ঢাকা: গাদ্দাফির মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা যায়নি। একটি আনাড়ি ভিডিও ফুটেজে যে ছবি দেখা যায় তাতে ঘটনাটি আরও জটিল রূপ নিয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায় ডজনখানেক লোকের মাঝখানে রক্তক্ত গাদ্দাফিকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ফজরের আজানের কিছু আগে গাদ্দাফি তার অনুগত দেহরক্ষী এবং সেনা প্রধান আবু বকর ইউনিস জাবরের সঙ্গে ছিলেন।
১৫টি ট্রাকের একটি সামরকি বহর নিয়ে গাদ্দাফি পশ্চিম দিকে যাচ্ছিলেন, তবে বেশি দূর যেতে পারেননি। ন্যাটো বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সিরতের নিকটে একটি ট্রাক বহরে তারা বিমান হামলা চালায়।
ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেরারদ লংগেদ পরে ওই আক্রমণের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। ওই হামলায় ১৫টি ট্রাকই ধ্বংস হয় এবং আরোহী ৫০ জন নিহত হন। আক্রমণটি চালিয়েছিল ফরাসি বিমান বাহিনী।
তবে কয়েকজন সঙ্গীসহ গাদ্দাফি বেঁচে যান। গাছের আড়াল দিয়ে তিনি মূল রাস্তার দিকে দৌড়ে যান এবং দুটি পয়নিষ্কাশন পাইপে লুকিয়ে পড়েন।
গাদ্দাফির আটক
এনটিসির একটি সেনা ইউনিট গাদ্দাফির ওই ট্রাক বহরটি অনুসরণ করছিল। সঙ্গীরাসহ গাদ্দাফি তাদের কাছ থেকে লুকানোর চেষ্টা করছিলেন তবে শেষ পর্যন্ত এনটিসির ওই বাহিনী তাদের অবস্থান জানতে পারে।
এনটিসির ওই ইউনিটের সদস্য সালেম বাকির বলেন, ‘প্রথমে আমরা তাদের লক্ষ্য করে বিমান বিধ্বংসী গোলা ছুড়ি, কিন্তু কাজ হয়নি। এরপর আমরা পায়ে হেঁটে অগ্রসর হলাম। ’
তিনি বলেন, ‘গাদ্দাফির একজন অনুচর পাইপ থেকে বেরিয়ে রাইফেল নাড়তে থাকল এবং চিৎকার করে আত্মসমর্পণ করার জন্য বেরিয়ে এলো। কিন্তু যখনই সে আমাকে দেখল তখনি গুলি করতে লাগল। আমার ধারণা, অবশ্যই গাদ্দাফি তাদের গুলি না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। লোকটি বলল, আমাদের নেতা এখানে, গাদ্দাফি এখানে এবং তিনি আহত। ’
বাকির বলেন, ‘আমরা ভেতরে ঢুকে গাদ্দাফিকে বের করে নিয়ে আসি। তিনি তখন বলছিলেন, কি হলো, কি হলো, হচ্ছেটা কি? এরপর আমরা তাকে টেনে গাড়িতে উঠাই। ’
আটকের সময় গাদ্দাফি গুলিবিদ্ধ ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন বাকির।
এনটিসির আরেক যোদ্ধা বাকিরের বর্ণিত ঘটনার হুবহু বর্ণনা দিয়েছেন। তবে, ওমরান জুমা শাওয়ান নামে অপর একজন বলছেন, আটক হওয়ার শেষ মুহূর্তে গাদ্দাফিকে তারই এক অনুচর গুলি করেন এবং তিনি গুরুতর আহত হন।
তিনি বলেন, গাদ্দাফির দেহরক্ষীদের একজন তার বুকে গুলি করে।
বিদ্রোহীদের কারও মোবাইলে তোলা ভিডিও যা পড়ে ইউটিউবে ছাড়া হয় তা দেখে মনে হয় গাদ্দাফিকে জীবিত অবস্থায়ই আটক করা হয়েছিল।
ভিডিওতে দেখা যায়, রক্তাক্ত এবং বিধ্বস্ত গাদ্দাফি এনটিসির দুই যোদ্ধার হাতের ওপর ভর করে আছেন। অন্যরা তাকে ধরে উল্লাস করছে।
গাদ্দাফির সব দেহরক্ষীকে হত্যা করা হয়।
গাদ্দাফির মৃত্যু
আটকের পর গাদ্দাফিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মিসরাতার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাস্তায় থাকা অবস্থায় আঘাতের কারণে মৃতপ্রায় ছিলেন গাদ্দাফি।
তবে এনটিসির প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিব্রিল বলছেন, বৃহস্পতিবার আটকের পর অ্যাম্বুলেন্সে তোলার সময় গাদ্দাফি সামান্যই আহত ছিলেন। পরে রাস্তার মাঝ পথে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘পয়নিষ্কাশন পাইপ থেকে বের করার সময় তিনি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেননি। যখন তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখনই ডান হাতে বুলেট বিদ্ধ হন। যখন তাকে ট্রাকে তোলা হয় তখন এর বেশি কোনো আঘাত তার শরীরে ছিল না। ’
গাদ্দাফিকে বহনকারী গাড়িটি যখন চলতে শুরু করে তখনই বিপ্লবী ও গাদ্দাফির অনুগত বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় ক্রসফায়ারে পড়েন গাদ্দাফি। তার মাথায় একটি গুলি লাগে।
জিবরিল বলছেন, হাসপাতালে পৌঁছার কয়েক মিনিট আগে গাদ্দাফি মারা যান।
তবে এর পর কী ঘটেছে তা পরিষ্কার নয়। আরেকটি ভিডিওতে দেখে মনে হবে যেনো এনটিসির এক যোদ্ধা গাদ্দাফিকে গুলি করেছেন। নিহত গাদ্দাফিকে মাটির উপর দিয়ে টেনে হেচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গাদ্দাফি হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে আছেন আর এনটিসি যোদ্ধারা উল্লাস করছে।
এর পর গাদ্দাফির মরদেহ একটি ট্রাকে তোলা হয়। তার পর কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় তা জানা যায়নি।
মিসরাতা শহরে এনটিসির কর্মকর্তা মোহামেদ আবদুল কাফি বলেন, ‘আমাদের একটি ইউনিটের সঙ্গে গাদ্দাফির মরদেহ ছিল। নিরাপত্তার কারণে আমরা তাকে একটি গোপন স্থানে নিয়ে যাই। ’
এ হলো এনটিসির বর্ণনায় গাদ্দাফির শেষ কয়েক মুহূর্ত। প্রকাশিত ভিডিও, এনটিসি যোদ্ধা এবং প্রধানমন্ত্রীর বর্ণনায় ঘটনার ধারাবাহিকতায় মিল না থাকায় বিষয়টি এখনও ধোঁয়াশা।
এ কারণেই জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে। গাদ্দাফির মরদেহ এখন মিসরাতার একটি হিমঘরে অযত্মে অবহেলায় পড়ে আছে বলে জানা যাচ্ছে। ঘটনার তদন্ত ও সমাহিত করার স্থান নির্ধারণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় মরদহে দাফন নিয়ে এখনও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে লিবিয়া কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১১