ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

রোহিঙ্গা শরণার্থী, বিয়ে ও একটি 'পর্শিয়া' সিনড্রোম

এস এম মাসুম বিল্লাহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৪
রোহিঙ্গা শরণার্থী, বিয়ে ও একটি 'পর্শিয়া' সিনড্রোম ফাইল ফটো

রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশীদের বিয়ে নিবন্ধন নিষেধ করে আইন মন্ত্রনালয় পরিপত্র জারি করেছে। বিয়ে নিয়ে আইনমন্ত্রী বয়ান করেছেন যে, কোনো কাজী এই ধরনের বিয়ে পড়ালে তার শাস্তি হবে, বিয়ে পড়ানোর লাইসেন্স বাতিল হবে।

  কেননা এটা  তার অধিক্ষেত্র বহির্ভূত। বিয়ে যদি পড়ানো হয়েও যায়, তবে সে বিয়ে অবৈধ বলে গণ্য হবে!

পদক্ষেপটা এতটাই যুক্তি ও বাস্তবতা পরিপন্থী যে, আইনমন্ত্রী মহোদয় মানবাধিকার বিবেচনা নির্বাসন দিলেন কিনা সে প্রশ্ন জাগে।

বলা হচ্ছে, সরকারকে বাধ্য হয়েই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়েছে। কেননা, এই সকল বিয়ে নানান 'সামাজিক ও সাংস্কৃতিক' সমস্যা তৈরী করছে। রোহিঙ্গারা নাকি বাংলাদেশী কাউকে বিয়ে করে বাংলাদেশী বনে গিয়ে পাসপোর্ট আদায় করে নিচ্ছে এবং বিদেশে গিয়ে নানান 'অপরাধে' জড়িয়ে পরে দেশের 'সুনাম' ক্ষুণ্ন করছে।

করিত্কর্মা প্রশাসন তো আর এভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে দিতে পারেননা! ডিসি সাহেবরা ঢাকায় তাদের সম্মেলনে এসে আবদার করেছেন, একেবারে খালি হাতে ফেরা কেমন বদসুরত দেখায়, তাই আইনমন্ত্রী তাদের একটা নগদ দাবী গ্রাহ্য করে নিজেও ধন্য হয়েছেন, আমরাও ডিসি সাহেবদের দেশপ্রেম দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েছি। আইনমন্ত্রীর স্থিতধী কথা আমার ভালো লাগে।
 
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে তাকে নমস্য জ্ঞান করি। কথায় সংযমী হওয়ার তার প্রচেষ্টা চোখে পড়ার মতো। বিবিসির সাথে সাক্ষাত্কারে তিনি নিজস্ব ঢঙে তার পদক্ষেপটিকে যৌক্তিক প্রমাণের চেষ্টা করেছেন।

পত্রিকান্তরেও তার ১১ জুলাইয়ের বক্তব্য মোটামুটি একইভাবে এসেছে। বলাই বাহুল্য, আইন মন্ত্রনালয়ের আদেশ এবং আইনমন্ত্রীর এই অবস্থান আমাদেরকে কতকগুলো প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। আমি মনস্তত্ববিদ নই, তবুও আমার মনে হয়েছে ইদানিং তার ভেতরকার 'আইনজীবী' সত্ত্বা তার 'মন্ত্রিত্ত্ব' মানসকে বেশিমাত্রায় প্রভাবিত করছে। ফলে, যেকোনো আইনকে তিনি আইনজীবীর চোখ দিয়ে দেখে তার পক্ষে একটা আগাম অবস্থান নিয়ে রাখছেন।

রোহিঙ্গা-বাঙালী বিয়ে নিষেধ প্রশ্নে তার আইনি যুক্তি এই দৃষ্টিভঙ্গির উদাহরণ।

বিয়ে, পরিবার গঠণ ও পরিবারের সাথে বসবাস একটা প্রাকৃতিক অধিকার যা এখন মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে পৃথিবীর সবধরনের মানবাধিকার দলিলে স্বীকৃত।

তাছাড়া সংবিধান নামের আয়নাতে সব রকম মানুষের জীবনের এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার যে অধিকারের কথা প্রতিফলিত আছে, তার তো একটা অর্থ থাকতে হবে! বিয়ে করা দুজন মানব-মানবীর পারস্পরিক বিষয়, দেশের প্রশ্ন এমনকি ধর্মের প্রশ্নও সেখানে অবান্তর।

আইনমন্ত্রী কি এই পরিপত্রের মাধ্যমে নতুন 'সোশ্যাল ট্যাবু' সৃষ্টি করলেন? কে কাকে বিয়ে করবে এটা আইন নির্ধারণ করে দিতে পারেনা।

স্বাধীন, আইনি বয়সোত্তীর্ণ , সম্মতিদানে সক্ষম মানুষ তার ইচ্ছা অনুযায়ী বিয়ে করতে পারেন। এটাকে আইন দিয়ে অবৈধ বলার সুযোগ নেই। বড়জোর কিছুক্ষেত্রে বিয়ে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে যুক্তিসঙ্গত 'সীমাবদ্ধতা' আরোপ করা যেতে পারে (যেমন বিচারক/জনপ্রতিনিধির অনুমতি সাপেক্ষে)।

তিন যুগ পর মনে পড়লো রোহিঙ্গা-বাঙালী বিয়ে নিষিদ্ধ করতে হবে? আমার মনে হয়েছে সমস্যাটির বিকল্প সমাধানগুলোর যথেষ্ট স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করে, অগভীর চিন্তা প্রকাশক এই সিদ্ধান্ত। আমাদের সমাজে এমনিতেই 'রেফিউজি' দের সাথে সম্পর্ক করার ব্যাপারে সামাজিক বাধা থাকার কথা। তাই ঠিক কতটা বিয়ে আন্ত:জাতীয় হচ্ছে তা জানলে আমাদের বিষয়টা বুঝতে সুবিধা হত। তাছাড়া এই রকম বিয়ের মধ্যে শুধু ‘অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য' নির্ণয়ের মাপকাঠিটি কি? তবে কি কোনো ভ্যালেনটাইন ট্রাজেডি কিম্বা চলচ্চিত্রকারের ভালবাসার গল্পের প্লটের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে?

যাই হোক, এবার কিছু বিষয়ের দিকে নজর দেয়া  যাক:

এক. বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইন (নেচারালাইজেশন আইন ১৯২৬)অনুযায়ী ভিন্ন দেশের নাগরিক বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারেন। সরকার কি তাহলে ওই আইনের বিপক্ষে অবস্থান নিলেন? ওই বিধান 'শুধুমাত্র' রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে অপ্রযোজ্য কেন হবে? একটা পরিপত্র জারি করে সু-প্রতিষ্ঠিত আইনের ব্যতিক্রম করা যায় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন। এই  বাংলাদেশেরই-তো অনেক নাগরিক বাইরের দেশে গিয়ে একই সুবিধা নিয়ে মানবতার জয়গান গাচ্ছেন।  

দুই. অপরাধ দমনে বিয়ে নিষেধ করার এই তত্ত্ব আইনবিজ্ঞানে নিঃসন্দেহে নতুন ও অভিনব। আমার ধারণা, স্বয়ং সাদারল্যান্ড বেঁচে থাকলে এটা দেখে তিনি তার অপরাধ তত্ত্ব পর্যালোচনা করতেন। কেউ যদি অপরাধী হয়, দেশ, কাল,পাত্র
ভেদে সে অপরাধী।

রোহিঙ্গারা বিয়ে করে অপরাধ করতে বিদেশ যাচ্ছে এই কথার দুটি মানে হয়, এক, বাংলাদেশের কেউ বিদেশে গিয়ে অপরাধ করছে না, করলেও তাতে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছেনা, দুই. রোহিঙ্গারা জন্মগত ও সহজাতভাবে অপরাধপ্রবণ।

প্রথম ক্ষেত্রে কিছুবা নাই বললাম, কিন্তু কে না জানে যে রোহিঙ্গারা ঐতিহাসিকভাবে চরম 'নিগৃহীত' একটা জাতি--আরো দরদ দিয়ে বলা যায় মজলুম মুসলমান জনগোষ্ঠী, যাদের পায়ের নিচে কোনো মানচিত্র নাই। মায়নমার তাদের নেবেনা, বাংলাদেশ তাদের নেবেনা, জাতিসংঘও তাদের নেবেনা। আবুল হাসানের কবিতা মনে পড়ে: "মৃত্যু আমাকে নেবে, জাতিসংঘ আমাকে নেবেনা"।

'শরণার্থী' গোছের ভদ্র শব্দ তাই তাদের কাছে পূজারীর মতো নয়, তারা দেশহীন 'রেফ্যুজি', মানুষ নয় শুধুই 'রোহিঙ্গা'--'জন্মই যাদের আজন্ম পাপ'।

তিন. আইনমন্ত্রী সম্ভবত: 'শরণার্থী' এবং 'অবৈধ অভিবাসী' ধারণার মধ্যে পার্থক্য টানতে ব্যর্থ হয়েছেন। শরণার্থী হতে হলে কতকগুলো শর্ত পূরণ করতে হয় (ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী বা মতের জন্য যুক্তিসঙ্গত নিগ্রহের ভয়)।

যদি কেউ অপরাধ করে বা অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য অন্য দেশে আসে তবে সে শরণার্থী নয়। তার ব্যাপারে
সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে।

আমরা ভাবতে পারলে খুশি হতাম যে, 'উন্নত অর্থনৈতিক' জীবন যাপনের জন্য বাংলাদেশে মানুষ আসে। বে-আইনি ভাবে কেউ আসলে ধরুন না তাকে, দিন না থানায়, কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনের গলি দিয়ে, রক্তের ধারা দিয়ে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে, সে রাষ্ট্র 'শরণার্থীর' ভাষা পড়তে পারবেনা তা কি হয়?
 
চার. এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ৩২,২৫০ যারা নয়াপাড়া এবং কুতুপালং নামক দুটো খাঁচায় (রেফিউজি ক্যাম্প) বসবাস করে। ধারণা করা হয় গণনার বাইরে রয়েছে আরো প্রায় ২ থেকে ৪ লক্ষ মানুষ। সঠিক শুমারির মাধ্যমে এই সংখ্যা নিশ্চিত হতে না পারার দায়টি কার? গত ৩৬ বছরে আমরা শরণার্থী নির্ণয়-এর কোনো সুষ্ঠু পদ্ধতি বানাতে পারিনি। অথচ একটু তত্পর হলেই এটা করা সম্ভব ছিল।

ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বাংলাদেশকে শরণার্থী আশ্রয় দিতেই হয়, অথচ আমাদের জাতীয় কোনো শরণার্থী আইন বা নীতি নেই। ফরেনার্স আইন, পাসপোর্ট আইন বা বহিঃসমর্পণ আইন দিয়ে আমরা শরণার্থী খাতির করলাম, কিন্তু তাতে রাষ্ট্রীয় আইন সৌকর্যে কত নম্বর পাওয়া যাবে? প্রশাসনিক আইন দিয়ে আমরা মানবাধিকার আইন বা শরণার্থী আইন কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছি।

ধরে নিলাম কোনো রোহিঙ্গা কাল থেকে নেই, আমরা কি অধিক ভালো হয়ে যাবো, আমাদের সব অপরাধ যাবে কমে? বলা হয়, রোহিঙ্গারা বিয়ে করে, বেশি সন্তান জন্ম দিয়ে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে হুহু করে।

আবারও কবি আবুল হাসানকে ধার করতে হবে: "আমাদের জীবনের অর্ধেক সময় তো আমরা/সঙ্গমে আর সন্তান উৎপাদনে শেষ কোরে দিলাম,/সুধীবৃন্দ, তবু জীবনে কয়বার বলুন তো/আমরা আমাদের কাছে বোলতে পেরেছি,ভালো আছি, খুব ভালো আছি"? প্রশ্নটা শিক্ষার এবং জনসংখ্যা নীতির, বিয়ে অবৈধ করার নয়।
পাঁচ. আজও বাংলাদেশ ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন স্বাক্ষর করেনি। বলা হয় অনুসমর্থন করলে দেশ সন্ত্রাসীদের স্বর্গ রাজ্য হবে, দলে দলে লোক বাংলাদেশে আশ্রয় নেবে ইত্যাদি।

একথা ঠিক যে, রোহিঙ্গারা স্থানীয় লেবার মার্কেটে চাপ সৃষ্টি করেছে। এটি নিয়ে আমাদের আসলেই ভাবতে হবে।

১৯৫১ সালের কনভেনশানে আমরা স্বাক্ষর না করেও আমরা শরণার্থী ঠেকাতে পারি নাই। সুতরাং,শরণার্থী কনভেনশন এর আওতায় আসলে এবং রেফিউজি আইন থাকলে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে একদিকে যেমন তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারতাম, অন্যদিকে, প্রত্যার্পণ ও পূন:বসতি স্থাপনসহ অন্যান্য সমাধান নিয়ে মায়ানমার এর সঙ্গে এবং অন্তর্জাতিক পরিসরে দেনদরবার করতে পারতাম। রেফিউজি আইন সম্পর্কে না-ওয়াকিবহাল ব্যুরোক্রাসির কাছে তাই 'বিয়ে নিষেধ'ই হয়েছে শরণার্থী ঠেকানোর শিষ্ট ও সভ্য উপায়! 

ছয়. রেফিউজি সমসার সমাধান মূলত তিনটি: ১. প্রত্যার্পণ ২. তৃতীয় দেশে বসতির ব্যবস্থা এবং ৩. স্থানীয় আত্তীকরণ।

নিজেদের সমাজে আত্তীকরণ সবচেয়ে কঠিন কারণ সম্পদের প্রশ্ন, সংস্কৃতির প্রশ্ন এবং আরো অনেক কিছু। ধরে নিচ্ছি সরকার স্থানীয় আত্তীকরণ না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাহলে গত ৩৬ বছরে সরকারগুলোর 'কূটনৈতিক' সফলতা কেমন যে
৩২,২৫০ জন শরণার্থীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো যায়নি! আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইন না মানলে মায়ানমারকে বুঝানোর জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কেমন করে পাওয়া যাবে?

আইনমন্ত্রী বিবিসির সাথে সাক্ষাত্কারে বলেছেন, তিনি কারো বিয়ে করার স্বাধীনতায় বাধ সাধছেন না, শুধুমাত্র
কাজীকে বিয়ের 'অধিক্ষেত্র' (jurisdiction) স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেন যে তারা তা অমান্য করলে শাস্তি পেতে হবে
(লাইসেন্স বাতিল হবে)।

আইনমন্ত্রীর যুক্তিতে 'পর্শিয়া সিনড্রোম' খুঁজে পাওয়া যায়।   শেক্সপীয়ার-এর মার্চেন্ট অব ভেনিস-এ তীক্ষ্ণ আইনজীবী পর্শিয়ার যুক্তি ছিলো: "আপনি শরীর থেকে মাংশ কাটুন কিন্তু, শর্ত হলো শরীর থকে একবারে এক কেজি মাংশ কাটতে হবে, এবং নিশ্চিত করতে হবে যেন শরীর থেকে কোনো রক্ত না পড়ে"।

লক্ষ্যনীয় যে, বিয়ে শুধু একজন রোহিঙ্গা করবে তা নয়, একজন বাংলাদেশীও তো একজন রোহিঙ্গাকে বিয়ে করতে পারেন। ১৯৭৪ সালের বিয়ে ও তালাক নিবন্ধন আইন সকল বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য। সুতরাং 'বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক' এর ইচ্ছে আর একজন 'রোহিঙ্গার' ইচ্ছে আলাদা করার যন্ত্র কোথায়?
 
তাই কাজীদের অধিক্ষেত্র সীমাবদ্ধ করে জারি করা পরিপত্র আইনটির উদ্দেশ্যের সাথে যায়না। স্পষ্টতই আইনমন্ত্রী একটা 'প্লে পর্শিয়া' অবস্থান নিয়েছেন।

১৯৫১ এর রেফিউজি কনভেনশন-এ শরণার্থীদের জন্য এক হাঁড়ি অধিকার আছে। ছড়িয়ে আছে আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইন, মানবিক আইন আর দেশের সংবিধান রয়েছেই। এগুলোতে 'শরণার্থী'র মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া আছে।

এগুলো কি শুধুই রেটোরিক? সরকারের আচরণ দেখে ১৯৫১ সালের রেফিউজি কনভেনশন গৃহীত হবার সময় আন্তর্জাতিক একজন পর্যবেক্ষক-এর করা একটা কথা স্মরণে আসে। রীজ নামক ওই প্রতিনিধি ঠাট্টা করে তখন বলেছিলেন: "এটা যেন বেয়াদব রেফিউজিদের বিরুদ্ধে অসহায় সার্বভৌম রাষ্ট্রের সুরক্ষার কোনো সম্মেলন।

আমরা ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন-এর পক্ষ না হলেও, আমাদের সংবিধানের ২৫ নং অনুছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক আইন সম্মান করার দায় আমাদের রয়েছে।

মহাবীর আলেকজান্ডার-এর ধারণা ছিলো যুক্তিচর্চ্চায় কেউ তাকে হারাতে পারবেনা। একবার তিনি দার্শনিক ডিওজেনাস-কে দেখতে যান। আলেকজান্ডার তার আস্তানায় গিয়ে দেখেন ডিওজেনাস রৌদ্রে শুয়ে আছেন। তিনি পাশে গিয়ে তাকে জিগ্যেস করলেন: "আপনি আমার কাছে কোনো একটা কিছু চান, আমি আপনার ইচ্ছা পূরণ করবো"। ডিওজেনাস নির্লিপ্তভাবে বললেন: "একটু সরে দাঁড়ান, রোদটা আসতে দিন, তাতেই হবে"। "আপনি যা দিতে পারেননা, তা আপনি কেড়েও নিতে পারেননা"।
   
পরিবার গঠনের অধিকার মানুষের জন্মগত, সহজাত, এটা রাষ্ট্র থেকে কোনো মানুষ ভিক্ষে পায়না। তাই কোনো প্রজ্ঞাপন জারি বলে রাষ্ট্র তা কেড়ে নিতে পারেনা। আইনমন্ত্রী, দয়া করে নয়াপাড়া ও কুতুপলাং শরণার্থী ক্যাম্প-এ একটু রোদ পড়তে দিন।

এস এম মাসুম বিল্লাহ: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক। বর্তমানে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটনে পিএইচডি গবেষণারত। ইমেইল: [email protected]

বাংলাদেশ সময় : ১৪১০ ঘন্টা,জুলাই ১৮,২০১৪।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।