ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

মাদক বিরোধী আইন কি কার্যকর?

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৪
মাদক বিরোধী আইন কি কার্যকর? ছবি: সংগৃহীত

মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার একটি জাতীয় সমস্যা। এর অপব্যবহারের শিকার হচ্ছে আমাদের যুব সমাজ।

এর ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা এমনকি আমাদের  শিশুরাও।  

মাদকের করাল গ্রাস থেকে নিরাপদ নয় দেশের ছাত্র ও যুব সমাজ। একটি দেশের যুব সমাজ যদি মাদকের কাছে পরাজিত হয় তবে তা দেশের জন্য ডেকে আনে মারাত্মক পরিণতি।

মাদক ধীরে ধীরে একটি সমাজকে পঙ্গু করে দেয়। শিক্ষিত অশিক্ষিত ও বয়স নির্বিশেষে সবাই মাদকের কাছে শিকার হতে পারে।

সবচেয়ে বেশি ঝুকির সম্মুখিন হয় উঠতি বয়সের তরুনরা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী এসব তরুণরা ক্রমেই ঝুকে পড়ছে মাদকের দিকে। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি চিরন্তণ আগ্রহ থেকেই অনেকে ঝুকে পড়ছে নেশার জগতে।

প্রথমে নিছক আগ্রহ থেকেই একটি আধটু নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ, অত:পর স্থায়ী মাদকসেবী। কারণ, আগ্রহের বশে মাদক গ্রহণ করলেও বেশির ভাগই অন্ধকার জগত থেকে আর ফিরে আসতে পারে না।

বর্তমানে যে নেশাজাতীয় দ্রব্যটি সবচেয়ে আলোচিত তা হচ্ছে ইয়াবা। এছাড়া ফেনসিডিল, প্যাথিডিন, হেরোইন, ক্যানাবিস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। উচ্চমাত্রায় এলকোহোলের জন্য ভায়াগ্রা একটি জনপ্রিয় মাদকদ্রব্য। তরুণ প্রজন্মের কাছে ইয়াবা এখন একটি জনপ্রিয় নাম, প্রতিদিনের সঙ্গী। গণমাধ্যমে নজর রাখলেই দেখা যায় এর ভয়াবহ পরিণতি। প্রতিদিনই থাকছে ইয়াবা উদ্ধার অথবা ইয়াবাসহ যুবক আটক ইত্যাদি সংবাদ।

শুধু আইন করে নেশা থেকে কাউকে ফেরানো যায় না।

বাংলাদেশে নেশা বিরোধি যে সব আইন আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো-১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯৯ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০১ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড বিধিমালা, ২০০২ সালের এলকোহোল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ও ২০০৫ সালের বেসরকারি পর্যায়ে মাদকাশক্তি পরামর্শকেন্দ্র, মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্র ও মাদকাসক্ত পুর্নবাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা বিধিমালা ইত্যাদি।

এতো আইন থাকার পরও কমছেনা মাদকদ্রব্যের ব্যবহার, কমছেনা পাচার ও এর সাথে জড়িত অন্যান্য অপরাধ কর্মকাণ্ড।

মাদকদ্র্রব্যের খুচড়া বিক্রির সাথে জড়িত আছে একটি চক্র। তারা সমাজের সাথে মিশে আছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী তরুণ তরুণীরা সহজেই তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে এসব নেশাজাতীয় দ্রব্য। যথেষ্ট কম মূল্যেই পাওয়া যায় এসব সামগ্রি।

আগেই বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্যর এ পাচার ও ব্যবসার সাথে জড়িত আছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। তারা জাল বিস্তার করে আছে দেশের সীমা ছাড়িয়ে আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলে।

আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে নিয়ে আসা এ পণ্য তুলে দেয়া হয় তরুণদের হাতে। দেশে বিভিন্ন সীমান্তের দুর্গম  অঞ্চল বা এলাকা এসব পণ্য পরিবহণ ও পাচারের একেকটি অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্তের কিছু কিছু পয়েন্ট মাদক পাচারের আখড়া।  

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৯ ধারার বাস্তবায়ন না হওয়াতে ক্রমই বেড়ে চলছে এর ব্যবহার, বাণিজ্য ও পাচারসহ সংশ্লিষ্ট আরো নানাবিধ কর্মকাণ্ড।

আইনে বলা আছে, এ্যালকোহল ছাড়া অন্য কোনো মাদকদ্রব্যের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন, আমদানী, রপ্তানী, সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয়, ধারণ, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ, প্রদর্শন, প্রয়োগ ও ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু কেউ কি মানছে এসব আইন? সবার সামেনই চলছে এর আমদানী, রপ্তানী,সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রয়সহ সব কর্মকাণ্ডই।

এছাড়া আইনে আরো বলা আছে, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন, আমদানী, রপ্তানী, সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয় বা এসব উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোনো প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ গ্রহণ, অর্থ বিনিয়োগ কিংবা কোনো  প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পরিচালনা বা এর  পৃষ্ঠপোষকতা করা যাবে না। কিন্তু কোনো প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা ছাড়া কীভাবে মাদক আসে ও তা পৌছে যায় তৃণমূল পর্যায়ে তরুণ তরুণীর কাছে? যুব সমাজের কাছে?

এই ধারাটির যদি পুরোপুরি প্রয়োগ হতো তবে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার অনেকাংশই রোধ করা যেতো আমাদের দেশে।   শুধু তাই নয়, আইনে আরো আছে, কোনো মাদকদ্রব্যের উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এমন ধরনের কোনো  দ্রব্য বা উদ্ভিদের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন, আমদানী, রপ্তানী, সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয়, ধারণ, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ, প্রদর্শন, প্রয়োগ ও ব্যবহার করা যাবে না৷

এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া এগুলো বিক্রিও করা যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ যায়গাতেই এসব মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সরবরাহ করা হয় কোনো রকম লাইসেন্স ছাড়াই।

তাই মাদকের অপব্যবহার ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব রকম অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও জনসচেতনতা জরুরি।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।