ভারতের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করেই দ্য ইউয়ান ওয়াং-৫ নামের চীনের বিতর্কিত গবেষণা জাহাজকে নিজেদের বন্দরে ভেড়ার অনুমতি দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এর আগে বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে জাহাজটিকে ভিড়তে না দেওয়ার জন্য  শ্রীলঙ্কাকে অনুরোধ করেছিল ভারত।

দিল্লির আশঙ্কা, জাহাজটি দিয়ে ভারতের সামরিক অবকাঠামোতে নজরদারি চালাবে চীন। তবে তাদের সেই উদ্বেগকে অগ্রাহ্য করে ইউয়ান ওয়াং-৫ জাহাজকে হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দরে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। শনিবার (১৩ আগস্ট) কলম্বোর পক্ষ থেকে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক রুটে জাহাজ চলাচল এবং এ বিষয়ে বিশ্লেষণের কাজ করে এমন একাধিক ওয়েবসাইটের বিবরণ অনুযায়ী, চীনা দ্য ইউয়ান ওয়াং-৫ গবেষণা ও জরিপ জাহাজ। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, চীনের ওই জাহাজ গুপ্তচরবৃত্তির কাজও করে থাকে।

এনিয়ে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত মহাসাগরে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য বিস্তার এবং শ্রীলঙ্কার ওপর চীনের ক্রমাগত প্রভাব বৃদ্ধি নিয়ে ভারত বেশ উদ্বিগ্ন। নিজেদের প্রভাব বলয়ের মধ্যে চীনকে অন্যতম প্রতিপক্ষ মনে করে থাকে তারা।

শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দরের নিয়ন্ত্রণ এখন একটি চীনা কোম্পানির হাতে। দ্য ইউয়ান ওয়াং-৫ জাহাজের গত ১১ আগস্ট হাম্বানটোটা বন্দরে প্রবেশের কথা ছিল। তবে তাতে আপত্তি জানিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে শ্রীলঙ্কাকে তখন বলা হয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য জাহাজটির প্রবেশ পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তারা যেন চীনকে জানিয়ে দেয়।

এ অবস্থায় শ্রীলঙ্কার হারবর মাস্টার নির্মল পি সিলভা জানিয়েছেন, তিনি ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চীনের ওই জাহাজের হাম্বানটোটা বন্দরে প্রবেশের অনুমতিপত্র পেয়েছেন। যাতে বলা হয়েছে, আগামী ১৬ থেকে ২২ আগস্টের মধ্যে হাম্বানটোটা বন্দরে জাহাজটিকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বন্দর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিলভা বলেছেন, ‘জাহাজটির বন্দরে প্রবেশের অনুমতিপত্র শনিবার (১৩ আগস্ট) আমার হাতে এসে পৌঁছেছে।

দ্য ইউয়ান ওয়াং-৫ জাহাজকে হাম্বানটোটা বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রও নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, জাহাজটি বন্দরে নোঙর করার ব্যাপারে দেওয়া অনুমোদনের নবায়ন করেছে সরকার। প্রাথমিকভাবে গত ১২ জুলাই জাহাজটিকে শ্রীলঙ্কার বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

হাম্বানটোটা বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীনের ওই জাহাজ সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ–পূর্ব উপকূল থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। সেখান থেকে জাহাজটি ধীরে ধীরে হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দরের দিকে আসছে।

এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের দ্য ইউয়ান ওয়াং-৫ জাহাজ মহাকাশ ও কৃত্রিম উপগ্রহ নজরদারির কাজে নিয়োজিত। পাশাপাশি আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণেও জাহাজটি ব্যবহার করা হয়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিজেদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের ওপর যে কোনো নজরদারির বিষয়টি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং দেশের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। সূত্র: এএফপি ও ও দ্য টেলিগ্রাফ

বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২২
এমএমজেড