ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

জনগণের ক্ষমতা ও সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৪
জনগণের ক্ষমতা ও সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব

বাংলাদেশ একটি সাংবিধানিক সার্বভৌম রাষ্ট্র। সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বের বিষয়টি সংবিধানের মাধ্যমেই সীকৃত হয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল আইন এমনকি সংসদও সংবিধানের অধীন।

সংসদ তার সব ক্ষমতা ও কাজ পরিচালনা করে সংবিধানের অধিনেই। সংবিধান অনুযায়িই রাষ্ট্র, সংসদ পরিচালিত হয় ও রাষ্ট্রের সব আইন প্রণয়ন করা হয়।

রাষ্ট্রের সব আইনী, শাসনতান্ত্রিক ও বিচারিক কার্যক্রম সংবিধানের আলোকেই পরিচালিত হয়।

যেসব দেশের সংবিধান সাধারণত লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় হয়, সেসব দেশেই সাধারণত সাংবিধানিক প্রাধান্য বা সার্বভৌমত্ব বিস্তার করে।

সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব বলতে বুঝি এমন একটি অবস্থা যেখানে রাষ্ট্রের কোনো আইন বা শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা সাংবিধানিক ম্যান্ডেট না থাকলে কার্যকর হতে পারে না। সাংবিধানিক ম্যান্ডেট বলতে কেবল সাংবিধানিক বিধানের কথাগুলোই বোঝায় না, সেই সাথে সংবিধানের একেকটি বিধানের অর্ন্তনিহিত তাৎপর্যকেই ইঙ্গিত করে। সংবিধানের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থ অনুধাবন জরুরি নয়, জরুরি হলো অর্ন্তনিহিত তাৎপর্য। সেই সাথে দেশের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস ও সংস্কৃতিও বিবেচ্য।

সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বের অন্যতম উদাহরণ হলো যুক্তরাষ্ট্র। অনুচ্ছেদ (৪)এর মাধ্যমে সেখানে সাংবিধানিক প্রাধান্য সীকৃত। কিন্তু তারপরও যুক্তরাষ্ট্র তার রাজনৈতিক ইতিহাসে কয়েকবার সাংবিধানিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিনিধিত্বশীল সরকার যে গণতান্ত্রিক সরকার নাও হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র তা অনুধাবন করেছ্ তাই তারা সংবিধানের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে উদার গণতান্ত্রিক ধারণাকে প্রাধান্য দেয়।

সাংবিধানিক সার্বভৌম রাষ্ট্র তার সংবিধান ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করে। কারণ, তারা বিচার বিভাগকে সংবিধানের অভিভাবক মনে করে। এই ধারনার আলোকেই তারা বিচার বিভাগের ব্যাখ্যাকে চুরান্ত হিসেবে বিবেচনা করে।

আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও স্বয়ং বিচার বিভাগ সংবিধান অনুযায়ী চলছে কিনা তার চুরান্ত সিদ্ধান্তদাতা বিচার বিভাগ। একটি আইন কতটুকু সংবিধান সম্মত বা কতটা নয়, তা নিরুপন করা বিচার বিভাগেরই কাজ। আইন বিভাগের কাজ সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করা। সংবিধানে বাইরে বা তার বিরোধী কোনো আইন যদি প্রণয়ন করা হয় তা অবৈধ ও বাতিল।

এ বিষয়ে সবচেয়ে আলোচিত মামলা Marbury v Madison। এ মামলার রায়ে বলা হয়, …the particular phraseology of the constitution of the United States confirms and strengthens the principle, supposed to be essential to all written constitution, that a law repugnant to the constitution is void; and that courts, as well as other departments, are bound by that instruments.”

এভাবে সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বের ওপর অনেক মামলা আছে যেখানে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

আমরা আমাদের সংবিধানে ৭ অনুচ্ছেদে এ বিষয়টি পাই যেখানে বলা হয়েছে, “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে৷ জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে৷”

এ অনুচ্ছেদটি আমাদের সংবিধানে মূল চেতনা। কারণ, এ অনুচ্ছেদটি একই সাথে জনগণকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মালিক হিসেবে সীকৃতি দিয়েছে ও সেই সাথে সংবিধানকে অন্যান্য আইনের ওপর প্রাধান্য দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।