সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করে বিজিএমইএ।
তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম বলেন, ভবন থেকে সরতে আরও এক বছর সময় চেয়েছে বিজিএমইএ।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সকালে বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ভবন থেকে সব কিছু শিফট করতে তো অনেক সময়ের প্রয়োজন। সব কিছু এখন প্রক্রিয়াধীন। তাই সর্বোচ্চ আদালতে সময় চেয়েছি’।
সর্বশেষ বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে গত ১২ মার্চ ছয়মাসের সময় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বিজিএমইএ’র তিন বছরের সময়ের আবেদনের শুনানি নিয়ে ওইদিন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ সময় দেন।
ওইদিন আদালতে বিজিএমইএ’র পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম।
শুনানির শুরুতে তিনি তিন বছরের সময়ের আবেদনের ব্যাখ্যা দেন। এরপর আদালত দক্ষিণ কোরিয়ার ইলেক্ট্রনিক মার্কেট স্যামসাং ভবনের উদাহরণ দেন। হুন্দাই কোম্পানির মালিকের জেলে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে আদালত বলেন, ‘আপনারা শেরাটন কিংবা সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে ভাড়া নেন। ২০১১ সালে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন। এরপর গত বছরের ০২ জুন আপিল বিভাগ তা বহাল রেখেছেন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে সরানোর কোনো চেষ্টা করেননি’।
এরপর ছয়মাসের সময় দিয়ে আবেদনটির নিষ্পত্তি করে দেন আপিল বিভাগ।
১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ০৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে ভবনটি বিজিএমইএ’র প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ানবাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ০২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিনই প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনির উদ্দিন।
পরদিন ০৩ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তার কারণ জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ রুলের শুনানিতে আদালতকে আইনি সহায়তা দিতে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সাতজন আইনজীবীকে ‘আদালতের বন্ধু’ (আমিকাস কিউরি) নিয়োগ দেওয়া হয়।
ওই সাত আইনজীবী হলেন- বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আখতার ইমাম, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মনজিল মোরসেদ ও পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
২০১১ সালের ০৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ তার রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেন বিজিএমইএকে।
একই বছরের ০৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আবেদনে হাইকোর্টের রায় ছয়মাসের জন্য স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত।
এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলে ওই জমি জনকল্যাণে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, ‘হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প’।
আদালত বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে- তাদের টাকা দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ০২ জুন তা খারিজ হয়ে যায়।
গত বছরের ০৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হওয়ার পর রিভিউ আবেদন করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। গত ২৭
ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ০২ মার্চ এ মামলার শুনানির দিন ধার্য করেন। কিন্তু ০২ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ ‘নট টুডে’ (আজকে নয়) আদেশ দেন। ফলে ০৫ মার্চ বিষয়টি শুনানির জন্য আসে।
গত ০৫ মার্চ বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে কতো সময় লাগবে- তা ০৯ মার্চের মধ্যে আদালতে আবেদন করতে বলেছিলেন আপিল বিভাগ। ওইদিন প্রধান
বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় বহাল রাখেন।
গত ০৯ মার্চ তিন বছরের সময় চেয়ে করা আবেদন উপস্থাপন করেন বিজিএমইএ’র আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। পরে আদালত এ আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেন ১২ মার্চ।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১,২০১৭
ইএস/এএসআর