গত শুক্রবার (৩ আগস্ট) সৌদি মানবাধিকার কর্মী সামার বাদাউয়ি ও আরও অনেক মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতারের ঘটনায় কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক টুইট বার্তায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তারপর থেকেই সৌদি সরকার বিভিন্ন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়ে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতির জবাব দিয়েছে।
এরপর মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) কানাডায় সব চিকিৎসাসেবা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। সৌদির রোগীদের কানাডার বাইরের হাসপাতালে স্থানান্তর করে।
সৌদি সরকার অবশ্য ভবিষ্যতে দেশ দু’টির বাণিজ্য সম্পর্ক বন্ধের আভাসও দিয়েছে।
সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবেদ আল জুবায়ের বলেছেন, সৌদির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনো রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না। কানাডা ভুল করেছে। এ ভুল তাদেরই সংশোধন করতে হবে।
মানবাধিকার ইস্যুতে সৌদি সরকারের অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া সঠিক নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যানডারস সৌদির প্রতিক্রিয়াকে ‘ভয়ানক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সৌদি আরবের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর গবেষক হিবা জায়াদিন বলেন, মুহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভিন্নমতের ওপর তীব্র দমন নীতি প্রয়োগ করেন। আমরা এখন যা দেখছি, তাতে তিনি কোনভাবেই জবাবদিহি করতে চান না, হোক সেটা সৌদিতে কিংবা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি যুবরাজ রাজমুকুট পরার পর থেকে তিনি সৌদিকে আধুনিক করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৌদিকে অন্যভাবে উপস্থাপন শুরু করেন। চালু করেন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। তিনি কয়েকশ’ নামকরা ব্যবসায়ীর ব্যবসা বন্ধ করে দেন।
এছাড়াও প্রথমবারের মতো দেশটিতে নারীদের ড্রাইভিং নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন তিনি। এছাড়াও তিনি দেশটিতে প্রথম মুভি থিয়েটার নির্মাণ করেন।
তবে সৌদির মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। চলতি বছরেই গ্রেফতার করা হয়েছে অনেক মানবাধিকার কর্মীকে।
পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন সৌদি যুবরাজ। কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও বেড়েছে উত্তেজনা। ইয়েমেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়েও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে কানাডার সঙ্গে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো সৌদি আরবকে ইতিবাচক সাড়া দিলেও, পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো এ ইস্যুতে নিরব।
লন্ডনভিত্তিক চিন্তক প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের ফেলো পিটার সেলিসবুরি বলেন, এটা খুবই হতাশার যে, কানাডার এ ইস্যুতে কোনো দেশ তাদের অবস্থান থেকে এগিয়ে আসছে না। কানাডার পাশে থাকছে না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে নিয়মিত আলোচনা করছে।
এছাড়াও সৌদি ও কানাডার আন্তঃসম্পর্কের দূরত্ব কমিয়ে আনার আহ্বানও জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর।
সামার বাদাউয়ির ভাই রাইফ বাদাউয়িকে গত সপ্তাহে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১৫ সালে রাইফের শিশু ও সন্তানদের আশ্রয় দেয় কানাডা।
সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের আইনগতভাবেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৮
এএইচ/আরআর