১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। থমথমে মধ্যরাত।
‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের এই অভিযানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যা করে।
মধ্যরাতে পাকি ট্যাঙ্কগুলো কামান উঁচিয়ে ঢুকে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সঙ্গে লরি বোঝাই সৈন্য। প্রথমে তারা গুলি চালায় ইকবাল হলে (বর্তমানে জহরুল হক হল)। এতে মারা যান শতাধিক ছাত্র। এরপর জগন্নাথ হলে ঢুকে সাব-মেশিনগান দিয়ে গুলি করে হত্যা করে আরও দেড় শতাধিক ছাত্র-শিক্ষককে। রোকেয়া হলও আক্রমণ থেকে বাদ যায়নি। গুলি চালিয়ে তারা হত্যা করে অনেক ছাত্রীকে। কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচান। মেডিকেল কলেজ এবং হোস্টেলেও গুলি করে অনেক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে হায়েনার দল।
এসব ঘটনা যখন ঘটছিল, তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কয়েকটি ইউনিট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ঘিরে ফেলে। রাত তখন ১টা ১০ মিনিট। একটি ট্যাঙ্ক, একটি সাঁজোয়া গাড়ি এবং কয়েকটি ট্রাক বোঝাই সৈন্য শেখ মুজিবের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ির ওপর দিয়ে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে রাস্তা ধরে এগিয়ে আসে। তারা বাড়ির সামনে আসার পর একজন অফিসার ইংরেজিতে বলেন, ‘শেখ, আপনি নেমে আসুন। ’ বঙ্গবন্ধু তখন তার বাড়ির বেলকনিতে এসে বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি প্রস্তুত; তবে গুলি ছোঁড়ার দরকার ছিল না। আপনারা আমাকে টেলিফোন করে তারপর আসতে পারতেন। ’ এরপর সেনা অফিসারটি ভেতরে ঢুকে বললেন, ‘আপনাকে গ্রেফতার করা হলো। ’
২৫ মার্চ কালো রাতে পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টার, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রমনা কালী মন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, নিউমার্কেট, ঠাটারি বাজার, পুরান ঢাকা, ফরাশগঞ্জ, বিকে দাস লেন, শাঁখারী বাজার, তাঁতী বাজার, ভোলা গিরি আশ্রম, অভয়দাশ লেন, টিকাটুলি, হাটখোলা, আরকে মিশন রোড়, গেন্ডারিয়া সাধনা ঔষধালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়ে হত্যা করে প্রায় ১০ হাজার নিরীহ বাঙালিকে।
পাকিস্তান বাহিনী হামলা করে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় দু’টি সংবাদপত্র দৈনিক ইত্তেফাক ও পিপলস ডেইলির কার্যালয়ে। ভোর ৫টার পর পাকবাহিনীর গোলার আঘাতে উড়ে যায় আমাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। রাত এবং ভোরজাগা মানুষরা দেখে শুধু লাশ আর লাশ।
২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় বাঙালির বিজয় ছিনিয়ে আনার লড়াই।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি[email protected]