ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

পানির অধিকার

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৪
পানির অধিকার ছবি: ফাইল ফটো

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহকার্য উপাদান। আমাদের সংবিধানও সে অধিকারগুলোর স্বীকৃতি দেয়।

সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অধ্যায়ে এ অধিকারগুলো সংরক্ষিত আছে।

সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে বেঁচে থাকার এ মৌলিক প্রয়োজনের কথা বলা আছে। বলা হয়েছে,  ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাহাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়: (ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা...ইত্যাদি।

এছাড়া আরো কয়েকটি অধিকারের কথা বলা আছে এ সংবিধানের এ অনুচ্ছেদে।

পানি মানুষের বেঁচ থাকার জন্য প্রধান ও মৌলিক উপাদান। পানির কথা আলাদাভাবে সংবিধানে বলা নেই। কিন্তু খাদ্যের মধ্যেই পানি অন্তর্ভুক্ত।  

সংবিধানের বাইরেও ২০১৩ সালে পানি বিষয়ক একটি পৃথক আইন করা হয়। পানির ওপর এরকম একটি আইনের প্রয়োজনের কথা বলা হচ্ছিল বহুদিন থেকেই।  

পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজের এই দাবীর পরিপ্রেক্ষিতেই ২০১৩ সালে প্রণয়ন  করা হয় বাংলাদেশ পানি আইন।

আমাদের দেশের অন্যান্য আইনের মতো এ আইনেও পানির অধিকার ও ব্যবস্থাপনার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে পানি বিষয়ক কর্তৃপক্ষ গঠন, তাদের ক্ষমতা ও কার্যাবলীর দিকেই বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।

আইনটির ৪ ধারা অনুযায়ী জাতীয় পানি সম্পদ পরিষদ নামে একটি পরিষদ গঠনের কথা বলা আছে। অত্যন্ত উচ্চক্ষতা সম্পন্ন এ পরিষদের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

৩৪ সদস্য বিশষ্ট এ পরিষদে রয়েছে আরো ১২ জন মন্ত্রী ও ১জন প্রতিমন্ত্রী (যদি থাকে)। এছাড়াও আছেন সচিব ও বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ।

পানি সংশ্লিষ্ট সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পরিষদ হচ্ছে এ জাতীয় পানি সম্পদ পরিষদ। এর কাজও ব্যাপক। পানি সম্পদের সমন্বিত উন্নয়ন, সুষ্ঠু ব্যবহার, নিরাপদ আহরণ, সুষম বণ্টন, সুরক্ষা ও সংরক্ষণ বিষয়ে নীতি নির্ধারণ ও দিক-নির্দেশনা প্রদান, পানি সম্পদের সমন্বিত উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে জাতীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংক্রান্ত দিক-নির্দেশনা প্রদান ও জাতীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা অনুমোদন ও এর বাস্তবায়ন নিশ্চিৎ করা এ পরিষদের দায়্ত্বি।

সরকার নির্বাহী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে জলাধার বা পানি ধারক স্তরের সুরক্ষার জন্য, যথাযথ অনুসন্ধান, পরীক্ষা নিরীক্ষা বা জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন করে যেকোন এলাকা বা এর অংশবিশেষ বা পানি সম্পদ সংশ্লিষ্ট যেকোন ভূমিকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে পারে।

পানি সংকটাপন্ন এলাকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিৎ করার যেকোন বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারবে।

এ আইনটিতে মূলত কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা ও কার্যাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু পানি ব্যবস্থাপনা ও নাগরিকদের পানির অধিকার কার্যকরের ওপর তেমন কোনো আলোকপাত নেই। নাগরিকদের জন্য পানির অধিকার নিশ্চিৎ করাই প্রাথমিক দায়িত্ব। পানির বাণিজ্যিকীকরণ রোধ করে সব স্তরের নাগরিকদের জন্য পানির প্রাপ্তিই বড় কথা। এ বিষয়টি অধিক গুরুত্বের দাবী রাখে। আইনে নাগরিকদের পানির অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। পানিকে অধিকারের দৃষ্টিতে দেখতে হবে ও সেই অনুযায়ী রাষ্ট্র ও নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বণ্টন করতে হবে।

সাধারণভাবে যে ভূমিতে পানির অবস্থান, সে ভূমির মালিককেই পানির অধিকার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া পানি উত্তোলন করতে নির্বাহী কমিটির অনুমোদনের একটি বিষয় আনা হয়েছে আইনে।

পানির প্রাপ্তি ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে যথাযথভাবেই একটি নির্দিষ্ট সীমা বা পরিমানের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আইনে সে পরিমানের কথা বলা নেই।

গৃহস্থালি এবং কৃষিকাজে প্রাকৃতিক পানি সম্পদ ব্যবহার করার নাগরিক অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। কারণ, কৃষিই বাংলাদেশের প্রাণ। সে প্রাণকে সচল রাখতে হবে নিশ্চিৎ করতে হবে পানির প্রবাহ। সেচ ও কৃষি খাতে পানির অবাধ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের কৃষি। তাই পানিবণ্টন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যক্তি মালিকানাধীন করার বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে পানিকে নাগরিক অধিকার হিসেবে দেখার প্রয়োজন। আইনের মাধ্যমেই জনগণের পানির প্রচলিত অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যেসব এলাকায় সুপেয় পানির অভাব রয়েছে, রাষ্ট্রসেখানে নাগরিকদের জন্য নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহ করতে দায়বদ্ধ।   বর্তমান প্রেক্ষাপট ও আগামী দিনের জলবায়ূ সংকট বিবেচনায় নিয়ে প্রণয়ন করতে হবে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পানি ব্যবস্থাপনা নীতি ও কৌশল।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।