বুধবার (২৫ জুলাই) দেশটিতে সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পর গণনার মাঝামাঝিতেই প্রাথমিক ফলাফলে ইমরান খানের দল এগিয়ে যায়। তারপর থেকেই চলছে বিজয়োল্লাস।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) সকাল পর্যন্ত পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়, ২৭২ আসন বিশিষ্ট সংসদের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ১১৪টি আসনেই এগিয়ে আছে পিটিআই। ৬৪ আসনে এগিয়ে পিএমএল-এন এবং পিপিপি এগিয়ে ৪২টি আসনে।
এই এগিয়ে থাকার খবরেই পাকিস্তানজুড়ে উল্লাসে মেতেছেন ইমরানের সমর্থকরা। বুধবার মধ্যরাতেই পিটিআইর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ইমরান খানকে ‘উজিরে আজম’ হিসেবে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্টও দেওয়া হয়। যদিও ইমরান নিজে এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেননি। তবে তার মুখপাত্র নঈমুল হক বলেছেন, পিটিআই প্রধান দুপুর ২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।
তবে এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে কারাবন্দি নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ রাতেই সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, ভোটে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে যে ফলাফল ঘোষণা করেছে তা আমাদের দল মেনে নেবে না। ফলাফল গণনার সময় সারাদেশেই আমাদের নির্বাচনী এজেন্টদের রাখা হয়নি। তাদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিলওয়াল ভুট্টো জারদারিও। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, মধ্যরাত পার হলো এবং আমি আমার নিজের নির্বাচনী কোনো এলাকার ফলাফল এখনও হাতে পাইনি। আমার প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, সারাদেশেই আমাদের পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এটা ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘বিদ্বেষপূর্ণ’।
সরকার গঠনের জন্য ২৭২ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদে প্রয়োজন হবে ১৩৭টি আসন। কোনো দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে না পারলে সমমনা দলগুলো মিলে গড়বে জোট সরকার। এগিয়ে থাকা ইমরান খানকেই কোনো সমমনা দলের সঙ্গে জোট গড়ে সরকার গঠনে দেখা যেতে পারে। নির্বাচন কমিশনে (ইসিপি) নিবন্ধিত ১২০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৯৫টি দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
নির্বাচন ঘিরে পিএমএল-এনের সমর্থকদের ভাবনা, (দুর্নীতির দায়ে) নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণার মাধ্যমে তার প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে, সেটা বিবেচনায় নিয়ে জনগণ তাদের ফের ক্ষমতায় বসাবে। রাজনীতিতে পরোক্ষভাবে সামরিক হস্তক্ষেপের জবাব দেবে নাগরিকরা।
অন্যদিকে পর্যবেক্ষকদের ধারণা, একটা সময় সেনাবাহিনীর আশীর্বাদপুষ্ট হলেও সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে নওয়াজের ওপর রুষ্ট প্রভাবশালী এই বাহিনী। বিশেষ করে তিনবারের এ প্রধানমন্ত্রী এবার ক্ষমতায় আসার পর সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ‘বস’, অন্য কেউ নয়। তাতে সেনা নেতৃত্ব বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তার প্রতি অসন্তোষ দেখায়। অপরদিকে ইমরান খানকে বরাবরই পছন্দ করে সেনাবাহিনী। নওয়াজের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের পর সুপ্রিম কোর্টে তার বিরুদ্ধে যে মামলা নিয়ে গিয়েছিলেন ইমরান, সেখানে পিটিআই প্রধানের পেছনে সেনাবাহিনীই ছিল বলে মনে করা হয়। এই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ইমরানের জন্য নির্বাচনে যে গড়াপেটার গুঞ্জন ছড়িয়েছে, ফলাফলে তারই প্রকাশ ঘটতে চলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৮
এইচএ/
আরও পড়ুন
জয়ের পথে এগিয়ে ইমরান, ফল প্রত্যাখ্যান করলেন শাহবাজ
কারা আসছে পাকিস্তানের সরকারে?
সুযোগ মিস করবেন না: ভোট দিয়ে ইমরান
কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চলছে পাকিস্তানের ভোটগ্রহণ
নির্বাচন: আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তান সীমান্ত বন্ধ
কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চলছে পাকিস্তানের ভোটগ্রহণ
ভোট দিতে প্রস্তুত ১০ কোটি পাকিস্তানি