ঢাকা: ‘গাদ্দাফির মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যের অন্য লৌহ মানবদের জন্য সতর্কবার্তা’- গত বৃহস্পতিবার কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি নিহত হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতিক্রিয়া ছিল এরকম।
কিন্তু লিবিয়ার এই একনায়ক যিনি টানা ৪২ বছর একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন, তিনি কিন্তু ওবামাকে নিয়ে খুব আশাবাদী ছিলেন।
লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে মুসলিম বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ বলে মনে করতেন। গত শনিবার লন্ডন ভিত্তিক আল হায়াত পত্রিকায় প্রকাশিত এক ভাষণে গাদ্দাফি ওবামাকে বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও লিবিয়ার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের লিবিয়া আক্রমণের ২৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে সিরতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গাদ্দাফি বলেছিলেন, ‘এই দিনে লিবিয়ার দিকে আমেরিকার কামান তাক করা ছিল। আমেরিকার নৌবাহিনী সিরতের পোতাশ্রয় থেকে লিবিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে। তখন আমেরিকা লিবিয়াকে পরীক্ষা করেছে, লিবিয়ার জনজণ শক্তিধর দেশটিকে প্রতিরোধ করেছে। কিন্তু আজ, খোদা তোমাকে ধন্যবাদ, দুই সময়ের মধ্যে বিশাল ফারাক। ’
তিনি বলেন, ‘এখন আমেরিকা শাসন করছে আমাদেরই মহাদেশ থেকে যাওয়া এক কালো মানুষ। তিনি আরব বংশোদ্ভুত আফ্রিকান এবং মোসলমান বংশের। আমরা কখনো কল্পনাই করিনি রিগানের পর বারাক ওবামাকে পাব। ’
আমেরিকায় ওবামার প্রশাসনকে ঐতিহাসিক অর্জন বলে উল্লেখ করেছেন গাদ্দাফি। তিনি বলেছেন, ‘তাকে আমি বন্ধু বলেই মনে করি। ’
তিনি ওবামার আফ্রিকান-আরব এবং মুসলিম রক্ত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি এমন একজন মানুষ যার নীতি সমর্থন করা উচিত। তার নীতি বাস্তবায়নের জন্য তাকে যেকোনো উপায়ে সহযোগিতা করা উচিত, যেহেতু তিনি এখন শান্তির পথে অগ্রসর হচ্ছেন। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সবাইকে বলব তাকে সুযোগ দিতে এবং তার সমর্থন করতে। কারণ, আমেরিকা এমন দেশ, যার নীতি যখন খারাপ তখন তা পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর, আবার যখন ভালো তখন তা পৃথিবীকে সাহায্য করে। ’
গাদ্দাফি আরও আশা করতেন, ওবামার পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন একদিন সত্যি হবে। ওবামার প্রশংসা করে বলেন, ‘এমন শান্তির কথা কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বলেননি। তিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে, আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহার করার কথা বলেছেন- এরকম আরও কিছু বিষয় আছে যার প্রস্তাব আগে কেউ করেনি। ’
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এতো প্রশংসা করলেও তিনি এও বলেছেন, ‘আরবরা আমেরিকাকে ঘৃণা করে এতে সন্দেহ নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যেসব আরব নেতাদের তাদের মিত্র ভাবে প্রকৃতপক্ষে তারাও তাদের ঘৃণা করে। বাইরে ভালবাসা দেখানোর বিষয়টা একেবারে ভণ্ডামি অথবা বাস্তববাদিতা। আর কারণটাও স্পষ্ট, সেটা হলো ফিলিস্তিন। ’
গাদ্দাফি বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে তাদের নিজের দেশে ফিরতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। প্যালেস্টাইন ও ইসরায়েল মিলে ইসরাতাইন নামে একটি পরমাণু অস্ত্র মুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এই ভিশনারি কিন্তু চরম একনায়ক নেতা গত বৃহস্পতিবার নিজের জন্মশহর সিরতেই বিদ্রোহী সেনাদের হাতে নিহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১১