ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

পুরনো সূঁচ থেকে শিশুদের শরীরে এইচআইভি, পাকিস্তানে আতংক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯
পুরনো সূঁচ থেকে শিশুদের শরীরে এইচআইভি, পাকিস্তানে আতংক এইচআইভি পরীক্ষার জন্য একটি শিশুর রক্ত নেওয়া হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: হাতুড়ে চিকিৎসকের ব্যবহার করা দূষিত সিরিঞ্জের মাধ্যমে পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি গ্রামের প্রায় চার শতাধিক মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে মরণঘাতী এইচআইভি। আক্রান্তদের মধ্যে অসংখ্য শিশুও রয়েছে।

সম্প্রতি দেশটির সিন্ধ প্রদেশের লারকানা সীমান্ত এলাকার ভাসায়ো গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

কর্তৃপক্ষের দাবি, এর পেছনে দায়িত্বশীলদের অবহেলা অথবা স্থানীয় চিকিৎসকের দুরভিসন্ধি থাকতে পারে।

এ নিয়ে দরিদ্র গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ ও ভয় ছড়িয়ে পড়েছে। রক্ত পরীক্ষা করাতে তারা দলে দলে ছুটছেন স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে।

স্থানীয় মেকশিফট ক্লিনিকের এক চিকিৎসক বলেন, অনেক বেশি লোক আসায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। একসঙ্গে এত লোকের চিকিৎসা দেওয়ার মতো চিকিৎসা সরঞ্জামও আমাদের কাছে নেই।

মুখতার আহমেদ নামে এক ব্যক্তি মেয়েকে নিয়ে এসেছেন ক্লিনিকটিতে। তার মেয়ে জ্বরে ভুগছে। সাম্প্রতিক মহামারির সঙ্গে এর যোগসূত্র থাকতে পারে বলে ভয়ে আছেন তার বাবা।

নাজির আহমেদের মাত্র এক বছর বয়সী কন্যার এইচআইভি ধরা পড়েছে। হন্যে হয়ে তিনি ক্লিনিকে ওষুধ খুঁজে বেড়াচ্ছেন আর দোষীদের অভিশাপ দিচ্ছেন।

এইচআইভি আক্রান্ত শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তাদের স্বজনরা। কারণ দেশটির বেশিরভাগ লোকেরই এইচআইভির চিকিৎসা সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই।   ফলে এসব শিশু শারীরিক ভাবে তো বটেই, সামাজিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পাকিস্তান দীর্ঘদিন যাবৎ কম এইচআইভি প্রবণ দেশ হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে এর হার আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে মাদকাসক্ত ও যৌনকর্মীদের মধ্যে এ ভাইরাস ছড়াচ্ছে দ্রুত।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, পাকিস্তান এখন এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার বিশিষ্ট এইচআইভি আক্রান্ত দেশ। শুধু ২০১৭ সালেই দেশটিতে ২০ হাজারের বেশি মানুষ এইচআইভির শিকার হয়েছে।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে অনেক এলাকাতেই পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না দেশটির জনগণ। এ সুযোগ গ্রামাঞ্চলগুলোতে বাড়ছে অপ্রশিক্ষিত হাতুড়ে চিকিৎসকের সংখ্যা।

ইউএনএআইডিএস জানায়, সরকারি তথ্যমতে, পাকিস্তানে ৬ লাখেরও বেশি হাতুড়ে চিকিৎসক রয়েছে। এরমধ্যে শুধু সিন্ধ প্রদেশেই রয়েছে অন্তত ২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি।

সিন্ধ এইডস কন্ট্রোল প্রোগ্রামের প্রদেশীয় কর্মকর্তা সিকান্দার মেনন বলেন, হাতুড়ে চিকিৎসকরা টাকা বাঁচাতে একাধিক রোগীর শরীরে একই সূঁচ ব্যবহার করে। এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ার এটাই প্রধান কারণ হতে পারে।

সিন্ধ প্রদেশে এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত চিকিৎসক নিজেও এইচআইভিতে আক্রান্ত। তিনি রাতোদেরো শহরের নিকটবর্তী একটি পুরনো জেলখানায় বন্দি আছেন।

তবে, জেনেশুনে রোগীদের মধ্যে এইচআইভি ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই চিকিৎসক। উল্টো সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে থাকা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।