ঢাকা: রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এখন অস্ট্রেলিয়া সফরে রয়েছেন। স্বামী ফিলিপকে নিয়ে কমনওয়েলথ সম্মেলন উপলক্ষে ১৯ অক্টোবর এসেছেন রানী।
পার্লামেন্টের সম্বর্ধনায় মঞ্চের প্রথম সারিতে শুধু বসেছেন রানী, তার স্বামী, দেশের প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড আর তার পার্টনার। বিরোধীদলের নেতা সস্ত্রীক প্রটোকল অনুসারে অন্যদের সঙ্গে মঞ্চের দ্বিতীয় সারিতে বসেন। সামনের সারিতে আসন কেন দেয়া হয়নি, এর প্রতিবাদে সম্বর্ধনা বর্জন করে চলে যাননি বিরোধদলের নেতা টনি এবোট। বরঞ্চ নানান হিউমারে পরিপূর্ন তার বক্তৃতায় হাততালি বেশি পড়েছে। প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টান রানী রোববার ক্যানবেরায় একটি এঙ্গোলিয়ান গির্জার প্রার্থনায় যোগ দেন। এরপর যোগ দেন নির্বাচিত ৬০ জন সেলিব্রেটির সঙ্গে এক মধাহ্নভোজে। এর সবকিছুই অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়ায় গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।
কিন্তু এসব প্রচারনা-কভারেজের মূল সুর এটিই হয়ত রানীর শেষ সফর অস্ট্রেলিয়ায়! কারন তার বয়স হয়েছে। ৮৫ বছর বয়সী রানী এখানে তার সব কর্মসূচিতেই অংশ নিচ্ছেন। রানীর মতোই ব্যক্তিত্বপূর্ন সেজেগুজে যাচ্ছেন সবখানে। হাসছেন, হাত নাড়ছেন, গ্লাবস হাতে ফুলের তোড়া নিচ্ছেন। হাত মেলাচ্ছেন অনেকের সঙ্গে। তার জন্য তৈরি করা লিখিত বক্তৃতাও পড়ছেন। কিন্তু সবকিছুর আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে জানান দেয় তার বয়স। অনুষ্ঠানাদির ফাঁকে অনুসন্ধানি ক্যামেরার চোখের বয়সী রানীর ক্লান্তির মুখচ্ছবি নজর এড়ায় না। একটা অনুষ্ঠানে দেখা গেল স্বামীর ফিলিপের দিকে কটমট তাকাচ্ছেন রানী। এটি কী রানী সুলভ ভারিক্কি? না বয়সজনিত মেজাজ? এ বিষয়টিও মিডিয়ার চোখ এড়ায়নি। এমন নানা কিছুর কারনে নানা মিডিয়া রিপোর্টে কৌতুহল ছেড়ে বলা হচ্ছে আবার কী আসতে পারবেন রানী তার রাজ্যে? ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আরেক প্রান্ত এত লম্বা ফ্লাইটে উড়ে আসতে বয়স কী তাকে অনুমোদন করবে? ভরসা কম। সে জন্য সব রিপোর্টের পিটিসি-উপসংহারের শেষ বাক্যে বলা হচ্ছে, সম্ভবত এটিই অস্ট্রেলিয়ায় শেষ সফর রানীর! ১৯৫৪ সালে প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফর করেন রানী। অস্ট্রেলিয়ার আইকন হিসাবে চিহ্নিত সিডনির বিখ্যাত অপেরা হাউসও তার হাতে উদ্বোধন হয়েছে ১৯৭৩ সালে।
উল্লেখ্য এখনও অস্ট্রেলিয়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ । ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ এখনও অস্ট্রেলিয়ারও রানী। সংবিধানের অংশ। বাংলাদেশে যেমন সব সরকারি প্রজ্ঞাপন রাষ্ট্রপতির নামে জারী হয় পাশ হয়, অস্ট্রেলিয়ায় সবকিছু পাশ হয় রানীর নামে। রানীর পক্ষে গভর্নর জেনারেল এখানে প্রতিনিধিত্ব করেন। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ, প্রধান বিচারপতিকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি, এদেশে রানীর পক্ষে গভর্নর জেনারেল শপথ পড়ান। রাজ্য সমূহের প্রিমিয়ার, মন্ত্রীদেরও শপথ পড়ান গভর্নর জেনারেল। উল্লেখ্য এই মুহুর্তে অস্ট্রেলিয়ার গভর্নর জেনারেল, প্রধানমন্ত্রী, রাজধানী ক্যানবেরার চীফ মিনিস্টারও নারী। এবার পার্লামেন্টের রানীর সম্বর্ধনায় দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড প্রসঙ্গটির উল্লেখে ভুল করেননি।
রানীর সফরকে প্রায় সব মিডিয়া সম্ভবত শেষ সফর হিসাবে উল্লেখ করলেও মানবিক যৌক্তিক কারনে চেপে যাচ্ছে একটি বিষয়। তাহলো রানীর বেঁচে থাকার সঙ্গেই ব্রিটিশ মনার্কির সঙ্গে টিকে আছে অস্ট্রেলিয়ার যোগসূত্র! অর্থাৎ রানীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এই যোগসূত্রের সুতোটিও ছিঁড়ে যাবে। অস্ট্রেলিয়াও আর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভূক্ত থাকবে থাকবেনা। হয়ে যাবে স্বাধীন গণপ্রজাতান্ত্রিক। অস্ট্রেলিয়া তার নিজস্ব রাজনৈতিক স্বাতন্ত্রের সিদ্ধান্তটি নিয়ে রেখেছে বেশ আগে। তখনই সিদ্ধান্ত হয় যতদিন রানী বেঁচে থাকবেন ততদিন তার সম্মানে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ হিসাবে সব আচার-কালচার দেশটি পালন করে যাবে। রানীর পর আর নয়। সে কারনে এলিজাবেথের পর কে হবেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উত্তরসূরী চার্লস না উইলিয়াম তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান সমাজেরও আর মাথাব্যথা, দুশ্চিন্তা নেই।
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১১