রোম: যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালস্ট্রিট বিরোধী বিক্ষোভ গত শনিবার সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর রোববার ইতালির রাজধানী রোমে বিক্ষোভ ভয়াবহ সংঘর্ষের রূপ নিয়েছে।
ব্যয় সংকোচন ও ব্যাংকিং ব্যবসার বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছে রোমাবাসী।
গত শনিবার ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া এবং আফ্রিকার ৮২টি দেশের ৯৫১টি প্রধান শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে। অস্ট্রেলিয়াতে কয়েক লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিল বলে জানা গেছে।
অর্থনৈতিক বৈষম্য, বেকারত্ব, দুর্নীতি, পুঁজিবাদের লাগামহীন দৌরাত্ম্য এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছে মানুষ।
এদিন নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে অশ্বারোহী পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন অংশ থেকে কমপক্ষে ৭৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
রোম থেকে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর একাধিক স্থানে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষে অনেকেই আহত হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ২০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন।
রোম পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন রাস্তা থেকে অবিস্ফোরিত অবস্থায় পেট্রোল বোমা উদ্ধার করেছে।
এদিকে ভ্যাটিকানের মুখপাত্র ফেদেরিকো লোমব্রাদি জানিয়েছেন, আঠারো শতকে নির্মিত সান্তি মারসেলিনো এবং পিয়েত্রো গির্জা বিক্ষোভকারীরা ‘অপবিত্র’ করেছে।
গির্জার যাজক জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা কুমারি মেরির একটি মুর্তি রাস্তায় ছুড়ে ফেলে গুড়িয়ে দিয়েছে।
এই সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি বলেছেন, ‘যারাই এই সহিংসার জন্য দায়ী তারা অবশ্যই সবার দ্বারা নিন্দিত হবে। ’
রোববার ইতালির একাধিক শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, লন্ডনের প্রায় ২৫০ জন প্রতিবাদকারী নিউইয়র্কের ওয়ালস্ট্রিট বিরোধীদের অনুকরণে সেন্ট পল ক্যাথেড্রালের বাইরে তাবু গেড়ে অবস্থান শুরু করেছে।
লন্ডনে প্রতিবাদকারীদের একজন জেন ম্যাকইনটায়ার একটি বার্তা সংস্থাকে বলেন, ‘জনগণ বলছে, যথেষ্ট হয়েছে, আমরা একটি সত্যিকারের গণতন্ত্র চাই। ’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ বিক্ষোভের বিষয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এভাবে প্রতিবাদ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। ’ তবে তিনি স্বীকার করেন, বিভিন্ন রাষ্ট্রের অতিরিক্তি ঋণের বোঝা জনগণের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলেছে। এ জন্য তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক, রাজধানী ওয়াশিংটনসহ আরও কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসের সিটি হলে ৫ হাজার এবং পিটসবার্গে ২ হাজার মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
এছাড়া শনিবার বিশ্বের আর যেসব শহরে বিক্ষোভ হয়েছে-
সবচে বড় বিক্ষোভ সমাবেশটি হয়েছে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের পুয়েত্রা দেল সোল স্কয়ারে। ১০ হাজারেও বেশি মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে বিক্ষোভে অংশ নেয়।
পর্তুগালের লিসবনে ২০ হাজার মানুষের মিছিল হয়েছে। একই সংখ্যক মানুষ অপোরতো শহরেই জড়ো হয়েছিল।
গ্রিসে রাজধানী এথেন্সে পার্লামেন্টের বাইরে ২ হাজার মানুষ র্যালি করেছে। একই সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়েছিল থেসালোনিকি শহরে।
এছাড়া, কানাডার টরোন্টো, হালিফ্যাক্স ও ভ্যাংকুভার, মেক্সিকো, পেরু, চিলি, জাপানের রাজধানী টোকিও, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এবং চীনের হংকংয়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১১