বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ স্থগিতাদেশ দেন।
একইসঙ্গে ২৯ জুলাইয়ের সিনেট বৈঠক নিয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন আদালত।
এছাড়াও এ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিলো অাগামী ২৪ আগস্ট।
আদালতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন আবদুল মতিন খসরু, এ এফ এম মেজবাহ উদ্দিন। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ।
গত ১৬ জুলাই ঢাবির রেজিস্ট্রার একটি চিঠি দেন সিনেট সভার জন্য। যাতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ আর ২১ (২) ধারার অর্পিত ক্ষমতাবলে উপাচার্য, ২৯ জুলাই বিকেল চারটায় সিনেটের বিশেষ সভা আহ্বান করেছেন। বিশেষ সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩, ১১(১) ধারা অনুযায়ী চ্যান্সেলরের মাধ্যমে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের জন্য তিনজনের একটি প্যানেল মনোনয়ন করা হবে। ভাইস চ্যান্সেলরের প্যানেলে যাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য প্রস্তাব করা হবে, নাম প্রস্তাবের সময় তাদের লিখিত সম্মতি সিনেট চেয়ারম্যানের কাছে পেশ করতে হবে। সভায় উপস্থিত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হয়।
রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটের অনেক প্রতিনিধির পদ খালি। সিনেটের প্রতিনিধি হিসেবে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটদের পদ পূরণ না করে সিনেট সভা ডেকে উপাচার্য প্যানেল মনোনয়ন করা ঠিক নয়। এমন যুক্তিতে ১৬ জুলাইয়ের এ চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৫ জন হাইকোর্টে রিট করেন।
২৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ১৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটদের করা ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ সিনেট সভার ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ ১৯৭৩ সালের ২০ (১) ধারা অনুযায়ী সিনেট গঠনে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম।
রুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ ১৯৭৩ সালের ২০ (১) ধারা অনুযায়ী সিনেট গঠন না করে ২৯ জুলাই ডাকা সভা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
রিটের বিবাদীরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আবু আহসান মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন, প্রো-ভিসি (একাডেমিক), প্রো-ভিসি (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও বাংলাদেশের পক্ষে শিক্ষা সচিব।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপিলে আবেদনের পর ২৬ জুলাই হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ ৩০ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এ স্থগিতাদেশের কারণে আইনি বাধা ছাড়াই ছাত্র-শিক্ষকদের বাধা বিপত্তিরমুখে ২৯ জুলাই বিশেষ সিনেট সভা অনুষ্ঠিত হয়।
যে সভায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবায়েতুল ইসলাম তিন সদস্যের ভিসি প্যানেলটির নাম প্রস্তাব করেন। তা সমর্থন করেন আইন অনুষদের ডিন মো. রহমত উল্লাহ।
তিন সদস্য হলেন- বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও নীল দলের আহ্বায়ক আবদুল আজিজ। এ প্যানেল পাস হয়ে যাওয়ায় আর ভোটাভুটির প্রয়োজন হয়নি।
সিনেটে মনোনীত এ তিনজনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ একজনকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেবেন।
এর মধ্যে ৩০ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য উঠে। ওই দিন রিট আবেদনকারী পক্ষ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় নেন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার আবেদনটি ফের শুনানিতে ওঠে।
আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন- বরিশালের আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ, অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অধ্যাপক ড. এ কেএম গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক ড. হারুনুর রশিদ খান, অধ্যাপক ড. সিতেশ চন্দ্র বাচার, অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার, অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুর রহিম, অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী, অধ্যাপক ড. কেএম সাইফুল আলম খান, ঢাকার একেএম আতিকুর রহমান, ফরিদপুরের ড. আব্দুল জব্বার মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. হুমায়ন কবির।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৭/আপডেট: ১১০৪ ঘণ্টা
ইএস/জেডএস