ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

নারী শ্রমিকের অধিকার ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৪
নারী শ্রমিকের অধিকার ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ছবি: ফাইল ফটো

রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় এখনো চার্জশিট দাখিল হয়নি। তাই বিচারের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।

তবে তারপরও আমরা আশাবাদী যে বিচার একদিন হবেই। কারণ, বিষয়টি জাতীয় স্বার্থ ও শ্রমিক অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট। গুরুত্বপূর্ণ পোশাক খাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য।

শুধু রানা প্লাজা নয়, তাজরিনসহ পোশাক কারখানায় এমন আরো অনেক দূর্ঘটনার কথা বলা যাবে যার বিচার এখনো হয়নি। তবে, বিচারের পাশাপাশি আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে তাহলো পোশাক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষা ও শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা।

পোশাক কারখানায় বিশৃঙ্খলা এখনো প্রতিদিনের ঘটনা। আজ এ কারখানায় তো কাল ও কারখানায় হট্রগোল-মারামারি লেগেই আছে। আজ এক ইস্যু তো কাল আরেক ইস্যু। এভাবেই চলছে আমাদের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এ খাতটি। প্রতিষ্ঠিত হয়নি শৃঙ্খলা ও আর্ন্তজাতিক মান। প্রতি বছর ঈদ-কোরবানি এলে আগাম বিশৃঙ্খলার আভাস পাওয়া যায়। বেতন বোনাস নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ম্লান করে দেয় শ্রমিকদের ঈদের আনন্দ। কিন্তু তারপরও বেঁচে থাকা। এর নামই শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রম অধিকার।

তবে পোশাক কারখানায় এধরনের দূর্ঘটনার পরও গত বুধবারের একটি সংবাদ আমাদের আশার সঞ্চার করেছে। পোশাক ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্সের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশের  ৫৮৭টি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে তারা বড় ধরনের কোনো ত্রুটি পাননি। আশা করি, এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পোশাক খাত নিয়ে যে নেতিবাচক মনোভাব ছিল তা কিছুটা হলেও দূর হবে।

পোশাক কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকদের একটি বড় অংশ নারী শ্রমিক। মূলত: নারী শ্রমিকরাই পোশাক কারখানায় মূল শ্রমশক্তি।

আইনে শ্রমিকদের যে অধিকারগুলো দেয়া আছে তার অনেকগুলোই বর্তমানে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে, এর পুরোপুরি বাস্তবায়ন এখনো সুদূর পরাহত। এক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের অবস্থা আরো শোচনীয়।

একজন সাধারণ শ্রমিকের যে অধিকার আছে, নারী শ্রমিকের সে অধিকারগুলোর পাশাপাশি আরো কিছু বিশেষ অধিকার আছে। অধিকারগুলো একজন নারী শ্রমিককে কারখানায় বা কর্মস্থলে কাজ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু অনেক নারীই তাদের শ্রমিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। একজন নারী শ্রমিক গর্ভাবস্থায় তার প্রাপ্য ছুটি থেকে বঞ্চিত হন-এমন প্রতিবেদন আমরা মাঝেমধ্যেই দেখি। বেতনসহ ছুটি পান না অনেক নারী শ্রমিক। শুধু তাই নয়, গর্ভাবস্থায় তারা চাকরি হারানো ঝুকিতেও থাকেন। কিন্তু তারপরও এর কোনো প্রতিকার নেই।

নারী এখন রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে গাড়িচালনা সবক্ষেত্রেই  সমান পারদর্শি। শ্রমের সবকটি বিভাগেই রয়েছে তার সমান পদচারণা। কিন্তু তারপরও বিরাজ করছে তার অধিকার বঞ্চনা। শুধু কর্মস্থলেই নয়, নিজ ঘরেই পরবাসি এদেশের অধিকাংশ নারী। তৃণমূলের চিত্র আরো ভয়াবহ।

নারীর অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাই এর মূল কারণ। এ সক্ষমতা অর্জনের জন্যই প্রয়োজন নারীর কর্মের অধিকার তথা শ্রম অধিকার। যতো বেশি সংখ্যক নারী কর্মজগতে প্রবেশ করবে ততোই নারী তথা রাষ্ট্রের কল্যাণ। অর্ধেক জনগোষ্ঠিকে বাদ দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব না।  

বৈষম্যমুক্ত কর্ম পরিবেশ নারীকে এগিয়ে নেবে উন্নয়নের দিকে।

কিন্তু বাস্তবে আমরা এমন একটি বৈষম্যমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারিনি। বৈষম্য রয়েছে বেতন ও মজুরির ক্ষেত্রেও। নারীরা একজন পুরষ কর্মীর চেয়ে প্রায় ২০-২৫% শতাংশ কম মজুরি পেয়ে থাকে, কিন্তু তারা একই পরিমান শ্রম দিয়ে থাকে। এটি নারী শ্রমিক ও নারী অধিকারের পরিপন্থি।

আইন এমনকি আমাদের সংবিধানও নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে। এ অধিকারগুলোর নারী শ্রমিকদের বেলায়ও প্রযোজ্য।

আমাদরেদর সংবিধানেও নারী তথা সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশকে এগিয়ে নিতে বিশেষ অধিকার দেয়ার কথা বলা আছে। রাষ্ট্র তাদের কল্যাণের জন্য ইতবাচক পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এতো ইতিবাচক আইন থাকার পরও কর্মস্থলে নারীর অধিকার আজো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
এমনকি নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরাও তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেও তারা পুরুষ সহকর্মীদের সমান মজুরি পায় না। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া এর আর কোনো কারণ নেই। কারণ, একই পরিশ্রম করে তারা পুরুষের চেয়ে কম মজুরি পায়। কিন্তু তারপরও তারা মুখ বুজে কাজ করে যায় দিনের পর দিন। নারীর শ্রমকে ছোট করে দেখার এ সামাজিক ব্যাধি থেকে সমাজ কে রক্ষা করতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।