শুনানি শেষে সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আদেশের এ দিন ধার্য করেন বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টে রিটটি করেন বিসিবি’র সাবেক পরিচালক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।
গত ২৬ জুলাই বিসিবি’র গঠনতন্ত্র–সংক্রান্ত এক মামলায় আপিল বিভাগের দেওয়া রায় নিজেদের পক্ষে দাবি করে আগামী ০২ অক্টোবর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আহ্বান করেছে বোর্ডের বর্তমান পরিচালনা পরিষদ।
রিট আবেদনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক জানান, ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর বিসিবি’র বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়। এ পর্ষদকে কার্যক্রম পরিচালনা ও এজিএম-ইজিএম করা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়।
এছাড়া ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর গঠিত বিসিবি’র বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে কার্যক্রম চালানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়। এ রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ পর্ষদকে কার্যক্রম পরিচালনা ও এজিএম-ইজিএম করা থেকে বিরত রাখার নির্দেশ চেয়েও আবেদন করা হয়।
রিটে বিবাদী করা হয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব, এনএসসি ও বিসিবি’র সভাপতিসহ সাতজনকে।
এজিএম-ইজিএমসহ বোর্ডের সব কার্যক্রম বন্ধে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিসিবিকে আইনি নোটিশ পাঠান স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। কিন্তু আইনি নোটিশ অনুসারে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় রিট করেন তিনি।
২০১২ সালের নভেম্বরে বিসিবি’র গঠনতন্ত্রের সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সাবেক পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোবাশ্বের হোসেন এবং বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি ইউসুফ জামিল বাবু। এ রিটের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর আদালত রুল জারি করে সংশোধনীর ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট।
ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট।
রিটকারীদের দাবি ছিলো, ‘বিসিবি’র গঠনতন্ত্রে ২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, গঠনতন্ত্র সংশোধনে সাধারণ পরিষদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন নিতে হবে। বিসিবি ২০১২ সালের ০১ মার্চ বিশেষ সাধারণ সভার মাধ্যমে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে পাঠায়। কিন্তু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিসিবি’র সাধারণ পরিষদের সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে নিজেদের মনগড়া সংশোধনী আনে। যা গঠনতন্ত্রের স্পষ্ট লঙ্ঘন’।
‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যেভাবে অবৈধ উপায়ে গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছে তা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ১৯৭৪ এর ২০ এর (ক) ধারার পরিপন্থী। ক্রীড়া পরিষদ মডেল গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে পারে, কিন্তু বিসিবির এজিএমে অনুমোদিত গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষমতা রাখে না। ক্রীড়া পরিষদের সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুসারে বিসিবিতে কাউন্সিলর মনোনয়নসহ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা ছিল। এ থেকে বোঝা যায় ক্রীড়া পরিষদের অসৎ উদ্দেশ্য ছিল’।
পরে হাইকোর্টের এ রায় স্থগিত চেয়ে চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করে এনএসসি ও বিসিবি। এরপর চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে আপিল বিভাগের আবেদনটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। একইসঙ্গে লিভ টু আপিল করতে বলেন। ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই তাদেরকে আপিলের অনুমতি দেন সর্বোচ্চ আদালত।
গত ২৬ জুলাই বিসিবি’র গঠনতন্ত্রে ক্রীড়া পরিষদের আনা সংশোধনী অবৈধ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ।
ওইদিন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক বলেন, ‘আপিল নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ বলেছেন- গঠনতন্ত্র সংশোধনের যে ক্ষমতা সেটি বিসিবি’র হাতেই থাকবে। এনএসসি সে গঠনতন্ত্র তাদের (বিসিবি) জন্য সংশোধন করে দিতে পারবে না। সুতরাং, এই গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষমতা বিসিবি’র হাতে থাকবে। এতে বিসিবি আরওস্বায়ত্বশাসিত হবে, সংঘবদ্ধ হবে, শক্তিশালী হবে। ক্রিকেট ও ক্রিকেট বোর্ড দুটিই শক্তিশালী হবে। ভবিষ্যতে ক্রিকেটের উন্নতি হবে’।
তিনি বলেন, ‘আদালত আরও বলেছেন-আগামী পাঁচ বছরে ক্রিকেট বিশ্বক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। তার জন্য বিসিবি এবং বাংলাদেশকে এখনো প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন। এজন্য বিসিবিকে শক্তিশালী করতে হবে। গঠনতন্ত্রে সংশোধন বিয়োজন করবে কেবল বিসিবি। অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না’।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
ইএস/এএসআর