বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকাল থেকে ভোটের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সালের চেয়েও এবার বড় ব্যবধানে জিততে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) ৫৪২ আসনের মধ্যে প্রায় ৩৫০ আসনে জয়ের পথে রয়েছে, সেখানে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো এগিয়ে মাত্র ৮৮ আসনে।
উত্তর প্রদেশের আমেথি আসনটিকে গান্ধী পরিবারের সম্পত্তি হিসেবেই ধরা হতো এতদিন। সারাদেশে যেমনই হোক, এ আসন বরাবরই ছিল কংগ্রেসের দখলে। এবারের নির্বাচনে সেখানে প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। পাশাপাশি, আসনটিতে জোর প্রচারণা চালিয়েছেন রাহুলের বোন প্রিয়াংকা গান্ধীও।
তবে, এতকিছুর পরও কংগ্রেসের দুর্গ বলে পরিচিত আমেথি হাতছাড়া হতে যাচ্ছে দলটির। শেষ খবর পর্যন্ত, সেখানে রাহুলের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বিজেপির প্রার্থী স্মৃতি ইরানি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে রাহুল গান্ধী, তার মা সোনিয়া গান্ধী ও বোন প্রিয়াংকা গান্ধী প্রায় আধা ঘণ্টা বৈঠক করেছেন।
সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, নির্বাচনে এত বড় ভরাডু্বি হবে, কখনোই আশা করেনি কংগ্রেস। তাদের আশংকা, এরপর হয়তো কর্নাটক, মধ্য প্রদেশ ও রাজস্থানের মতো প্রাদেশিক সরকারও কংগ্রেসের হাতছাড়া হতে যাচ্ছে।
এমন অবস্থায় দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব ও দলের সভাপতি পদে তার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় মোদীকে উদ্দেশ্য করে রাহুলের ‘চৌকিদার চোর’ স্লোগান ব্যবহার কতটা যুক্তিযুক্ত ও ফলপ্রসূ ছিল তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে অনেকের।
বিরোধী দলীয় নেতা ওমর আব্দুল্লাহ সরাসরি বলেছেন, রাফায়েল জেটবিমান চু্ক্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুর্নীতি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে রাহুলের ‘চৌকিদার চোর’ স্লোগান সঠিক ছিল না।
এছাড়া, প্রিয়াংকা গান্ধীর অভিষেকে কংগ্রেস কতটা লাভবান হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দলটির নেতারা।
এমনকি, মোদীকে টেক্কা দেওয়ার মতো কংগ্রেসের কোনো নেতা নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
নির্বাচনে বিজেপির জয়ের কারণ হিসেবে সংখ্যালঘু ও বর্ণবাদী রাজনীতিবিদরা মোদীর পক্ষে যাওয়াকেই দায়ী করছে কংগ্রেস।
দলটির মিত্ররা মনে করছে, কংগ্রেসের আর আগের মতো ক্ষমতা নেই। তারা এখন পুরোপুরি জোটনির্ভর হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের পুনর্গঠন ছাড়া এ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় নেই।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির নিরঙ্কুশ জয়ের বিপরীতে মাত্র ৪৪টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। সেসময় দলীয় প্রধান হিসেবে সোনিয়া গান্ধী ও সহ-সভাপতি হিসেবে রাহুল গান্ধী নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনা করেন। তবে ফলাফল ঘোষণার পর কংগ্রেসের ইতিহাসে সবচেয়ে কম আসন পাওয়ায় দলের দুই শীর্ষ নেতা পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেটি আর কার্যকর হয়নি।
এবারের নির্বাচনে আগের চেয়ে উন্নতি হলেও কংগ্রেসের মোট আসন সংখ্যা তিন অংকে পৌঁছাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। ফলাফল প্রকাশ শুরুর পর থেকেই দিল্লিতে কংগ্রেসের প্রধান কার্যালয় প্রায় জনশূন্য। বিপরীতে, বিজেপি কার্যালয়গুলোতে চলছে সমর্থকদের বিজয়োল্লাস।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
একে