আনাতোলিয়া: তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ভানে রোববারের ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ২৭৯ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ১৩০০ জন মানুষ।
তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী বেসির আতালাই সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দিয়েছেন।
এর আগে এদিন সকালে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইদ্রিস নাইম সাহিন জানিয়েছিলেন, ভূমিকম্পে অন্তত ২১৭ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে ভান অঞ্চলে ১০০ ও এরসিস অঞ্চলে ১১৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মৃত্যুর সংখ্যা রেসিপ তায়িপ এরদোগান ১৩৮ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেন। সহস্রাধিক মৃত্যুর আশঙ্কাও করেন তিনি।
এদিকে, হাড়াকাঁড়ানো শীত ও অন্ধকার ঠেলে উদ্ধারকর্মীর দল ও স্থানীয় অধিবাসীরা উদ্ধারকাজে নেমেছেন।
গণমাধ্যমগুলোর মতে, তুরস্কে গত দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে কমপক্ষে এক হাজার মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) মতে, রোববার স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির মাত্রা রিখটার স্কেলে ৭.৩। তবে তুরস্কের কানদিলি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রথমে ভূমিকম্পের মাত্রা ৬.৬ বলে উল্লেখ করলেও পরে ৭.২ বলে জানিয়েছে।
আক্রান্ত এলাকার বহু ভবন ধসে পড়েছে। জরুরি উদ্ধারকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। ভান শহরে ১০টি এবং পার্শ্ববর্তী এরসিসে কমপক্ষে ২৫টি ভবন ধসে পড়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী বেসির আতালাই।
এর আগে বলা হয়, এ পর্যন্ত আহত ৫০ জন মানুষকে হাসপাতালে নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভানে একটি সাততলা ভবন ধসে পড়েছে। ওই ভবনের মধ্যে অনেকে আটকা পড়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
তুরস্কের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, এরসিসে ধসে পড়া একটি আবাসিক ভবনের ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে কয়েকজন আহত মানুষকে তারা উদ্ধার করেছে।
তুরস্কের প্রধান ভূমিকম্প কেন্দের মতে, প্রদেশটির এরসিস শহরের আবাসিক এলাকায় কম্পনের মাত্রা যেরকম ছিল তাতে ৫০০ থেকে এক হাজার পর্যন্ত প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কানদিলি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান মুস্তফা এরদিক টিভিতে সম্প্রচারিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা ৫শ থেকে এক হাজার মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করছি। ’
এরসিস জেলার মেয়র জুলফুকার আরাপগলু বলেছেন, ‘ বহু ভবন ধসে পড়েছে, অনেক মানুষ মারা গেছে কিন্তু আমরা সঠিক সংখ্যা জানতে পারিনি। আমরা জরুরি সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছি। সহায়তা খুবই জরুরি। ’ আশপাশের প্রদেশগুলোতেও কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে।
প্রাথমিক ভূকম্পনের পর কমপক্ষে ২০টি ধরাবাহিক কম্পন অনুভূত হয়েছে। ইরানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকায়ও কম্পন অনুভূত হওয়ায় ওই অঞ্চলের প্রধান প্রধান শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অঞ্চলটি পরিদর্শন করেছেন। দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যবস্থা নিতে সোমবার সকালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তুর্কি গণমাধ্যম জানিয়েছে, আক্রান্ত এলাকায় টেলিফোন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন।
কানদিলি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল তাবালি গ্রামে। গ্রামটি ভান শহর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার উত্তরে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে তুরস্ক ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল।
১৯৯৯ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ১৯৭০ সালে কুতাহায়া প্রদেশে ভূমিকম্পে এক হাজারেও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১১