ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আইন ও সচেতনতা জরুরি

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৪
শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আইন ও সচেতনতা জরুরি

শিশু অধিকার সুরক্ষায় আইন থাকলেও সে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। গণমাধ্যমে প্রতিদিনই শিশু নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয়।

আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতার অভাবে ঘরে-বাইরে যেনো বেড়েই চলছে শিশু নির্যাতন।

এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরা। আর যেসব শিশুরা কেবল শিক্ষা নয়, জীবনের সব সুযোগ-সুবিধা থেকেই বঞ্চিত, সেই সব শ্রমজীবী বা পথশিশুদের অবস্থা আরো করুণ।

শ্রমজীবী শিশুদের একটি বড় অংশ নিয়োজিত আছে বাসা-বাড়িতে পরিচারিকার কাজে। এ কাজ করতে গিয়ে শিশুরা নানাভাবেই শিকার হচ্ছে নির্যাতনের।

এইসব গৃহকর্মী শিশুদের জন্য নেই কোনো মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি। যে গৃহে তারা কাজ করে সেখানে তাদের সর্বনিম্ন শ্রম অধিকার পর্যন্ত নেই। শিশু অধিকার তো পরের কথা।

শিশু নির্যাতনের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হয় কণ্যা শিশুদের। সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় কণ্যাশিশুরা।  

শারীরিক নির্যাতনের অন্যতম বড় ক্ষেত্র হচ্ছে যৌন নির্যাতন। কণ্যাশিশুরা অবস্থানভেদে নিরবে-নিভৃতে প্রতিনিয়ত শিকার হয় এ যৌন নির্যাতনের।
পরিসংখ্যান বলছে, পরিবারেই শিশুরা সবচেয়ে বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। পরিবারেই তারা সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ। অনেক সময় শিশুর বাবা-মা বা অভিভাবকরা বিষয়টি জেনেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না বা করতে পারেন না। তাই এ জাতীয় ঘটনা থেকে যায় সবার অগোচরে। অনেক সময় সারাজীবন।  

এরকম একটি নির্যাতনমুক্ত ও নিরাপদ শিশু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে যে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা জরুরি তা এখানে অনুপস্থি। সেই পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন আমাদের নেই। যেটুকুটু অবশিষ্ট আছে তাও ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। ঐশি আমাদের বর্তমান সমাজ চিত্রেরই প্রতিবিম্ব।

শিশু নিরাপত্তা বলতে অনেক ধরনের নিরাপত্তার কথাই চলে আসে। শিশু নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে তাদের জন্য শারীরিক ও  যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে হবে। পরিবারকে করতে হবে নিরাপদ আবাস্থল। সেই সাথে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারকেই তা নিশ্চিত করতে হবে।

শিশুর অর্থনৈতিক অবস্থা একটি গুরুত্বর্পূর্ণ উপাদান। শিশুর বাবা-মা’র অর্থনৈতিক অবস্থা তাদেরকে অনেক ধরনের নিরাপত্তারক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

একটি পরিবার যদি অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি না হতে পারে তবে সে পরিবার তার শিশুদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কিভাবে? কাজেই পরিবার ও পরিবারের বাইরে শিশু নিরাপত্তার বিষয়টি মূলত পরিবারে ওপরই নির্ভর করে।

রাস্তায় যে সব ভ্রাম্যমান শিশুরা আছে তাদের অবস্থা আরো নাজুক। সমাজের সব ধরনের নির্যাতনই তাদের বরণ করে নিতে হয় প্রতিনিয়ত। বাবা-মা’র ভালোবাসার কোনো ধারণা তাদের জীবনে অনুপস্থি। ভিক্ষাবৃত্তি থেকে শুরু করে অনেক ধরনের পেশাতেই আত্মনিয়োগ করতে হয় এ শিশুদেরকে। জীবনের তাগিদেই এভাবে তাদের পথচলা। পরিবারহীন এ শিশুদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। এগিয়ে আসতে পারে সাধারণ নাগরিকরাও।

পথশিশুরা শৈশব থেকেই জড়িয়ে পড়ে নানা ধরনের অপরাধের সাথে। ফলে, আজকের শিশু আমাদের জানান দেয় অন্ধকার ভবিষ্যতের।

ওইসব শিশুদের রাস্তায় চলতে ফিরতে প্রতিনিয়তই সহ্য করতে হয় মানুষের বকুনি ও নানা ধরনের নির্যাতনের। অনেক সময় যৌন নির্যাতনেরও শিকার হয় এসব শিশুরা। এভাবেই তারা পা বাড়ায় অন্ধকার জীবনের দিকে।

শিশু অপহরণ, শিশু শ্রম, শিশু পতিতাবৃত্তি, শিশু পর্ণোগ্রাফি ও দাসত্বসহ বহুবিধ অপরাধের সাথে শিশুদের জড়ানো হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত আছে একটি চক্র যারা শিশুদের এসব কাজে নিযুক্ত করে। ঠেলে দেয় অন্ধকার জীবনের পথে।

অপহরণের শিকার অধিকাংশ শিশুদেরই ব্যবহার করা হয় শিশু পতিতাবৃত্তি, শিশু পর্ণোগ্রাফি ও দাসত্বসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ডে। শিশুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হানি বা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করার মতো ঘৃণ্য কাজে সাথে এরা জড়িত।
 
বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ না থাকায় নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রমে নিয়োগ করা হয় শিশুদের। আইনের কোনো ধার না ধেরেই  প্রাপ্তবয়স্কদের কাজে বা ভারী ও জটিল কাজে শিশুদের নিয়োগ করা হয়। সেই সাথে নির্যাতন তো আছেই।

শৈশব না কাটতেই বিয়ে শিশুদের জন্য নিয়ে আসে স্থায়ী নির্যাতনের। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের আরেক মাত্রা যোগ করে শিশু বিবাহ। যা স্থায়ী রূপ ধারণ করে সারাজীবনের জন্য।  

কিন্তু আমাদের দেশে আইন আছে। মূল প্রশ্ন হলো, আইনের শাসন ও প্রয়োগ। শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আইন আছে। কিন্তু সে আইনের বাস্তবায়ন নিয়েই যতো কথা।

শিশু অপরাধীদের ক্ষেত্রেও আমাদের বিশেষ আইন আছে। সে আইনে শিশুদের বিশেষ অধিকার দেওয়ার কথা বলা আছে।

কিন্তু শিশুরা কি সে আইনানুযায় বিচার পাচ্ছ?

আইন শৃংখলা বাহিনীর অধীনে বা custody-তে থাকাকালীন তাদেরকে পৃথকভাবে রাখার ও বিচারের কথা বলা আছে। কিন্তু আইনের সে বিষয়গুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে।  

সাধারণ অপরাধীদের সাথেই সাধারণ অপরাধীদের মতোই তাদের সাথে ব্যবহার করা হয়। এজন্য প্রয়োজন সচেতনতার।

কেবল আইনের প্রয়াগ ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি হলেই নিশ্চিত হবে শিশুদের জন্য বাসযোগ্য একটি পরিবেশ। ১৯৯০ সালের শিশু সনদ, ১৯৭৪ সালের আইন ও ২০১৩ সালের শিশু বিল’র এর সুফল আমরা এখনও পাইনি। তার কারণ, আইনই শেষ কথা নয়, প্রয়োগটা জরুরি। তার চেয়েও বড় কথা যে সমাজে শিশুদের বসবাস সে সমাজ কতটা শিশুবান্ধব।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।