ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব

অভিযোজনেই রক্ষা

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৪
অভিযোজনেই রক্ষা

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে অভিযোজনের কোনো বিকল্প নেই। জলবায়ূ পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা।

প্র্রকৃতি তার আপন নিয়মেই প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খেয়ে বেঁচে থাকাই অভিযোজন।   

জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজনের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। জলবায়ু পরিবর্তন যেহেতু রোধ করা যাবেনা তাই এর সাথে অভিযোজিতক হয়ে বেঁচে থাকাই একমাত্র উপায়।

একটি কার্যকর অভিযোজন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নানা ধরনের সক্ষমতার প্রয়োজন হয়। এ সক্ষমতা কেবল অর্থনৈতিক সক্ষমতা নয়। এর সাথে সম্পৃক্ত আছে প্রযুক্তিগত, সামাজিক ও জ্ঞান বা অভিজ্ঞতাজাত দক্ষতাও।

সন্দেহ নেই, একটি টেকসই অভিযোজন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি। প্রযুক্তিতো লাগবেই। তবে, তার চেয়েও বেশি প্রয়াজন অভিযোজনের প্রেক্ষাপট বা ধরন বিবেচনা করে তার সাথে লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার।

এ প্রযুক্তিভিত্তিক অভিযোজনের জন্য অর্থনৈতিক বিনিয়োগ প্রধান নিয়ামক।

বাংলাদেশ সর্বাধিক জলবায়ূ ঝুকিপূর্ণ দেশ। জলবায়ূ পরিবর্তনের জন্য আগামীতে যে কয়েকটি দেশকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে প্রথমসারির।

এমনিতেই বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ দেশ। প্রতি বছরই এখানে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও নদী ভাঙনের মতো বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় হানা দেয়। এসব নিয়মিত দুর্যোগের প্রাকৃতিক ও আর্থ-সামাজিক ক্ষতি ব্যাপক। যা একই সাথে পরিবেশের ওপর আরো নতুন হুমকি সৃষ্টি করছে।  

আর্ন্তজাতিক পরিবেশ আইনে অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আন্ত:রাষ্ট্র সাহায্যের কথা বলা আছে। রাষ্ট্রসমূহও নিজ নিজ পরিমন্ডলে আইন প্রণয়ন করে অভিযোজনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।

আমাদের দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সরকার গত সাড়ে ৫ বছরে ২৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছ।

এই যে জলবায়ূ অভিযোজন তারও কয়েকটি ধাপ আছে। একটি হলো পরিবেশ দূষণকারী উপাদানগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা। যাকে বলা হয়  প্রশমন বা-Mitigation- এ প্রক্রিয়ায় পরিবেশ দূষণকারী উপাদানগুলোকে হ্রাস করার কথা বলা হয়। নতুন প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে আরো কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করাই এর মূল কথা। সাথে ব্যবহারকারীর আচরণগত পরিবর্তন করে একই ফলপ্রুসূ প্রযুক্তির ব্যবহার করে পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রাখা যায় এ অভিযোজ প্রক্রিয়ায়।

এছাড়া অন্যান্য পরিবেশ দূষণকারী গ্যাসের নির্গমন হ্রাস করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও সবুজ অর্থনীতি বা উন্নয়নের জন্য অর্থায়নও এর  আন্তর্জাতিক আইনের আওতাভূক্ত।

অভিযোজন প্রক্রিয়া গ্রহণের আগে যথাযথ কৌশল গ্রহণ আবশ্যক। অভিযোজনকে জাতীয় বাজেট ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অংশ  হতে হবে। সরকার তার জলবায়ূ মোকাবেলার কৌশনের মধ্যে অভিযোজনকে অন্তর্ভূক্ত করবে। কৌশল ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সাথে সমন্বয় না থাকলে তা সফল হবে না।

পরিবেশ দূষণ মোকাবেলা কখনো একক প্রচেষ্টায় সফল হতে পারে না। কারণ, পরিবেশ বিষয়টি আন্তর্জাতিক। তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমন্বয় থাকার প্রয়োজন আছে। আবার রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলেও সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনার মধ্যেও এর প্রতিফলন থাকতে হয়। আমাদের দেশের অনেক মন্ত্রণালয়েরই জলাবায়ূ বিষয়ক কোনো কর্মসূচী নেই। ফলে এক্ষেত্রে এক ধরনের সমন্নয়হীনতা লক্ষ্য করা যায়।

জলবায়ূ ট্রাস্ট আইন নামে আমাদের একটি আইন আছে। এ আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী একটি ট্রাস্ট গঠন করার কথা বলা আছে যার লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের জনসাধারণের বা জনগোষ্ঠীর খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, জীবন-জীবিকার মানোন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা। এ ধারার মূল কথাটিই হলো মানুষের জলবায়ূ অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

আবার একই ধারার উপধারা (খ)তে বলা হয়েছে এ ট্রাস্ট গঠনের লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মানুষ, জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির উপর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিযোজন, প্রশমন, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও হস্তান্তর, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অর্থের ব্যবস্থা গ্রহণ করা বা করার পক্ষে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা।

কিন্তু আমাদের দেশে এ আইনের কার্যকর প্রয়োগ দৃষ্টিগোচর হয় না। একেবারে যে কাজ হচ্ছে না তাও নয়। তবে, সর্বাধিক জলবায়ূ ঝুকিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের যে কার্যক্রম থাকার কথা তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

একই আইনের ৭ (ঘ)ধারায় আছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য অভিযোজন, প্রশমন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং অর্থ ও বিনিয়োগ এর জন্য ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা অনুসারে গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডে অর্থ বরাদ্দ করা হবে..ইত্যাদি।

কিন্তু আমাদের এখানে এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কার্যকর কোনো গবেষণা নাই। যা আছ তাও ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা হয়। গবেষণার ওপর ভিত্তি করে অভিযোজন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয় না। জলবায়ূর অপরাপর বিষয়গুলোতো পরের কথা।

তবে, অভিযোজন জলবায়ূ ঝুকি মোকাবেলার একমাত্র পথ নয়। পরিবেশ দূষণ হ্রাস করা বা গ্রীন হাউস গ্রাস নির্গমন হ্রাস করাই সবেচয়ে বড় কথা। একাজে উন্নত বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, তারাই প্রধান উদগীরণকারী দেশ।  

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশ্বের সব দেশ সমানভাবে দায়ী নয়। উন্নত দেশগুলোর দায় বেশি। যেসব উন্নত দেশ অধিক গ্যাস উদগীরণ করে জলবায়ু পরিবর্তন উপশমে বা অভিযোজন প্রক্রিয়ায় তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে-সহায়তার হাত বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।