টম প্রাণপণে ছুটছে জেরির পেছনে। যেভাবেই হোক জেরিকে তার ধরা চাই।
যে কথা সেই কাজ। চোখ বন্ধ করে খেতে লাগলো টম। কিন্তু জেরিকে কামড় দিচ্ছে মনে করে যখন শেষ কামড়টা জোরে দিলো তখন দেখলো জেরি না, কামড় পড়েছে টমের লেজে। সব জেরির কারসাজি। তারপরের ঘটনা বন্ধুদের নিশ্চয় জানা।
বন্ধুদের অবিরাম আনন্দ আর হাসিতে মাতিয়ে রাখা প্রিয় বন্ধুর নাম নিশ্চয় টম ও জেরি। যার নাম শুনলেই তোমাদের মনে পড়ে ইঁদুর বেড়ালের ছোটাছুটির কথা । শুরু হয় হাসির ফোয়ারা।
বন্ধুরা তোমাদের জন্য ইচ্ছেঘুড়ির আজকের আয়োজন প্রিয় কার্টুন টম অ্যান্ড জেরি নিয়ে। আজ আমরা জানবো শুধু টম আর জেরির না, আরো অনেক গল্প।
টম অ্যান্ড জেরি তোমাদের সম্ভবত সবচেয়ে প্রিয় কার্টুনছবি। শুধু তোমাদের বললে ভুল হবে। কারণ বড়দের কাছেও সমান জনপ্রিয় কার্টুনটি। কারণ মানুষ হাসতে ভালোবাসে, ভালোবাসে আনন্দ পেতে। এ কার্টুন তোমাদের দুষ্টুমিগুলোকে নাড়া দেয় নতুন করে। তোমাদেরও টম ও জেরির মতো ছোটাছুটি করতে খুব ভালো লাগে। তাই না? তবে চলো ঘুরে আসি দুষ্টু মিষ্টি টম অ্যান্ড জেরির জগৎ থেকে।
সেটা ১৯৩০ সালের শেষের দিকের কথা। রুডলফ আইসিঙের এম.জি.এম অ্যানিমেশন স্টুডিওর অংশ ছিলেন গল্পলেখক ও চরিত্র ডিজাইনার উইলিয়াম হ্যানা এবং অভিজ্ঞ পরিচালক জোসেফ বারবারা। তারা জুটিবদ্ধ হয়ে ছবি পরিচালনা করতেন।
তাদের বানানো ছবিগুলোর মধ্যে প্রথমটি ছিল একটি ইঁদুর-বিড়াল কার্টুন। যার নাম ছিল ‘পাস গেটস দা বুট’। এই কার্টুন বিবর্তিত হতে হতে আজকের টম অ্যাণ্ন্ড জেরি।
টম অ্যান্ড জেরি হলিউডের মেট্রো গোল্ডউইন মেয়ার স্টুডিওতে তৈরি একটি জনপ্রিয় কার্টুন। বর্তমানে এটি তৈরি হয় হ্যানা বারবারা স্টুডিওতে। এতে দেখা যায় টম ধূসর রঙের একটি বিড়াল এবং জেরি একটি বাদামি রঙের ইঁদুর। টম এবং জেরির মধ্যে অধিকাংশ সময় চলে লড়াই। দুজনই সবসময় চেষ্টা করে কীভাবে একে অপরকে জব্দ করা যায়। আর এজন্য তারা আশ্রয় নেয় বিভিন্ন মজার মজার পদ্ধতির।
নানা রকম দুষ্টুমি এই কার্টুনের মূল বিষয়। এই জনপ্রিয় ধারাবাহিকের প্রধান নির্মাতা উইলিয়াম হানা এবং জোসেফ বারবারা। কার্টুনের জগতে বর্তমানে একটি অন্যতম স্থান দখল করে আছে টম অ্যান্ড জেরি।
টম নীলাভ-ছাই অথবা ছাই রঙের পোষা বিড়াল (ওর পশমের রং বিড়ালের রাশিয়ান ব্লু প্রজাতির) আর জেরি হল বাদামি রঙের ছোট এক ইঁদুর, যার বাড়ি টমের বাড়ির পাশেই। তোমরা নিশ্চয় দেখেছ যে, টম খুব অল্পতেই রেগে গেলেও জেরি খুব চালাক এবং সবসময় সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। ছোট হলেও বুদ্ধি কিন্তু কম নেই জেরির।
টম ও জেরির মিল থাকে খুব অল্প সময়। যদিও শেষ পর্যন্ত তাদের হাত মেলাতে দেখা যায়। টমের সঙ্গে জেরির মনের দিক থেকে মিল নেই বললেই চলে। তোমরা নিশ্চয় খেয়াল করেছ, প্রায় প্রতিটি পর্বেই জেরিকে বিজয়ীর বেশে দেখা যায় আর টমকে বিফল।
তবে ক্রিসমাসের সময় অন্তত টমকে জেরির জীবন বাঁচাতে বা উপহার দিতে নিতে দেখা যায়।
মাঝে মাঝে দুজনের দৈনন্দিন ছোটাছুটিকে দেখানো হয় ওদের প্রতিদিনের খেলা হিসেবে। টম কোনো মেয়ে বিড়ালের প্রেমে পড়লে জেরি রেগে গিয়ে দুজনরে মধ্যে ভাঙন ধরানের চেষ্টা করে। দুজনকে আবার দেখা যায় হাত মিলাতেও। বন্ধুরা, আমরাও কিন্তু টম ও জেরির মতো দুষ্টুমি করবো ঠিকই কিন্তু আবার বিপদে এগিযে যাবো, হাত মিলিয়ে বন্ধুও করে নেব। কেমন?
প্রায় প্রতিটি পর্বেই দেখা যায় জেরিকে ধরতে টমের দৌড়াদৌড়ি। টম জেরিকে কেন এতো তাড়া করে, চলো তার কয়েকটা কারণ জেনে নিই।
টম বিড়াল আর জেরি ইঁদুর। এদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাড়ির মালিক যা বলে টম কিন্তু তাই করে। সে হিসেবে জেরিকে ধরা টমের কাজ। জেরিকে বিরক্ত করে মজা পাওয়া, জেরির দুষ্টুমির প্রতিশোধ নেওয়া, টমের ভয়ঙ্কর ও অসৎ পরিকল্পনা, ভুল বোঝাবুঝি এগুলো নিয়মিত ঘটনা।
দুটি চরিত্রের মধ্যেই দেখা যায় অন্যকে দুঃখ দিয়ে মজা নিচ্ছে নিজেরা। জেরি খুব বেশি আঘাত বা কষ্ট পেলে টমেরও খুব মন খারাপ হয়। জেরি অবশ্য এমন অবস্থায় মাঝে মাঝে সুযোগ নিতেও ভুল করে না।
জেরিকে ধরতে কখানো কখনো টম সাহায্য নেয় বাচের। বাচ হলো গলিতে থাকা কালো রঙের নোংরা এক বিড়াল, যে নিজেও জেরিকে ধরে খেতে চায়। আরও কিছু চরিত্র যেমন স্পাইক, রাগী ভয়ঙ্কর দারোয়ান বুলডগ, যে বিড়ালদের মারতে পছন্দ করে এবং ম্যামী-টু-শুস নামে একজন আফ্রিকান আমেরিকান চরিত্র যার চেহারা কখনো দেখা না গেলেও দুষ্টুমি করলে টমের কপালে তার ঝাঁটাপেটা ঠিকই জোটে।
আরেকটি নিয়মিত চরিত্র হলো হাসের ছানা কোয়াকার, যারা জেরিকে সঙ্গ দেয় প্রতিমুহূর্তে। আরেকটি চরিত্র হলো ছোটো হলদে পাখি, যা নিয়ে টম ও জেরির মাঝে সৃষ্টি হয় নতুন নতুন খেলার।
বন্ধু তুমি শত্রু তুমি। কথাটি একেবারে ঠিক টম ও জেরির জন্য। সবশেষে যখন তারা বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দেয় তখন আমাদের কিন্তু কম ভালো লাগে না। তাই না?
টম অ্যান্ড জেরির প্রতিটি পর্ব তোমাদের শুধু মজাই দেয় না, বরং তোমাদের নতুন কিছু করার উৎসাহ দেয়। তোমরা টম ও জেরির মতো দুষ্টুমি করো আর নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কার করে হাসির ফুলঝুরি ছড়িয়ে দাও সবার মাঝে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি- [email protected]