বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ডেসটিনির যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করে তার হিসাব বিবরণী দাখিল করার পর এ নিয়ে শুনানি হয়।
ডেসটিনির আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ শুনানিতে বলেন, ‘যারা টাকা দিয়েছেন, তারাতো আর মামলা করেননি। দুদক মামলা করেছে’।
জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যারা টাকা দিয়েছেন, তাদের এ পর্যন্ত আসার ক্ষমতা থাকতে হবে তো। আপনার মতো আইনজীবী রাখার সামর্থ্য তাদের নেই’।
রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, তারা কারাগার থেকে মুক্তি না পেলে সম্পদ বিক্রি করতে পারবেন না, টাকাও দিতে পারবেন না’।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ভারতের দিকে তাকান, সাহারা গ্রুপের সুব্রত সাহাকে কারাগারে থেকেই টাকা দিতে হয়েছে। তিনি পারলে তারা পারবেন না কেন?’
জবাবে রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে তুলনা দেওয়া ঠিক হবে না। টাকা-পয়সার দিক থেকে আমরা তাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছি’।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটি বলবেন না। ভারতের চেয়ে অনেক দিক থেকে আমরা এগিয়ে আছি। স্যানিটেশনের দিকে তাকান, মা ও শিশু মৃত্যুর হারের দিকে তাকান। আমরা তাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে’।
এরপর রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আপনাদের কথামতো টাকা দিলাম। এ টাকা কে, কিভাবে, কাকে দেবেন?’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সেটি আমরা বলে দেবো’।
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘একবার জামিনে গেলে আর তাদের ধরা যাবে না’।
রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা আগে যে শর্ত দিয়েছেন তা বিবেচনা করুন’।
এরপর তার আবেদনে শুনানি ৮ সপ্তাহ মূলতবি করা হয়।
গত ৩০ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে ডেসটিনির জব্দকৃত স্থাবর-অস্থাবর ৭৮৬ কোটি ২৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৮৭ দশমিক ৯৩ টাকা সম্পত্তির হিসাব আদালতে দাখিল করা হয়। যার মধ্যে নগদ অর্থ হচ্ছে ১৫৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫৯২ দশমিক ৯৩ টাকা। এছাড়াও রয়েছে ১১২টি গাড়ি ।
গত ১৬ জুলাই ডেসটিনির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জব্দকৃত অর্থের পরিমাণ জানতে চেয়েছিলেন আপিল বিভাগ। দুর্নীতি দমন কমিশনকে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে এ হিসাব দাখিল করতে বলা হয়। সে অনুসারে হিসাব জমা দেয় দুদক।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই রফিকুল আমিন ও মোহাম্মদ হোসেনসহ ডেসটিনি গ্রুপের ২২ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কলাবাগান থানায় দু’টি মামলা করে দুদক। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেশন (এমএলএম) ও ট্রি-প্ল্যানটেশন প্রকল্পের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থের মধ্যে ৩ হাজার ২৮৫ কোটি ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫২৪ টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দু’টি করা হয়।
বর্তমানে এ মামলায় দু’জনই কারাগারে রয়েছেন।
গত বছরের ২০ জুলাই শর্তসাপেক্ষে রফিকুল আমিন ও মোহাম্মদ হোসাইনকে জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে দুদকের আবেদনে তা স্থগিত করে দেন আপিল বিভাগ। এ আবেদনের শুনানির এক পর্যায়ে আত্মসাৎ করা টাকা জমা দেওয়ার কথা বলেন সর্বোচ্চ আদালত।
সে অনুসারে গত বছরের ১৩ নভেম্বর ডেসনিটির পক্ষ থেকে গাছ বিক্রি করে টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। ওইদিন হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানানো হয় যে, তাদের কাছে ৩৫ লাখ গাছ আছে। প্রতিটি গাছ আট হাজার টাকায় বিক্রি করে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দিতে পারবেন তারা।
এর প্রেক্ষিতে জামিনের শর্ত পূরণে আপিল বিভাগ দুই আসামি যে কারাগারে আছেন, সেখানে তাদের সঙ্গে গাছ বিক্রির সকল কাগজপত্রে স্বাক্ষর ও আলোচনার সুযোগ দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ডেসটিনি ট্রি-প্ল্যান্টেশনের সিইও ড. শামসুল হক ভূঁইয়া এমপির তত্ত্বাবধানে সব কাজ সম্পন্ন হবে। যদি গাছ বিক্রি করে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দিতে না পারেন, তাহলে নগদ ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দেবেন তারা। এর অনুলিপি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকে পাঠাতে হবে। এরপর যারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, যাচাই করে তাদের কাছে টাকা হস্তান্তরের পর জামিনে মুক্তি পাবেন দুই কর্মকর্তা।
কিন্তু কয়েকমাস পরে তারা এ আদেশের সংশোধন চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে কারাগারে থাকায় এ শর্ত পূরণ সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করেন তারা। এ আবেদনেরই শুনানিতেই আদালত ডেসটিনির জব্দকৃত অর্থের পরিমাণ তলব করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৭
ইএস/এএসআর