ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়াই শ্রেয়’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৮ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়াই শ্রেয়’

ঢাকা: ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়াই শ্রেয়’ বলে মতামত দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠতম আইনজীবী টিএইচ খান।    

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মতামত দিতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ৭ম দিনের মতো এ আপিল শুনানি চলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে।

আগামী রোববার (২৮ মে) বেলা সাড়ে এগারটা পর্যন্ত আপিল শুনানি মুলতবি করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

টিএইচ খানের লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন তার ছেলে আইনজীবী আফজাল এইচ খান। এ সময় আদালতে তিনি উপস্থিত ছিলেন। ৯৬ বছর অতিক্রম করা সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বয়সে আদালতে এসে সহায়তা করায় প্রধান বিচারপতি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনের পরে আফজাল এইচ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (টিএইচ খান) হাইকোর্টের যে রায়, সেটি বহাল রাখার জন্য সাবমিশন দিয়েছেন। ১৬তম সংশোধনী বাতিল করে ওই রায়ে বলা হয়েছে, এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ওইটার সমর্থনে হাইলি কিছু বিশ্লেষণ করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এবং যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছি যে, ষোড়শ সংশোধনী যেটিকে বলা হচ্ছে, এটা পাস করেছে যে সংসদ সেই সংসদ যেভাবে নির্বাচিত হয়েছে, সে নির্বাচনটিই বৈধ নয়’।

‘উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাইলে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে এখানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে আরও শক্তিশালী করে সেখানে একটি নমিনাল বডি না করে ফাংশনাল বডি করে আরও ক্ষমতা বাড়িয়ে করা উচিৎ’।

‘৯৬ অনুচ্ছেদ, যেটি নিয়ে এতো বিতর্ক সেখানে বলা হচ্ছে, ইন ক্যাপাসিটি অথবা গ্রস মিসকন্ডাক্ট, এ দু’টি বিষয় বলা আছে সংবিধানে। আমাদের কথা হলো, এর বাইরেও অনেক বিচারপতিরা শত শত মামলার রায় না লিখে অবসরে চলে যান। এছাড়া আদালতে বসে অনেক ধরনের কটূক্তি করেন বা এমন এমন বক্তব্য রাখেন, যেগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের ব্যক্তিগত আচার-আচরণ সম্পর্কেও খরবরদারি করা উচিৎ’।

আফজাল এইচ খান আরও বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়কে সমর্থন করে ষোড়শ সংশোধনী বিষয়ে আমরা বলেছি, এটিকে বাতিল করে দেওয়াই শ্রেয়। এটি যেভাবে হয়েছে, সে দিকগুলোও আমরা তুলে ধরেছি। এর অন্তর্নিহিত কিছু বিষয় আছে তার পরিণিতি কি হতে পারে, ভবিষ্যতে কি হতে পারে, বর্তমানে কি হতে পারে তার একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছি’।

‘আর বলেছি, ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিষয়টি সেটেলড না করে ষোড়শ সংশোধনীর আলোচনা ঠিক না। এটাকে প্রাসঙ্গিকভাবে দেখতে হবে’।

টিএইচ খান ছাড়াও বৃহস্পতিবার অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে রোকনউদ্দিন মাহমুদও মতামত উপস্থাপন শেষ করেছেন।

বুধবার (২৪ মে) শুরু করা ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন অসমাপ্ত রয়েছে।

গত ০৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পাওয়া ১২ জন অ্যামিকাস কিউরির অন্য ৯ জন হলেন- জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, এম আই ফারুকী, এ এফ হাসান আরিফ, আজমালুল হোসেন কিউসি, রফিক-উল হক, এ জে মোহাম্মদ আলী, ফিদা এম কামাল ও শফিক আহমেদ। তাদের মধ্যে ড. কামাল হোসেন, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও এম আই ফারুকী আগেও লিখিত মতামত জমা দিয়েছেন।

গত ০৮ মে থেকে বুধবার পর্যন্ত আপিল শুনানির ৬ কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করেন আপিল আবেদনের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা এবং রিট আবেদনের পক্ষে মনজিল মোরসেদ। শুরুতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় পড়ে শোনান মুরাদ রেজা।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়।

সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ০৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ০৯ নভেম্বর এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

এ রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ০৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।

এর মধ্যে গত বছরের ২৫ এপ্রিল অসদাচারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

গত ০৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে।

মার্শাল প্রক্লামেশনে করা পঞ্চম সংশোধনীতে এক্ষেত্রে ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ষোড়শ সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সংসদকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭,
ইএস/এএসআর

**
‘জুডিশিয়ারিদেরটা পার্লামেন্টে কেন?’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।