সিরতে: একটি ড্রেনেজ পাইপের মধ্য থেকে হাত তুললেন আহত লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি। হাত তুলে বিদ্রোহী সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন, ‘আমাকে হত্যা করো না, আমার সন্তানেরা।
অবশ্য দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিব্রিল দাবি করেছেন, ক্রসফায়ারে পড়ে গাদ্দফি নিহত হয়েছেন।
দুই মাস পলাতক থাকার পর বৃহস্পতিবার গাদ্দাফি মারা গেলেন। আর তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই শেষ হলো তেলসমৃদ্ধ দেশ লিবিয়ায় গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসনামল। দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গাদ্দাফির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে লিবিয়ায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শুভ সূচনা হলো।
লিবিয়ার বিদ্রোহীদের গঠিত জাতীয় অন্তর্বর্তী পরিষদের (এনটিসি) চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিব্রিল রাজধানী ত্রিপোলি থেকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি লিবিয়ার সাধারণ জনগণকে শুধু একটা কথাই বলতে চাই, কোনটা লিবিয়া? আগেরটা না পরেরটা?। ’
এদিকে গাদ্দাফির মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লিবিয়ার জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘লিবিয়ার জনগণ বিপ্লব সম্পন্ন করেছে। ’
যদিও যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে আরও জানায়, ‘লিবিয়াতে ন্যাটোর অভিযান চলবে এবং গাদ্দাফির মৃত্যু লিবিয়াকে গণতান্ত্রিক সঠিক রাস্তার দিকে নিয়ে যাবে। ’
আরব বসন্তের জোয়ারে আরব দেশগুলোর অনেক নেতাই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। কিন্তু আরব নেতাদের মধ্যে ৬৯ বছর বয়সী গাদ্দাফিই বিদ্রেহীদের হাতে প্রথম নিহত হলেন।
বৃহস্পতিবার গাদ্দাফিপন্থীদের সঙ্গে এনটিসির তুমুল লড়াইয়ের এক পর্যায়ে তিনি নিহত হন। গাদ্দাফির সঙ্গে সঙ্গে তার সন্তান মুয়াত্তাশিমকেও হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে তার অপর সন্তান সাঈফ আল ইসলামকে আহত অবস্থায় আটক করে এনটিসি। একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মীর দেওয়া ভাষ্য মতে, মুয়াত্তাশিমের মৃতদেহে সিগেরেটে পোড়ার মতো অনেক পোড়া ক্ষত দেখা গেছে।
তবে গাদ্দাফির রক্তাক্ত দেহ নিয়ে অনেকের মধ্যেই সংশয় দেখা দিয়েছে। ঠিক কিভাবে গাদ্দাফিকে হত্যা করা হয়েছে তা নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। গাদ্দাফিকে আহত অবস্থায় জীবিত ধরার পর কিভাবে তাকে হত্যা করা হলো তাই এখন মূল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরব টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, গাদ্দাফির মৃতদেহ রাস্তা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ সময় গাদ্দাফির মাথা ছিল ন্যাড়া এবং তার মুখ ও শরীর ছিল রক্তাক্ত। গাদ্দাফিকে টেনে হিঁচড়ে একটি ট্রাকে ওঠানোর সময় একজন উত্তেজিত সৈনিক বলছিলো, ‘আমরা তাকে জীবিত চাই, আমরা তাকে জীবিত চাই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১১