দীর্ঘ অসুস্থতার পর ৯৬ বছর বয়েসে মারা গেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় সিংহাসনে ছিলেন তিনি।
১৯৬১ ও ১৯৮৩ সালে ঢাকা সফর করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানও তার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন লন্ডনে।
৭০ বছর ধরে রাজ সিংহাসনে আসীন থাকা ‘হার ম্যাজেস্টি কুইন এলিজাবেথ সেকেন্ড’ এর ঢাকা সফরের কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো এ প্রতিবেদনে-
১৯৬১ সাল, বাংলাদেশের নাম ছিল তখন পূর্ব পাকিস্তান। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্গত এ অঞ্চলের রাজধানী ছিল ঢাকা নামেই। সে বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো ঢাকা সফর করেন রানি। তার আগমনে তৎকালীন সরকার প্রস্তুতি নেয় নানা আয়োজনের। রানি ঢাকা এলে তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।
১৯৮৩, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম। সে বছর দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা সফর করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সে বছর ১৪ থেকে ১৭ নভেম্বর পাঁচদিন বাংলাদেশে ছিলেন তিনি। তার আগমনের সম্মাননায় দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। তার এ রাজকীয় সফর শুধু রাজধানীকেই আটকে ছিল না। রানি গিয়েছিলেন চট্টগ্রামে।
রানি যেদিন ঢাকায় পা রাখেন, তাকে সম্মান জানাতে রাস্তায় রাস্তায় তৈরি করা হয় ব্যানার। সেসব ব্যানারে লেখা ছিল ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক’। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার সড়ক এসব ব্যানারে মুড়ে দেওয়া হয়।
তৎকালীন সরকার রানির সম্মানে প্রকাশ করে ১০ টাকার স্মারক ডাকটিকিট। টিকিটে রানির ছবি দেওয়া হয়েছিল। ছবিতে ছিলেন তার স্বামী ডিউক অব এডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপ।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের নিদর্শন হিসেবে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধেও গিয়েছিলেন রানি। শহীদদের সম্মান জানাতে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছিলেন।
চট্টগ্রামে গিয়ে একটি মডেল গ্রাম ঘুরে দেখেন তিনি। দেখেন কীভাবে ধান থেকে মুড়ি তৈরি করা হয়। হস্তজাত পণ্যের প্রস্তুত প্রণালিও দেখেছিলেন এলিজাবেথ।
ঢাকায় সেভ দ্য চিলড্রেন’র কার্যালয়ও ঘুরে দেখেন ব্রিটিশ রানি।
বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বার্তাও দিয়েছিলেন হার ম্যাজেস্টি কুইন এলিজাবেথ সেকেন্ড।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইংল্যান্ড হয়ে দেশে এসেছিলেন বাঙালি জাতির পিতা। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি লন্ডনে বাকিংহাম প্যালেসে রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় বঙ্গবন্ধুর।
এলিজাবেথের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দেখা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রনেতা হিসেবে। বাকিংহাম প্যালেসে তাদের সাক্ষাত একই সঙ্গে ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি রাষ্ট্রের মহানায়কের সঙ্গে রানির সাক্ষাতের বিষয়টি বেশ ফলাও করে তুলে ধরা হয়েছিল।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশ। দেশটির মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান তখনও পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দি। ১৯৭১ সালে বিজয়ী বাংলাদেশের এ নেতাকে ১৯৭২ সালে করাচির কারাগারের বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি সরাসরি নিজ দেশে ফেরত যেতে পারেননি। তাকে আসতে হয় ইংল্যান্ডে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ তখন তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ একটি রাষ্ট্র। কিন্তু একটি দেশের ইতিহাসের মহানায়ককে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায় ব্রিটিশ সরকার। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বাকিংহাম প্যালেসে পৌঁছান মুজিব। তাকে স্বাগত জানান সে সময়ের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ। এরপর তাকে সাক্ষাত দেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী ডিউক অব এডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপ।
নিজ শাসনামলে অন্যান্য ব্রিটিশ শাসকদের চেয়ে বেশি বাইরের রাষ্ট্র ভ্রমণের রেকর্ড আছে এলিজাবেথের। জীবদ্দশায় শুধু কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোয় দেড়শবার সফর করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২
এমজে