ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

গাদ্দাফির পরিবার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১১
গাদ্দাফির পরিবার

ঢাকা: লিবিয়ার শাসন ক্ষমতায় ৪২ বছর ধরে আঁকড়ে থাকা মুয়াম্মার গাদ্দাফির জন্ম ১৯৪২ সালে এক দরিদ্র বেদুইন পরিবারে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর গাদ্দাফি মাত্র ২৭ বছর বয়সে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাদশাহ প্রথম ইদ্রিসকে ক্ষমতাচ্যু করে দেশের শাসনভার নেন।

নিজের লেখা ‘গ্রিন বুক’-এ তার রাজনৈতিক দর্শনের পরিচয় পাওয়া যাবে। এতে তিনি সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ ও ইসলামের সমন্বয়ের কথা বলেছেন।

গাদ্দাফির প্রথম স্ত্রী ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষিকা। বিয়ের আগে তাদের কখনো দেখা হয়নি বলে জানা যায়। এই স্ত্রীর ঘরে একমাত্র পুত্র মোহাম্মদ। কিন্তু ছয়মাসের মাথায় প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয় তার।
 
দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম সাফিয়া আল-গাদ্দাফি। সাফিয়ার ঘরে গাদ্দাফির সাত সন্তান। তারা ‘মিলাদ’ এবং ‘হান্না’ নামের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে শিশু দত্তক নেন। হান্না ১৯৮৬ সালে চার বছর বয়সে ত্রিপোলিতে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলায় প্রাণ হারায় বলে জানা যায়।

তবে গত আগস্টে ত্রিপোলি পতনের পর এমন কিছু নথি পত্র উদ্ধার করা হয়েছে যাতে প্রমাণ রয়েছে গাদ্দাফির ওই দত্তক মেয়ে নিহত হননি। তিনি ত্রিপোলি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন।

প্রথম পুত্র মোহাম্মদ আল-গাদ্দাফি লিবিয়ার অলিম্পিক কমিটির প্রধান। ত্রিপোলিতে এর প্রধান কার্যালয়। তিনি জেনারেল পোস্ট অ্যান্ড টেলিকম কোম্পানির চেয়ারম্যান। এই কোম্পানি মোবাইল ফোন এবং স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনস কার্যক্রম চালায়।

দ্বিতীয় পুত্র সাইফ আল ইসলাম আল-গাদ্দাফি (৩৮): অনর্গল ইংরেজি বলায় পারদর্শী সাইফ লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন। তিনি ২০০৬ এ তার পিতার শাসনামলের সমালোচনা করে দেশ ছাড়েন। কিন্তু পরে আবার দেশে ফেরেন। তাকে আধুনিক লিবিয়ার মুখ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু ২০০৮ এ তিনি  ঘোষণা করেন যে, পিতার উত্তরাধিকারী হওয়ার কোনো ইচ্ছে তার নেই।

আবার লিবিয়ায় বিদ্রোহ শুরুর পর বাবা গাদ্দাফির ক্ষমতা ত্যাগ করার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তিনি। বিদ্রোহের প্রথম দিকে টেলিভিশনে বলেছেন, ক্ষমতা ছাড়লে দেশ গৃহযুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যাবে।

তৃতীয় পুত্র সাদি গাদ্দাফি (৩৬): সাদি গাদ্দাফির দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। সেনাবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মেয়েকে বিয়ে করেছেন তিনি। সাবেক ফুটবলার সাদি ইতালিতে অল্প কিছুদিন চাকরি করেছেন। লিবিয়ার জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার পর তিনি দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। একশ মিলিয়ন ডলারের একটি সিনেমার তহবিলও সংগ্রহ করেছিলেন সাদি। তার এই প্রথম সিনেমাটি হওয়ার কথা ছিল জার্মান ছবি ‘দি এক্সপেরিমেন্ট’-এর রিমেক। তবে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না গাদ্দাফিপুত্রের।

চতুর্থ পুত্র মুতাসিম গাদ্দাফি: মুতাসিম সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন। পিতার বিরুদ্ধে  ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিযুক্ত হন।
 
পঞ্চম পুত্র হান্নিবেল গাদ্দাফি: তিনি জাতীয় সমুদ্র পরিবহন কোম্পানির প্রধান ছিলেন। এই কোম্পানি তেল রপ্তানি নীতি ও বাস্তবায়ন বিষয়ে কাজ করে। তিনি অনেক সহিংস ঘটনার দায়ে অভিযুক্ত। ২০০৫ এ প্যারিসে বসে গর্ভবর্তী  বান্ধবীকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। ২০০৮ এ জেনেভার একটি হোটেলে দু’জন চাকরকে পেটানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হন হান্নিবেল। পরে অবশ্য জামিনে মুক্তি পান। সেই থেকে লিবিয়া সুইস পণ্য বর্জন করে। ত্রিপোলিতে নিযুক্ত কূটনীতিককে ডেকে পাঠানো হয় এবং সব সুইস কোম্পানিকে লিবিয়া ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সাইফ আল-আরব: ষষ্ঠ পুত্র সাইফ আল-আরব সম্পর্কে খুব কম তথ্যই পাওয়া যায়। টেফিগ্রাফের এক রিপোর্টে জানা যায়, ২০০৮ এ উচ্ছৃঙ্খলভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে জার্মান পুলিশ তার গাড়ি জব্দ করে। তিনি সম্ভবত তখন মিউনিখে পড়ছিলেন।

খামিস গাদ্দাফি: সপ্তম পুত্র খামিস গাদ্দাফি পুলিশ অফিসার। বেনগাজিতে বিক্ষোভ দমনের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।

আয়েশা আল-গাদ্দাফি: আয়েশা গাদ্দাফির কন্যা। ৩৪ বছর বয়সী আয়েশা পেশায় একজন আইনজীবী । তিনি ক্ষমতাচ্যুত ও পরে ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের আইনজীবি ছিলেন। ২০০৬ এ আয়েশা তার বাবার চাচাতো ভাইকে বিয়ে করেন।

মিলাদ আল-গাদ্দাফি: পালিত পুত্র এবং ভাগ্নে। ১৯৮৬ সালে লিবিয়াতে গাদ্দাফিকে বোমা হামলা থেকে রক্ষা করেন মিলাদ।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।