প্রকাশিত বইটিতে বেশ ক’টি ছবি প্রকাশ করা হয় রোহিঙ্গাদের নিপীড়ক ও অনুপ্রবেশকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে। এর মধ্যে একটি সাদাকালো ছবিকে ১৯৪০ সালের জাতিগত সংঘাত হিসেবে তুলে ধরা হয়।
কিন্তু রয়টার্স বলছে, ছবিটি আসলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে তোলা। ছবিতে এদেশের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো নির্মম হত্যাযজ্ঞের চিত্র প্রকাশ পায়।
এরকম আরও দু’টি ভুয়া ছবি পাওয়া যায় ১১৭ পৃষ্ঠার বইটিতে। একদল শরণার্থীর ছবি দিয়ে বলা হয়, ‘বাঙালিরা মিয়ানমারে প্রবেশ করছে। ’ অথচ রয়টার্স বলছে, ছবিটি আসলে তানজানিয়া অভিমুখী রুয়ান্ডার শরণার্থীদের।
একটি নৌকায় একদল রোহিঙ্গার ছবি দিয়ে ক্যাপশনে বলা হয়, ‘জলপথে মিয়ানমারে প্রবেশ করছে বাঙালিরা। ’ অথচ রয়টার্স বলছে, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা ও অভিবাসীরা সমুদ্রপথে পালিয়ে যাওয়ার সময় নৌবাহিনীর হাতে আটকা পড়ার ছবি।
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে গণ্য করে না মিয়ানমার। ‘বাঙালি অনুপ্রবেশকারী’ ধরে যুগ যুগ ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। সবশেষ গত বছরের আগস্টে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ শুরু হলে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় লাখ লাখ রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে এদেশে এখন আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখেরও বেশি বলে মনে করা হয়।
রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের জন্য দেশটির সেনাবাহিনী ও সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলেও তার থোড়াই কেয়ার করেই সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ বিভাগ এই অপপ্রচারমূলক বইটি প্রকাশ করেছে। এতে রোহিঙ্গাদের ওপর সেদেশের সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বরাবরের মতোই বলা হয়েছে ‘বাঙালি অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে।
মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগুনের বইয়ের দোকানগুলোতে এই বই বিক্রি হচ্ছে। শহরের সবচেয়ে বড় বইয়ের দোকান ইনওয়ার এক কর্মচারী সংবাদমাধ্যকে বলেন, বিক্রির জন্য আনা ৫০টি বই বিক্রি হয়ে গেছে।
জাতিগত ও আঞ্চলিক উত্তেজনাকে উসকে দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধানসহ শীর্ষ অনেক জেনারেল ও কর্মকর্তার অ্যাকাউন্ট বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায় ফেসবুক।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে রোহিঙ্গাদের ‘গণধর্ষণের’ পাশাপাশি ‘গণহত্যার’ দায় দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘও। ওই প্রতিবেদনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফসহ ছয় শীর্ষ জেনারেলের নাম উল্লেখ করে তাদের আন্তর্জাতিক আইনে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানায় বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থাটি।
এরমধ্যেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অপপ্রচারমূলক বই বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৮
এনএইচটি/এইচএ/