বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের পুত্র ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে শনিবার (৪ নভেম্বর) দুর্নীতি দমন পরিষদটি গঠনের কয়েকঘণ্টা পর এই ধরপাকড় হয়। পাশাপাশি বাদশাহ বরখাস্ত করেছেন কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীকেও।
কী অভিযোগে বা কোন সন্দেহ থেকে এই নেতা-রাজনীতিকদের আটক করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু স্পষ্ট বলা না হলেও সৌদির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়া বলেছে, নবগঠিত দুর্নীতি দমন পরিষদ ২০০৯ সালে জেদ্দাকে তলিয়ে দেওয়া বন্যা ও ২০১২ সালে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী মার্স ভাইরাস মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কার্যক্রমের তদন্ত শুরু করেছে। সেজন্য ধারণা করা হচ্ছে, ধরপাকড় ও বরখাস্তকৃত যুবরাজ-মন্ত্রীরা এসব বিভাগেরই দায়িত্বে ছিলেন।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে আটক কারও নামই প্রকাশ করা না হলেও বিভিন্ন সূত্রের বরাতে বিদেশি সংবাদমাধ্যম বলছে, ধরপাকড়ের শিকার মন্ত্রী-যুবরাজদের মধ্যে প্রখ্যাত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ‘কিংডম হোল্ডিং’র মালিক বিলিওনিয়ার প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালালও রয়েছেন।
আর সৌদি বাদশাহর বিশেষ অধ্যাদেশে বরখাস্তকৃতদের মধ্যে রয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর ‘হোয়াইট আর্মি’ খ্যাত ‘সৌদি আরাবিয়া ন্যাশনাল গার্ড’র প্রধান প্রিন্স মেতেব বিন আবদুল্লাহ, নৌবাহিনীর কমান্ডার আবদুল্লাহ আল-সুলতান ও অর্থমন্ত্রী আদেল ফকিহ। সুলতানের জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ ফাহাদ আল-গাফলিকে।
মেতেব, আবদুল্লাহ ও আদেলকে বরখাস্ত করা হয়েছে রিয়াদের বাদশাহ খালেদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইয়েমেনের শিয়াপন্থি হুথি বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র ‘হামলাচেষ্টা’র পর। সেজন্য ধরপাকড় ও বরখাস্ত করার ঘটনা দু’টির মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে কি-না, এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যম কিছু বলছে না।
তবে বিশ্লেষকরা ঘটনা দু’টিকে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা বাড়ানোরই পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। গত জুনে বাদশাহ সালমান তার ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফ বিন আব্দুল আজিজকে সরিয়ে নিজ পুত্র মোহাম্মদকে ক্রাউন প্রিন্স মনোনীত করেন। এতে মোহাম্মদের পরবর্তী বাদশাহ হিসেবে সিংহাসন আরোহণের পথ সুগম হয়ে যায়।
মোহাম্মদ ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সরকারে একের পর এক পরিবর্তন আসতে থাকে। সম্প্রতি মোহাম্মদ ঘোষণা দিয়েই বলেন, সৌদিকে ‘আধুনিক’ ইসলাম ও উন্নত অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তারই অংশ হিসেবে নারীদের ওপর থেকে গাড়ি চালনায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। তুলে নেওয়া হয় নারীদের স্টেডিয়ামে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞাও।
ধারণা করা হচ্ছে, এই সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ক্রাউন প্রিন্সের নির্দেশনায় সরকারে এই বড় ‘পরিবর্তন’ এলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭
এইচএ/