ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সুবহানের আপিল কার্যতালিকায়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
সুবহানের আপিল কার্যতালিকায়

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এসেছে।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চে আপিলটি আদেশের জন্য রাখা হয়েছে। আগামী বুধবারের (১৬ আগস্ট) কার্যতালিকায় এটি ৩ নম্বরে রয়েছে।

২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাবনা জেলায় যুদ্ধাপরাধের হোতা সুবহানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ওই বছরের ১৮ মার্চ এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সুবহানের আইনজীবীরা।
 
৮৯ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ১১৮২ পৃষ্ঠার আপিল আবেদনে ৯২টি যুক্তি দেখিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করে সুবহানের খালাসের আরজি জানানো হয়েছে।    

আপিলের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হয়েছেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন তুহিন। আপিল শুনানিতে নেতৃত্ব দেবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

পাবনা জেলা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির ও কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শান্তি কমিটির সম্পাদক ও পরবর্তীতে ভাইস চেয়ারম্যান, রাজাকার-আলবদর-আলশামস-মুজাহিদ বাহিনীর নেতা সুবহানের বিরুদ্ধে ৯টি মানবতাবিরোধী অভিযোগ মধ্যে আনা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ৩(২)(এ), ৩(২)(সি), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৩(২)(আই),  ৪(১), ৪(২)  এবং ২০ (২) ধারায় আনা এসব অভিযোগের মধ্যে পাবনায় যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, শান্তি কমিটি, রাজাকার-আলবদর বাহিনীর নেতৃত্ব দানকারী হিসেবে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতেও (উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়)। তার হাতে নির্যাতিত-ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও দাবি করেছিলেন প্রসিকিউশন।
 
অভিযোগগুলোর মধ্যে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ষড়যন্ত্রের ৬টিই প্রমাণিত হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। এর মধ্যে ৩টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ, ২টি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং একটি অভিযোগে আরও ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে সুবহানকে। অন্যদিকে ৩টি অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি বলে উল্লেখ করে এসব অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে বের করে ১৯ জনকে হত্যা-গণহত্যা(১ নম্বর অভিযোগ), সাহাপুর গ্রামে হত্যা-গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ) এবং সুজানগর থানার কয়েকটি গ্রামে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও গণহত্যা চালানোর (৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে সুবহানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।

হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের আরও দুই অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন সুবহান। ঈশ্বরদী থানার পাকশী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে (২ নম্বর অভিযোগ) এবং সদর থানার ভাড়ারা গ্রামে (৭ নম্বর অভিযোগ) এসব মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ঈশ্বরদী থানার অরণখোলা গ্রামের বেশ কয়েকজনকে অপহরণ, অবৈধ আটক ও নির্যাতন এবং তাদের বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের দায়ে (৩ নম্বর অভিযোগ) সুবহানকে দেওয়া হয়েছে আরও ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ।

বাকি তিনটি কুলনিয়া ও দোগাছি গ্রামের বেশ কয়েকজনকে হত্যা, অনেক বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৫ নম্বর অভিযোগ), অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক কলিমউদ্দিন খাঁসহ অন্য একজনকে হত্যা(৮ নম্বর অভিযোগ) এবং বেতবাড়িয়া ও রামনাথপুর গ্রামের চারজনকে হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, ১০/১২টি বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের (৯ নম্বর অভিযোগ) দায় থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।  

পাবনা শহরের পাথরতলা মহল্লার মৃত নঈমুদ্দিনের ছেলে আবুল বসর মোহাম্মদ আবদুস সুবহান মিয়া এলাকায় পরিচিত ‘মাওলানা সুবহান’ নামে। পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকহাটি ইউনিয়নের তৈলকুণ্ডি গ্রামে জন্ম নেওয়া সুবহান পাকিস্তান আমলে পাবনা জেলা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির এবং দলটির কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য ছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে পাবনা জেলায় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করেন আব্দুস সুবহান। পরে তিনি পাবনা জেলা শান্তি কমিটির সম্পাদক এবং পরবর্তীতে ভাইস চেয়ারম্যান হন।

তার নেতৃত্বে পাবনা জেলার বিভিন্ন শান্তি কমিটি, রাজাকার আলবদর, আলশামস ও মুজাহিদ বাহিনী গঠিত হয়।

রায়ে উল্লেখ রয়েছে, উর্দুতে কথা বলতে পারদর্শী হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই কুখ্যাত জামায়াত নেতা পরিণত হয়েছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যন্ত আস্থাভাজন এক সহযোগীতে। স্বাধীনতা যুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সুবহানের ভূমিকা ছিল নীতিনির্ধারকের।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাবনার বিভিন্ন থানায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের নামের তালিকা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে সরবরাহ করতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের নেতৃত্ব দিয়ে এবং সঙ্গে থেকে হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ, আটক নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে অংশ নিতেন নিজেও।

ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মিটিং করে স্বাধীনতাবিরোধী বক্তব্য দিতেন এবং পাকিস্তান সরকারের পক্ষে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে স্লোগানও দিতেন এই জামায়াত নেতা। পরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে একাত্তরের ৪ ডিসেম্বর ইয়াহিয়া সরকারের পতন দেখে গোলাম আযমের সঙ্গে তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে যান।
 
বাংলাদেশ সময়:  ১৯০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৫
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।