘোষণা করবে কাতালোনিয়া?
** ‘স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অধিকার জিতে গেছে কাতালানরা’
** কাতালোনিয়ায় সংঘর্ষে আহত ৭৬১, ধর্মঘটের ডাক
** কাতালোনিয়ায় গণভোট নিয়ে সংঘর্ষে আহত তিন শতাধিক
** কাতালানদের স্বাধীনতার গণভোট রোববার, বার্সেলোনায় র্যালি